সোমব্রেরো ফল আউট
রিচার্ড ব্রটিগান
ভিড়
এতক্ষণে একটা ছোট
ভিড় জমে গেছে মেয়র, কাঁদতে থাকা দুটো লোক আর সোমব্রেরো ঘিরে। কী ঘটছে জানতে তারা উৎসুক, কিন্তু তারা
মেয়র, কাঁদতে থাকা দুটো লোক আর সোমব্রেরো ঘিরে ভিড় করে চুপ দাঁড়িয়ে থাকে।
ভিড় করে থাকা
লোকজন কথা বলে না বিশেষ। মাঝে মাঝে দু একটা ফিসফিস শোনা যাচ্ছে অবশ্য। এটা ভাবাই যাবে না যে এরাই পরে
লোকাল পুলিশকে বাওয়াল দেবে, ন্যাশানাল গার্ডদের দাঁড় করিয়ে রাখবে লড়াই করে, তারপর
ছত্রি বাহিনী, ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার গানশিপের বিরুদ্ধেও লড়ে যাবে। এখন ওদের দেখে
এসব কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
মেয়র চেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছিল যাতে লোক দুটোর কান্না থামানো যায়, যাতে সে ঘটনার কারণটা বুঝতে
পারে কিন্তু লোক দুটো কান্নার ঝর্ণা ধারায় তাদের চিন্তাভাবনা ডুবিয়ে ফেলেছিল এবং
তাই না পারছিল কান্না থামাতে না পারছিল কারণ বোঝাতে।
ভিড় করা লোকজন
ফিসফিস করে চলেছিল –
ওদের মধ্যে একজন
ফিসফিস করে বলল, ‘ওটা কী একটা সোমব্রেরো?’
‘ওটা একটা সোমব্রেরো’,
উত্তর এলো ফিসফিস করে।
‘ওটা রাস্তায় পড়ে
আছে কেন?’
‘আমি জানি না।
আমি এখনই এলাম’।
‘ওটা কারো টুপি?’
‘আমি জানি না’।
‘আমিও না’।
‘আমি জানি তুমি
জানো না কারণ তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলে’।
‘সেটা ঠিক কথা।
আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। আমি দুঃখিত’।
‘এতে দুঃখিত
হওয়ার কিছু নেই’।
‘ধন্যবাদ’।
ভিড়ের অন্যদিকে
চলছিল আরো ফিসফিস-
‘ওরা কাঁদছে
কেন?’
‘ওটা কি মেয়রের
পিসতুত ভাই?’
‘হ্যাঁ’।
‘ও কাঁদছে কেন?
আমি আগে ওকে কখনো কাঁদতে দেখিনি। ওতো কোনোদিন ছিঁচকাদুনে ছিল না। আমি তো ওর সাথে
হাইস্কুলে পড়েছি। ওতো স্কুলের দৌড়ের টিমে ছিল। ও ১০০ মিটার দৌড়ত ১০.৩ সেকেন্ডে। খুব ভালো দৌড়ত। কখনো কাঁদত না’।
‘চুপ। আমি মেয়র
কী বলছে শুনতে চাই’।
‘তখনকার দিনে ১০.৩ খুব ভালো সময়’।
‘সেটা ঠিক আছে
কিন্তু আমি মেয়র কী বলছে সেটা শুনতে চাই’।
‘আমি কি খুব বেশি
কথা বলছিলাম?’
‘হ্যাঁ’।
মেয়র খুব
উত্তেজিত হয়ে পড়ছিল।
‘কান্না থামাও’,
সে চেঁচাল। ‘এখনি কান্না থামাও। শুনতে পাচ্ছো? আমি তোমাদের মেয়ের। আমি আদেশ করছি
তোমরা কান্না বন্ধ করো!’
মেয়রের
চ্যাঁচামিচিতে তাদের কান্না বাড়ল চাই কমল না।
ফিসফিস কথাবার্তা
চলতেই থাকল-
‘মেয়র ওরকম
চেঁচাচ্ছে কেন? আগে তো এরকম চেঁচাতে শুনিনি’।
‘আমি জানি না।
আমি তো ভোট দিয়েছিলাম অন্য ক্যান্ডিডেটকে। তুমি কি মেয়রকে ভোট দিয়েছিলে?’
‘হ্যা, আমি ওকেই
ভোট দিয়েছিলাম’।
‘তাহলে আর আমাকে
জিজ্ঞাসা কোরো না ও কেন চেঁচাচ্ছে। তুমি ওকে ভোট দিয়েছিলে’।
দুজন ভদ্রমহিলা
ফিসফিস করতে শুরু করল-
‘কী জঘন্য
ব্যাপার’।
‘কোনটা জঘন্য
ব্যাপার?’
‘এটা’।
‘ওহ’।
বাচ্চারাও ফিসফিস
করছে-
‘এই লোকগুলো
কাঁদছে’।
‘হ্যাঁ, আমাদের
থকেও ওরা খারাপ আছে’।
‘আমি এরকম করে
কাঁদলে আমাকে আমার ঘরে যেতে হতো’।
বুড়োবুড়িরা
ফিসফিস করছিল-
‘আমাদের সোশ্যাল
সিকিউরিটির টাকা নাকি বাড়বে এ নিয়ে তুমি শুনেছ কিছু?’
না, কিছু শুনিনি
তো’।
‘৪.১ পারসেন্ট এই নভেম্বর থেকেই বাড়বে যদি কংগ্রেস অনুমোদন
করে’।
‘আর যদি সেটা ওরা
না করে?’
‘কী?’
‘আমি বলছি যদি
ওটা কংগ্রেস অনুমোদন না করে?’
দুজন গৃহিনী
ফিসফিস করছিল-
‘আমার পিরিয়ডের
সময় আট দিন হলো পার হয়ে গেছে’।
‘কী মনে হয় তুমি
আবার প্রেগনেন্ট?’
‘আশা করি তা নয়।
তিনটে বাচ্চা যথেষ্ট’।
‘আমার মনে পড়ছে
তোমার কথা এক ডজন বাচ্চা চাইতে তুমি’।
‘তখন আমার মাথা
পাগলে গেছিল’।
ফিসফিস কথাবার্তা
বাড়তে থাকল ক্রমে।
ভিড় বাড়ছিল আরো।
ফিসফিস হঠাৎ মনে
হলো যেন মৌচাকে মৌমাছির ভনভন।
ওরা পায়ে পায়ে
এগোচ্ছিল রাস্তা ধরে যা শেষ হবে ফেডারেল সৈন্যদের সাথে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে। আর তাদের ছোট্ট শহর বিশ্বের
নজরে চলে আসবে।
আর বেশি দেরী
নেই।
কয়েক ঘন্টার ভেতর
মেশিন গান আর কামানের শব্দের সাথে পরিচয় ঘটবে তাদের আর সারা বিশ্ব চেয়ে দেখবে।
কয়েকদিনের ভেতরেই
ইউনাটেড স্টেটসের প্রেসিডেন্ট আসবেন
সেখানে ক্ষয় ক্ষতি জরিপ করতে আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সান্ত্বনা দিতে আর মিটমাট করাতে।
সেই বিখ্যাত
বক্তৃতাটাও তিনি দেবেন যা মনে করা হবে লিঙ্কনের গেটিসবার্গ বক্তৃতার মতো। কয়েক
বছরের ভেতরেই স্কুল ছাত্রদের পাঠ্য বইয়ে যা জায়গা করে নেবে।
মৃতদের সম্মানে
জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হবে আর যারা বেঁচে আছে তাদের জাতীয় ঐক্যের জন্য আবার নতুন
করে প্রতিশ্রুতির পাঠ পড়ানো হবে।
No comments:
Post a Comment