Saturday, February 18, 2023

তিনি তাঁর মতো করে বিরোধিতা করেছেন



বিদায় বলতে কেমন শ্বাসকষ্ট হয়। তবু বিদায় বলতেই হয়, কখনো কখনো। সুবিমল মিশ্র চলে গেলেন, একটা যুগ চলে গেল। আমাদের যৌবনের এক বিরোধী চরিত্র চলে গেলেন।

সুবিমল মিশ্রের লেখার সাথে প্রথম পরিচয় ‘বিজ্ঞাপন’ পত্রিকার মাধ্যমে। যে পত্রিকার পরে নাম হবে ‘বিজ্ঞাপন পর্ব’। ‘হারান মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া’ সেই পত্রিকার মাধ্যমেই পড়া এবং প্রেমে পড়ে যাওয়া। আমি যদিও কখনোই সুবিমল মিশ্রের অন্ধ ভক্ত ছিলাম না। তবু সুবিমল আমার প্রিয় লেখকদের ভেতর একজন।

কথা এরকম হতে পারে তবে কেমন ছিল আমাদের মেলামেশার ধরন?

আড্ডার সাথে সাথে তর্কাতর্কি, মন কষাকষি, ভাবভালবাসার কোনো অভাব ছিল না। তখন আমরা ‘সমবেত আর্তনাদ’ নামে একটা কাগজ করছি। বইমেলার সেই টেবিলে তখন সুবিমল মিশ্র, হাংরি সুভাষ ঘোষ এবং আমরা। একবার মনে আছে টেবিলে একজন সুন্দরী এসে জিজ্ঞাসা করলেন – আচ্ছা লিটল ম্যাগাজিন ব্যাপারটা কী?

সুবিমলদার সটান উত্তর ছিল – এত সেজে থাকলে লিটল ম্যাগাজিন কী বোঝা যাবে না।

সুবিমলদাকে ওই মেলাতেই পাঠককে বলতে শুনেছি – আগে বই ধরতে শিখুন তারপর তো বুঝবেন বইটা কী নিয়ে।

খুব কাছ থেকে দেখেছি তাঁর রাগ, অসহায়তা। বইকে কতটা ভালবাসলে এই উচ্চারণ করা যায়। পাঠক এটা কোনো গিমিক নয়। এক ধরনের স্টান্ট ভাবলে ভুল হবে আপনার। নিজের বই বাঁধাই ঘর থেকে আসার পর সেটা অন্তত আধ ঘন্টা ধরে দেখা। এই খুঁতখুঁতে স্বভাব ছিল তাঁর।

আমি এমন কোনো লেখক আর দেখিনি যিনি প্রতিটা বইয়ে একটা পার্সোনাল টাচ দিতে চান। ইচ্ছে করেই প্রচ্ছদে একটা ভুল রেখে তারপর একটা লাল ফেল্ট পেন দিয়ে কারেক্ট করতে দেখেছি আমি।

তবু তাঁর বিরোধিতা করতে আমার বাধেনি। কারণ সুবিমলদাকে আমি কখনো গুরু মনে করিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার পদ্ধতির সাথে আমি এক মত হতে পারিনি। তিনি তাঁর মতো করে বিরোধিতা করেছেন এবং বাংলা বাজারে সেটাও কোনো অংশে কম নয়। এবং অনেক ক্ষেত্রেই যা অনেকের অস্বস্তির কারণ হয়েছে। হয়েও চলবে হয়ত আরো বহুদিন।

 

বইয়ের দুনিয়া, বইমেলা বুলেটিনে প্রকাশিত