সোমব্রেরো ফল আউট
রিচার্ড ব্রটিগান
বই
‘তোমার বইগুলো
আমার ভালো লাগে’, মেয়েটি বলে। ‘সে তো তুমি আগেই জান’।
ছেলেটি স্তব্ধ
হয়ে যায়। মেয়েটির দিকে চেয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকে। সে অপেক্ষা করে মেয়েটির আরো কিছু
কথার জন্য। মেয়েটি কিছু বলে না। মেয়েটি শুধু হাসে। তার হাসিটা এতটাই দর্বোধ্য যে
মোনালিসাকেও তার কাছে মনে হবে একটা ক্লাউনের ব্যর্থ অভিনয়।
‘তুমি কি একটু মদ
নেবে?’সে বলে, মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে সে রান্নাঘর থেকে
এক বোতল ব্র্যান্ডি আর দুটো গ্লাস নিয়ে আসে। ব্র্যান্ডির বোতলটা আনতে সে একটু সময়
নেয় কারণ রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে সে ভাবছিল এরপর তার কী করা উচিৎ।
সে খুবই চাইছিল
এই শান্ত সুন্দরী জাপানি মেয়েটার সাথে বিছানায় যেতে যে তার অ্যাপার্টমেন্টের কোচে
বসে আছে এক অলৌকিক কারণে। এটা যে ঘটবে তা সে কখনই ভাবেনি। কী করে সে সফল হবে?
মেয়েটিকে বিছানায় নিয়ে যাওয়া তার কাছে একটা ধাঁধাঁর মতো ঠেকছিল।
ধাঁধাঁর
টুকরোগুলো তার মাথায় মেঘের মতো ভাসছিল কিন্তু সে এমনকি দুটো টুকরোও একসাথে জুড়তে
পারছিল না। সে কী করবে?
হঠাৎ-ই তার মন
খারাপ হয়ে গেল, মাথার ভেতরের মেঘগুলো সরিয়ে জায়গা নিলো একরাস অসহায়তা। সে একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে ফিরে গেল।
জাপানি মেয়েটা
জুতো মোজা খুলে কোচের উপর বসে আছে হাঁটু মুড়ে খানিকটা ধ্যানের মুদ্রায়। একটা যৌন
আবেদন আছে এইভাবে বসে থাকার ভেতর। যেন মেয়েটির শরীর ছুঁয়ে গেছে গরমকালের এক মৃদুমন্দ
বাতাস।
সে এভাবে
মেয়েটিকে দেখার জন্য তৈরি ছিল না। জুতো মোজা খুলে এই ধ্যানের মুদ্রায়। এমন যে হতে
পারে সে ভাবতেও পারেনি। কয়েক সেকেন্ড আগেই
রান্নাঘরে সে ভাবছিল মেয়েটাকে কীভাবে বিছানায় নিয়ে যাবে এখন সেই আশা হতাশায় পরিণত
হয়েছে।
সে যখন মেয়েটিকে
দেখল ওভাবে কোচে বসে থাকতে তার একটা মানসিক পরিবর্তন হলো সে নিজেকে অনেকটা হালকা
বোধ করল। মেয়েটাকে বিছানায় নিয়ে যাওয়ার
সমস্ত চিন্তা চলে গেল। শান্ত লাগল মাথাটা অনেকটা। সে ব্র্যান্ডির বোতল আর গ্লাস
দুটো একটা টেবিলে নামিয়ে রাখল। সে নিজের বা মেয়েটির জন্য গ্লাসে মদ ঢালল না। সে
হেঁটে কোচের কাছে গিয়ে মেয়েটার পাশে বসে তার হাত বাড়াল মেয়েটার হাতের জন্য এবং
মেয়েটিও তাই করল।
আলতো করে মেয়েটির
হাত ধরে রইল সে।
মেয়েটির
আঙুলগুলোর দিকে এমন এক মনে দেখতে লাগল যেন সে আগে কখনো আঙুল দেখেনি। সে
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিল এই আঙুলগুলোয়, খুব সুন্দর মনে হয়েছিল। সে মেয়েটির হাত
ছাড়তে চাইছিল না, ধরে রাখতে চাইছিল চিরকালের জন্য।
মেয়েটির হাত আঁকড়ে
ধরল তার হাত।
সে মেয়েটির হাত
থেকে তার চোখের দিকে তাকাল।
যেন দুটো সরু
কৃষ্ণবর্ণ শূণ্যতা যা ভরতি ছুঁতে চাওয়ার কোমলতায়।
‘তোমায় কিছু করতে
হবে না’, মেয়েটি বলল।
তার কোমল স্বরের
ভেতর একটা অদ্ভুত জোর ছিল। যা এটা বুঝতে সাহায্য করে যে কেন একটা চায়ের কাপ না
ভেঙ্গে রয়ে যেতে পারে শতাব্দীর পর শতাব্দী, ইতিহাসের পরিবর্তন অস্বীকার করে মানুষের
অশান্তিকে উপেক্ষা করে।
‘আমি দুঃখিত’,
ছেলেটি বলে।
মেয়েটি আবার হাসে
তারপর ছেলেটির মুখ পেরিয়ে তাকায় সে ঘরটির দিকে যেখানে আছে ছেলেটির বিছানা। আর কোনো
কথা না বলে সে মেয়েটিকে সেখানে নিয়ে যেতে থাকে। যদিও মেয়েটির হাত ধরে সে আগে আগে
যাচ্ছিল কিন্তু মেয়েটিই ছিল আসল গাইড।
No comments:
Post a Comment