Wednesday, September 6, 2023

 সোমব্রেরো ফল আউট


রিচার্ড ব্রটিগান


ঝাঁটা

 

ভগ্নহৃদয় আমেরিকান কৌতুক কাহিনী রচয়িতা কিছুই জানত না যে তার ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে পড়ে থাকা ছেঁড়া কাগজের টুকরোগুলোর ভেতর কী ঘটছে। সে জানত না যে তাদের এখন একটা নিজস্ব জীবন হয়েছে আর তারা তাকে ছাড়াই লেখা এগিয়ে নিয়ে চলেছে। সে শুধু কষ্ট পাচ্ছে তার হারানো জাপানি প্রেমিকার জন্য। সে ভাবে মেয়েটিকে সে ফোন করবে আর বলবে যে সে তাকে ভালোবাসে আর তাকে ফিরে পেতে সে সবকিছু করতে পারে।

সে টেলিফোনটার দিকে তাকায়।

মেয়েটি শুধু সাতটা নম্বরের দূরত্বে আছে তার থেকে।

শুধু তাকে ওই নম্বরগুলো ডায়াল করতে হবে।

তাহলেই সে মেয়েটির গলা শুনতে পাবে।

সেটা হবে একটা ঘুমে জড়ানো গলা কারণ সে ফোন করে তার ঘুম ভাঙ্গিয়েছে। মনে হবে যেন বহু দূর থেকে ভেসে আসছে সেই স্বর।  হয়ত সে কিয়োটোয়, যদিও মেয়েটি মাইল খানেক দূরে আছে সানফ্রানসিস্কোর রিচমন্ড জেলায়।  

‘হ্যালো’, মেয়েটি বলল।

‘আমি। কথা বলতে পারবে?’

‘না, আমার সাথে একজন আছে। আমাদের ভেতর সবকিছু চুকেবুকে গেছে। আমাকে আর ফোন কোরো না। তুমি ফোন করলে ও রেগে যায়’।

‘কী?’

‘যে পুরুষমানুষটিকে আমি ভালোবাসি ও পছন্দ করে না তোমার ফোন আসা। তাই আমাকে আর ফোন কোরো না। ঠিক আছে?’

ক্লিক

মেয়েটি ফোন নামিয়ে রাখে।  

ছেলেটির মাথার ভেতরে যখন মেয়েটি ফোন নামিয়ে রাখছিল তখন মেয়েটি আসলে একা ঘুমোচ্ছিল তার বেড়ালটিকে পাশে নিয়ে। সে অঘোরে ঘুমোচ্ছিল। এক মাস আগে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে সে আর কারো সাথে বিছানায় যায়নি। এমন কী সে কোনো পুরুষের সাথে একটা ডেটেও যায়নি। সে তার কর্মস্থলে কাজ করেছে, বাড়ি ফিরে সূঁচের কাজ করেছে, বই পড়েছে শুধু। সে প্রুস্ত পড়ছিল। কেন তা সে জানে না। কখনো সখনো ভাই আর ভাই বৌয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছে আর সবাই মিলে টেলিভিশন দেখেছে।

আমেরিকান কৌতুক কাহিনী রচয়িতার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে মেয়েটির জীবন কেটেছে নিস্তরঙ্গ ঘটনাহীন। এইসব অন্যান্য কাজ করতে করতে সে খুব ভাবছিল তার নিজের জীবন নিয়ে। তার ছাব্বিশ বছর বয়স আর নিজের জীবনটাকে সেই  পরিপ্রেক্ষিতে রাখতে চাইছিল। যে দু বছর সে ওই আমেরিকান কৌতুক কাহিনী রচয়িতার  সঙ্গে ছিল সে নিজের অস্তিত্বের ব্যাপ্তি হারিয়ে ফেলেছিল, সে জীবন থেকে কী চায় সে কথাও তার গুলিয়ে গেছিল। ওই কৌতুক কাহিনী রচয়িতা তার জীবন থেকে প্রভূত শক্তি সামর্থ শুষে নিয়েছে। তাকে সারাক্ষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা ওই কৌতুক কাহিনী রচয়িতাকে সামলাতে হয়েছে , সামলাতে হয়েছে তার নানান বাতিক। আর এসব দু বছর ধরে করার পর সে নিজেকেই ভুলে গেছে। যদিও শুরুতে সে শুধু ছেলেটির সাথেই থাকতে চেয়েছিল, নিজেদের ছেলেমেয়ে নিয়ে একটা সুস্থ সাধারণ জীবন চেয়েছিল।

ছেলেটির মূল পাগলামী বাস্তবে এমন কিছুই হতে দিল না।  

একসাথে এক বছর থাকার পর মেয়েটি বুঝল যে এই ভালোবাসার সম্পর্ক তার জন্য সঠিক নয় কিন্তু তার আরো একটা বছর লাগল এটা থেকে বেরিয়ে আসতে আর এখন সে খুশি যে সে অবশেষে বেরোতে পেরেছে এই সম্পর্ক থেকে।  

মাঝে মাঝে সে ভাবে কীভাবে সে এতদিন ধরে এই সম্পর্ক গড়াতে দিল।

সে নিজেকে বলে, পরের বার প্রেমে পড়লে আমি আরো সর্তক থাকব। আর নিজের কাছে সে একটা প্রতিজ্ঞা করেছে যেটা সে রাখবে ঠিক করেছে। আর কখনোই কোনো লেখকের সাথে সে সম্পর্কে জড়াবে না, যতই সে মনোরম, সংবেদনশীল, মজার মানুষ বা উদ্ভাবনী শক্তি সম্পন্ন হোক না কেন। শেষ অবধি তারা ভালোবাসার সম্পর্কের যোগ্য নয়। তাদের আবেগের দাম বড় বেশি আর তাদের রক্ষণাবেক্ষণও খুবই জটিল এক কাজ। তারা অনেকটা ভ্যাকিউম ক্লিনার সাথে নিয়ে ঘোরার মতো যা সারাক্ষণ খারাপ হচ্ছে আর যাকে একমাত্র সারাতে পারে আইনস্টাইন।

সে চায় তার পরের প্রেমিক হোক একটা ঝাঁটা।  

 

No comments:

Post a Comment