Tuesday, September 26, 2023

  সোমব্রেরো ফল আউট


রিচার্ড ব্রটিগান


টুনা

 

হ্যাম-বার্গার খাওয়ার সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলার পর সে ভাবে টুনা মাছের স্যান্ডউইচ খাবে কিন্তু সেটাও খুব ভালো কথা নয়। কারণ  সবসময় টুনা মাছের স্যান্ডউইচ খাওয়ার ভাবনা থেকে সে নিজেকে দূরে রেখেছে। গত তিন বছর সে টুনা মাছের স্যান্ডউইচের ভাবনা ভাবতে চায়নি। চেষ্টা করেছে না  ভাবার। যখনই সে টুনা মাছের স্যান্ডউইচের কথা ভাবে তার বাজে লাগে আর এখন এত চেষ্টা করার পরও সে ভাবছে টুনা মাছের স্যান্ডউইচের কথা।

একটা বড়কা টুনা মাছের স্যান্ডউইচ সাদা পাঁউরুটিতে, ভেজা ভেজা, মেয়নিস প্রায় টপ টপ করে পড়ে যাওয়ার জোগাড়, যেভাবে সে সেটাকে খেতে ভালোবাসে, তার ভাবনা অধিকার করে আছে আর এমন অবস্থায় যা হয় চিরকাল তার খারাপ লাগতে থাকে।

সে তার মাথা থেকে টুনা মাছের স্যান্ডউইচের ভাবনাটাকে তাড়াতে চাইল কিন্তু সেটা পণ করেছে কিছুতেই যাবে না। ইথোপিয়ার যুদ্ধ জাহাজে জড়িয়ে থাকা খুদে সমদ্রের পাণীর মতো তা আঁকড়ে থাকল। টুনা মাছের স্যান্ডউইচ নড়ল না একটুও। সে আরেকবার চেষ্টা করল টুনা মাছের স্যান্ডউইচের ভাবনাটাকে মাথা থেকে সরাতে কিন্তু সেটা সরল না।

তার বাজে লাগাটা পরিণত হলো অসহায়তায়।

তাকে বসে পড়তেই হলো।

এসবের কারণ হলো সে টুনা মাছ খেতে ভালোবাসত আর গত তিন বছর সে টুনা খায়নি। সপ্তাহে গোটা পাঁচেক টুনা মাছের স্যান্ডউইচ খেত অথচ এখন সে অনেক বছর হলো খায়নি। টুনা মাছের স্যান্ডউইচ ছাড়া জীবন বড় শূণ্য লাগে তার।

অনেক সময় নিজের অজান্তে সুপারমার্কেটে সে টুনা মাছের ক্যান তুলে নিয়েছে হাতে। পরে টের পেয়েছে সেটা। ক্যানের গায়ের লেখাটার অর্ধেক পড়া হয়ে যাওয়ার পর অনেক সময় টের পেয়েছে সে কী করছে। তারপর এমন চমকে উঠেছে যে মনে হবে চার্চে পানু পড়তে গিয়ে ধরা পড়েছে সে, তারপর দ্রুত ক্যানটা সেলফে নামিয়ে রেখে হাঁটা মেরেছে এমন ভাবে যেন সেটা সে ছুঁয়েও দেখেনি।  

আমেরিকান কৌতুক কাহিনী রচয়িতার এই টুনা মাছের ব্যাপারে এই ঝামেলার কী কারণ? উত্তরটা খুব সোজা, ভয়। সে এটাকে ভয় পায়। তার বয়স ৩৮, সে ভয় পায় টুনা মাছকে। ব্যাপারটা এতটাই সরল। ভয়ের কারণ হলো পারদ।

ওরা যখন কয়েক বছর আগে বার করল যে টুনা মাছে যতটা পারদ থাকার কথা তার থেকে বেশি থাকে, সে টুনা মাছ খাওয়া বন্ধ করে দিলো কারণ তার ধারনা হলো সেটা তার মস্তিষ্কে গিয়ে জমা হতে থাকবে আর  তার চিন্তা ভাবনায় প্রভাব ফেলবে এবং তার লেখালিখিও প্রভাবিত হবে।

সে ভাবল তার লেখা পালটে গিয়ে অপরিচিত হয়ে উঠব, কেউ আর তার বই কিনবে না কারণ পারদ তাদের নষ্ট করেছে আর টুনা মাছে খেলে সে পাগল হয়ে যাবে। তাই সে টুনা মাছ খাওয়া বন্ধ করেছে।

টুনা মাছের স্যান্ডউইচ না খাওয়ার তার এই সিদ্ধান্ত মেনে চলা তার কাছে ছিল খুবই কঠিন আর একটা বড় আঘাতের মতো। তবু তা দুঃস্বপ্নের কারণ হতো।

সে এমনকি একবার তার ডাক্তারের কাছে গেছিল এবং জিজ্ঞাসা করেছিল টুনা মাছে খুব বেশি পরিমান পারদ আছে কিনা যা তার ক্ষতি করতে পারে। ‘না, না আপনি চাইলে টুনা মাছ খেতে পারেন’,  তার ডাক্তার উত্তর দিয়েছিল। কিন্তু তবু সে টুনা মাছ খায়নি। তার ডাক্তারের উপদেশ মানতেও সে ভয় পেয়েছিল।

সে সত্যই টুনা মাছে খেতে খুব ভালোবাসত কিন্তু তার থেকে বেশি ভালোবাসত তার নিজের লেখালিখি। তাই সে টুনা মাছের  স্যান্ডউইচের কথা আর ভাবতে চাইছিল না, কিন্তু মানুষ বলেই মাঝে মাঝে তার পদস্খলন হতো যা এখনি ঘটেছে আর তার জন্য তাকে দাম মেটাতে হচ্ছে।

কোচে বসে তার হাত কাঁপছিল টূনা মাছ খাওয়ার আকর্ষণ আরে ভয়ের টানাপোড়েনে।

মাইলখানেক দূরে সানফ্রানসিস্কোতে ঘুমন্ত জাপানি মেয়েটার জন্য গভীর সহানুভূতিই শুধু থাকতে পারে আমাদের। গত দু বছর ধরে এরকম পাগলামো সে সহ্য করেছে কখনো কখনো এর থেকেও এতটা বেশি যে এটা কে তখন মনে হবে ছেলেখেলা। সে দেখেছে ছেলেটির কখনো না শেষ হওয়া ঘোর আর ব্যক্তিত্বের অস্পষ্টতা।

মেয়েটি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। লোকাল হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে সে কাজ করে। রাতের বেলা যে সব পাগলদের সামলাতে হয় তাকে তারা ছেলেটির তুলনায় খবই সাধারণ জটিলতাহীন লোকজন।

 

 


No comments:

Post a Comment