সোমব্রেরো ফল আউট
রিচার্ড ব্রটিগান
পানশালা
ছেলেটি দেওয়াল
ঘড়ির দিকে তাকায়। ১০-৩০ বাজে। সে মেয়েটিকে ফোন করতে পারেনি কেননা সে জানে মেয়েটি
আরেকজন পুরুষের সঙ্গে আছে, উপভোগ করছে ছেলেটির শরীর, ছেলেটির শরীরের নীচে আরামে
অস্ফুটে গোঙাচ্ছে... আর ভালোবাসছে সেই নতুন পুরুষটিকে।
একটা তীব্র
দীর্ঘশ্বাস প্রবল সামুদ্রিক ঝড়ের মতো তার শরীর কাঁপিয়ে দিলো আর তারপর সে ধপ করে
বসে পড়ল কোচে। সে চেষ্টা করল সবকিছুর হিসেবনিকেশ করতে। মেয়েটি ধৈর্য, বুদ্ধি,
জ্ঞান পরীক্ষা খেলার হাজার টুকরো যেন, যা তার মাথার ভেতর ডিগবাজি খাচ্ছে যেন তারা একটা
পাবলিক ওয়াশিং মেশিনের ড্রায়ারের ভেতর।
কয়েকটা মুহূর্তের
জন্য তার মাথাটা একই সাথে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতে ঘুরতে লাগল আর মেয়েটিকে নিয়ে
কোনো চিন্তাই আকার পাচ্ছিল না। তারপর তার শোকে মেয়েটির চুল আসতে আসতে একটা প্রধান
বিষয় হয়ে উঠল। মেয়েটির চুল সে চিরকাল ভালোবেসেছে। সেটা অনেকটা ঘোরের মতো ছিল তার
কাছে। কত
লম্বা আর কালো আর ঘন আর সন্মোহক ছিল তার চুল এ কথা ভাবতে ভাবতে ধাঁধার হাজার
টুকরোগুলো জুড়তে লাগল একে অপরের সাথে যতক্ষণ না তার মনে পড়ল তাদের প্রথম দেখা
হওয়ার সময়টা।
দু বছর আগে,
সেদিন বৃষ্টি পড়ছিল।
মেয়েটি খুব বেশি
পানশালায় যেত না।
সে রাতে কাজ শেষ
করার পর মেয়েটি খুব ক্লান্ত ছিল কিন্তু তার দু কলিগ তাকে টেনে নিয়ে গেল কাছের এক
পানশালায় যেখানে তরুণ প্রজন্ম ভিড় জমায়।
ছেলেটি সেখানে
ছিল বড় বিরক্ত হয়ে। মাঝেই মাঝেই সে বিরক্ত বোধ করত আর তা অন্যকে জানাবার আগে দু
বার ভাবত না। একটা মোলায়েম হাস্যরস হিসেবে চালিয়ে দিত।
পানশালার উঁচু
একটা টুলে বসে সে যখন ঘুরে তাকাল তখন সে পুরো মাতাল, যে অভিজ্ঞতা তার কাছে নতুন
কিছু নয়, আর দেখল মেয়েটিকে তার আরো দুজন বান্ধবীর সাথে বসে আছে। ওরা সবাই সাদা
ইউনিফর্ম পরে আছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র ডিউটি সেরে তারা বেরিয়েছে।
মেয়েটি সত্যি বড় সুন্দর।
তার চুল আঁচড়ে
খোপা করে বাঁধা, মাথার উপর ক্লাসিক্যাল জাপানি ভঙ্গিতে। তার সামনের মদের গ্লাস
প্রায় অধরাই পড়ে আছে। সে অন্য মেয়েগুলোর
কথা শুনছে। একটি মেয়ে প্রচুর কথা বলছে আর নিজের গ্লাসের মদ তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছে
তার সামনেই।
এসিয়ান মেয়েটি
খুবই চুপচাপ।
সে স্থির
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে। মেয়েটি কয়েক সেকেন্ডের জন্য ছেলেটির দিকে ফিরে
তাকিয়ে ফের শুনতে থাকে অন্য মেয়েটির কথা।
সে ভাবে মেয়েটি
কি তাকে চিনতে পেরেছে। অনেক সময় মেয়েরা পারে আর তাতে তার সুবিধেই হয়। তার বইগুলো
পপুলার আর খুব সহজেই তা পাওয়া যায় বইয়ের দোকানগুলোতে।
সে ফের ঘুরে আর
এক পাত্তর অর্ডার দেয়। এই ব্যাপারটা নিয়ে তাকে একটু ভাবতে হবে। যখন সে মাল না খেয়ে
থাকে তখন সে খুবই লাজুক প্রকৃতির মানুষ। একটি মহিলাকে অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত করতে গেলে তাকে আগে মাতাল হতে
হয়। সে নিজের গ্লাসে চুমুক মারতে মারতে ভাবছিল সেকি যথেষ্ট মাতাল হয়েছে যাতে সে
যেতে পারে ঐ টেবিলে যেখানে বসে আছে ওই এসিয়ান মেয়েটি আর গিয়ে তার সাথে আলাপ জমাতে
পারবে। মেয়েটিকে দেখবে বলে সে ফের ঘুরে বসে কিন্তু দেখে মেয়েটি তার দিকেই তাকিয়ে
আছে। তার ভেতরটা কেঁপে ওঠে সে ফের মুখ ঘুরিয়ে নেয়, আর তার কান দুটো লজ্জায় গরম হয়ে
ওঠে।
না, সে এখনো
যথেষ্ট মাতাল হয়নি যাতে সে মেয়েটিকে কোনো অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত করতে পারে।
সে বারটেন্ডারকে
হাতের ইশারা করে, লোকটি কাছে আসে।
‘আরেকটা দেবো?’
ছেলেটির গ্লাসের দিকে তাকিয়ে বলে সে যা তখনো আধভরতি।
‘একটা ডবল’,
ছেলেটি উত্তর দেয়।
বারটেন্ডারের মুখ
ছিল অভিব্যাক্তিহীন কারণ সে একজন খুব ভালো বারটেন্ডার। সে গিয়ে হুইস্কি নিয়ে আসে।
যখন সে ফিরে আসে কৌতুক কাহিনী রচয়িতার কাছে ততক্ষণে অর্ধেক গ্লাস ভরতি মদটা সে শেষ
করে ফেলেছে। কয়েক মিনিট পর ডবলটাও অর্ধেক হয়ে যায়। দু চুমুকে সে সেটাকে এক পেগে
নামিয়ে এনেছে।
সে টের পাচ্ছিল
এসিয়ান মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সে মনে মনে ভাবল
মেয়েটি নিশ্চয়ই আমার বই পড়েছে।
তারপর তার সামনের
গ্লাসটা সে খালি করে ফেলে।
হুইস্কিটা কোনো
শব্দ না করে পড়ে গিয়ে তলহীন এক কুয়োঁয়।
এখন শরীরে সেই
শক্তি এসেছে যা নিয়ে সে উঠে পড়ে মেয়েটার টেবিলে গিয়ে বলতে পারবে, ‘হ্যালো, আপনার সঙ্গে কি আমি বসতে পারি?’
No comments:
Post a Comment