সোমব্রেরো ফল আউট
রিচার্ড ব্রটিগান
তালা
ঘন্টাখানেক পর
আমেরিকান কৌতুক কাহিনী রচয়িতা এতটাই নার্ভাস ছিল যে সে তার অ্যাপার্টমেন্টের সদর
দরজা চাবি দিয়েও খুলতে পারছিল না। সে এতটাই নার্ভাস ছিল যে তার নেশা প্রায় কেটে
গেছিল। সে ভাবতেই পারছিল না যে সদ্য আলাপ হওয়া সুন্দরী জাপানি মেয়েটি তার অ্যাপার্টমেন্ট বাড়ির হলে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে কখন সে দরজা খুলবে তার জন্য এবং
তারপর তার সঙ্গে বাড়ির ভেতরে যাবে।
মেয়েটি খুব চুপচাপ
তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছিল।
এই তালায় কিছু
একটা গণ্ডগোল আছে।
সে বিশ্বাসই করতে
পারছিল না।
ধুত্তেরি এই
বালের তালা।
এখনই এরকম হতে
হবে? আমার কপালেই এটা ছিল?
এরকম তো আগে কখনো
ঘটেনি।
‘এই তালাটা তো
খুলছে না’, সে বলল, চাবিটা নিয়ে খোলার ব্যার্থ চেষ্টা করতে করতে।
উত্তরে মেয়েটি
কিছুই বলল না। অবস্থাটা তাই আরো খারাপ দাঁড়াল। সে চাইছিল মেয়েটি কিছু বলুক। তখনো
সে জানত না যে মেয়েটি তখনই কিছু বলে যখন তার বিশেষ কিছু বলার থাকে। তখন সে খুব
স্পষ্টবাদী এবং সোজা ভাষায় কথা বলতে ভালোবাসে। ছোটখাট
ব্যাপার নিয়ে বকবক সে একেবারেই করে না।
মেয়েটি খুবই
বুদ্ধিমতী, কৌতুকের প্রতিও খুবই অনুভূতি প্রবণ কিন্তু সে বেশি কথা বলে না। অন্যান্যদের
সঙ্গে একটা গোটা সন্ধ্যা সে কাটিয়ে দিতে পারে একটিও কথা না বলে যা অন্য সবাইকে
অবাক করত। সে তখনই কথা বলত যদি তার কিছু বলার কথা থাকত।
সে খুব মন দিয়ে
লোকের কথা শুনত, সে মাথা নাড়ত সূক্ষ্ম বোধশক্তি সম্পন্ন বিষয়গুলোতে। সে সঠিক সময়ে
হাসত সবসময়।
তার হাসিটা ছিল
বড় সুন্দর, রূপোর তৈরি ড্যাফোডিলের উপর ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটার মতো। তার চারপাশে
লোকজন নানান মজার কথা বলতে ভালোবাসত, তার বড় আকর্ষক হাসিটার জন্য।
যখন অন্যরা কথা
বলত সে তাদের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত ধারণাশক্তি ভরা সরু চোখে, শুনত
তাদের কথা এমন ভাবে যেন তাদের কথার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই এই পৃথিবীতে, যেন
আর যা কিছু শব্দ করে সবকিছু আদৃশ্য হয়ে গেছে। মুছে গেছে মানুষের কান থেকে। তাদের
গলার স্বরের শব্দগুলো রয়ে গেছে শুধু।
কোনো কথা না বলেই
মেয়েটি আলতো করে তার হাত থেকে চাবিটা নিয়ে নিলো। এই প্রথম তারা ছুঁল একে অপরকে, যা
একটা চাবি হাত বদলের মধ্যেই ধরা ছিল। তার হাত ছোটো হলেও আঙুলগুলো সরু আর লম্বা। আর
তার হাত ছিল বড় শান্ত।
পানশালায় ছেলেটি
তাকে ছোঁয়নি বা তার অ্যাপার্টমেন্টের পথে আসার সময়ও। এটাই ছিল কয়েক লক্ষ ছোঁয়ার
মধ্যে সেই প্রথম ছোঁয়া। মেয়েটি ধীরে তালার
মধ্যে চাবিটা ঢোকালো। চাবি ঘোরালো। দরজা খুলে গেল। মেয়েটি তাকে চাবিটা ফেরত দিল আর
দ্বিতীয়বার তাদের হাতেরা ছুঁল একে অপরকে। ছেলেটি ভাবল তার অশান্ত হৃদপিণ্ড বুঝি ধকধক করতে করতে শরীর ছেড়ে বাইরে
বেরিয়ে আসবে। তার জীবনে ঘটা সবথেকে ইরোটিক ঘটনা এটাই।
তাদের সম্পর্ক
ভেঙ্গে যাওয়ার পর বেশ কিছু দিন সে কাটিয়েছে হস্তমৈথুন করে। মাথায় সেই স্মৃতির
ছবিটা রেখে যেখানে মেয়েটি কোনো কথা না বলে তার হাত থেকে চাবিটা নিয়ে নিচ্ছে তাপর
দরজা খুলে তার হাতে ফেরত দিচ্ছে চাবিটা।
তার স্খলন হতো
যখন মেয়েটি দরজা খোলার পর তার হাতে চাবিটা ফেরত দিচ্ছে। তারপর সে বিছানায় শুয়ে
থাকত পেটের উপর স্পার্মের ভেসে থাকা ডোবা
নিয়ে যেন এক আজব সারগাসো সমুদ্র। সে এরকম করেছিল বার পাঁচছয়। তারপর এটা বন্ধ করে
দেয় কারণ সে বুঝতে পেরেছিল সে এটা চালিয়ে যাবে অনন্তকাল আর এটাই তার শেষ ডেকে
আনবে। সে জানত জীবনের কোনো সুখ-সমাপ্তি নেই। কিন্তু সে নিজেকে এভাবে শেষ করে দিতে
চাইছিল না।
এভাবে হস্তমৈথুনের
ফ্রেম করা কাগজের জাপানি দরজা হয়ে জীবন শেষ না করে সব থেকে ভালো হতো সে যদি নিজের
মস্তিষ্ক উড়িয়ে দিতে পারত।
সে একটা রাত
কাটালো ঘন্টার পর ঘন্টা কান্নাকাটি করে কারণ সে হস্তমৈথুন করতে চাইছিল। সে
হস্তমৈথুন করতে চাইছিল এটা ভেবে যে মেয়েটি
তার হাত থেকে চাবিটা নিচ্ছে, তালাটা খুলছে তারপর চাবিটা তার হাতে ফিরিয়ে দিচ্ছে,
পৃথিবীর অন্যান্য বিষয়ের থেকেও এটাই তাকে টানছিল বেশি। শেষমেশ সে কাঁদতে কাঁদতে
হাঁফিয়ে পড়ল কিন্তু হস্তমৈথুন করল না। যতই কষ্ট হোক না কেন এটা তাকে থামাতেই হতো
কারণ এটা তার শেষের কারণ হবে। কাঁদতে কাঁদতে একসময় তার একটা স্বপ্ন-দর্শন হয়েছিল
তার কবরের মাথার কাছে পাথরের ফলকটা কেমন দেখতে হবে তার যদি না সে এই হস্তমৈথুন বন্ধ
করে মেয়েটার হাতের ছোঁয়ার কথা মনে কোরে।
একজন আমেরিকান
কৌতুক কাহিনী রচয়িতা
১৯৩৪-২০০৯
শান্তিতে ঘুমোন
উনি আর হাত মারছেন
না।
No comments:
Post a Comment