সোমব্রেরো ফল আউট
রিচার্ড ব্রটিগান
দাঙ্গা
এদিকে ওয়েস্ট
পেপার বাস্কেটে-
আমি তোমাদের
মেয়র! আমাকে কিছুতো সম্মান দেখাও! আমি আদেশ দিচ্ছি তোমরা কান্না থামাও! আমি কিন্তু
পুলিশ ডাকব!
মেয়র লোক দুটোর
উপর চেঁচায়। সে তার ধৈর্য্যের শেষ সীমায়
এসে পৌঁছেছে। শান্তভাবে আর ব্যাপারটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ভিড় আরো বেড়েছে
আর মেয়রের মাথার স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে।
পুলিশ! পুলিশ!
পুলিশ! সে চেঁচায়, যদিও কাঁদতে থাকা একটা লোক তার নিজের পিসতুত ভাই। মেয়র গেছে
গিয়া। সে পাগলে যাচ্ছে।
পুলিশ অবশ্যই
আসছে। যে মুহূর্তে মেয়র পাগল হয়ে গেল তখনই কেউ একটা তাদের ফোন করেছে। আর বলেছে মেন
স্ট্রিটে দাঙ্গা বেধে গেছে।
‘প্রচুর কাঁদানে
গ্যাস নিয়ে আসুন’! টেলিফোনে বলেছে লোকটা। লোকটা কিছুটা হিস্টিরিয়া গ্রস্ত বলে
পুলিশ বুঝতে পারছিল না কী ভাবা ঠিক, তবু তারা আসছে।
দুটো লোক কাঁদছে,
মেয়র চেঁচাচ্ছে আর সোমব্রেরোটা জাস্ট পড়ে আছে একই অবস্থায়। ভিড় করা জনতা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। তারা আর
ফিসফিস করে কথা বলছে না।
তারা বেশ জোরেই
কথা বলা শুরু করেছে। কয়েকজন নিজেদের ভেতর চেঁচিয়ে বলছিল-
‘কী হচ্ছেটা কী?’
‘আমি জানি না’।
‘আমার ভয় করছে’,
একজন বয়স্ক চেঁচিয়ে বলল।
‘এতো হাস্যকর’,
একটি টিনএজার মেয়ে চেঁচিয়ে বলল।
‘মেয়রটা পাগল’,
একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলা চেঁচিয়ে বলল। কথাগুলো তার মুখ থেকে বেরিয়েছে কি বেরোয়নি
কেউ একটা তার মুখে একটা ঘুষি মারল। ঘুষিতে বেশ জোর ছিল। তার ঘায়ে মহিলা রাস্তায়
গিয় পড়ল। এক পলকে সে জ্ঞান হারাল।
যে লোকটা ঘুষি
মেরেছিল সে প্রতিটা নির্বাচনে মেয়রকে ভোট দিয়েছে তাই তার প্রিয় মেয়রের নামে এমন
কথা সে সহ্য করতে না পেরে ছুটে এসে ঘুষি মেরেছে মহিলাকে। তার প্রতিশোধ নেওয়ার
আনন্দ অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না কারণ তার চেয়েও একজন বড় চেহারার লোক তাকে এক
পালটা ঘুষিতে মাটি ধরিয়ে ছাড়ল। এবং সেও জ্ঞান হারাল।
এখনো কিছু মানুষ
আছে যারা সহ্য করতে পারে না এটা যে কেউ একজন মহিলাকে এভাবে মারবে। তারা কেয়ার করে
না কী কারণে কেউ এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে। তারা জবাব দিতে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে তার জবাবী ঘুষি এসে পড়ে লোকটার
চোয়ালে। রাস্তায় মহিলার পাশে পড়ে থাকল
লোকটা। তারা এতটাই অজ্ঞান হয়েছিলে যে তাদের দেখে মনে হচ্ছিল তাদের সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে আর তাদের চারধারের জনতা যেন এই অদ্ভুত
বিয়ের পার্টিতে যোগ দিয়েছে।
সবকিছুই যেন এক
চরম অবস্থার দিকে এগোচ্ছে।
লোক দুটো সমানে
কেঁদে চলেছে। তারা এত কেঁদেছে যে তারা আর মানুষ নেই। অতটা চোখের জল একটা মানুষের
শরীরে থাকা সম্ভব নয়। তাদের পায়ের তলায় যেন আছে এক চোখের জলের ধারা যার বুদবুদ
তাদের পা বেয়ে উঠে তাদের কাঁদতে সাহায্য করছে।
মেয়র প্রচন্ড
রেগে ক্ষিপ্তের মতো আচরণ করছে।
সে আর লোক দুটোকে
চেঁচিয়ে কান্না থামাতে বলছে না বা তাদের পুলিশের ভয়ও দেখাচ্ছে না।
সে এমন সব জিনিস
নিয়ে চেঁচাচ্ছে যার কোনো মানে নেই যেমন ১৯৪৭ এ তার যে গাড়ি ছিলা তার লাইসেন্স
প্লেটের নাম্বার চেঁচিয়ে আওড়াতে শুরু করল সে।
এ জেড ১৪৯২! এ
জেড ১৪৯২! এ জেড ১৪৯২! সে বার বার চেঁচিয়ে
বলে যেতে থাকল। যতবার সে এটা বলছিল ততবার জনতার ভিড় উত্তরোত্তর উত্তেজিত হচ্ছিল।
ওর লাইসেন্স
প্লেটের নাম্বার জনতাকে দাঙ্গার জন্য উস্কাচ্ছিল।
দুপুর হয়ে গেছিল
আর হাইস্কুলের ছাত্ররা দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ছাড়া পেয়েছিল।
হাইস্কুল শহরের
প্রধান রাস্তায় তিনটে মোড় দূরে। ছাত্ররা দ্রুত এই ঝামেলার দিকে এগিয়ে আসছিল।
এ জেড ১৪৯২! মেয়র
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আওড়ে চলল। এ জেড ১৪৯২!
এখন আধ ডজন
মারপিট চলছে ভিড়ের ভেতর। ভিড় আরো বেড়ে গেছে। প্রতি মিনিটে আরো লোক এসে জুটছে
সেখানে। মেয়রের নাম্বার প্লেটের আওড়ানো চিৎকারে প্রভাবিত হয়ে তারা অন্য লোকজনকে
ধাক্কা মেরে নিজেরাও চেঁচামেচি শুরু করেছে নানান জিনিস নিয়ে।
‘আমি তোমাকে
ঘেন্না করি’, একজন সত্তর বছরের মহিলা একটি অচেনা লোককে দেখে চেঁচায়। যাকে সে জীবনে
কখনো দেখেনি। তারপর সে বুড়ো লোকটা্র
বিচিতে এক গুঁতো মারে। একটা পাথরের মতো
রাস্তায় পড়ে যায় বুড়োটা। এই অবস্থাতেও কোনরকমে, বেকারি থেকে সদ্য কেনা একটা লেবুর ক্রিমের পিঠে ঠোঙা
থেকে বার করে ঠুঁসে দেয় বুড়ির হাঁটুতে।
‘নোংরা কোথাকার’,
বুড়ি চেঁচিয়ে ওঠে। বুড়ো শুয়ে শুয়েই পিঠেটা ঠুসতে থাকে বুড়ির হাঁটুতে। বুড়ির হাঁটু
অদ্ভুত লাগে দেখতে। ডিমের সাদা আর হলুদ
পুরে ভরে যায় বুড়ির হাঁটু আর তা তার পা বেয়ে গড়িয়ে যায় তার জুতোর উপর।
পুলিশ কোথায়?
এসব থামাতে তারা
আসছে না কেন?
দশ মিনিট আগে
তারা থানা থেকে বেরিয়েছে। পাঁচটা মোড় পরই থানা কিন্তু তাদের এখনো কোনো পাত্তা নেই।
তারা থাকলে এই ভিড়কে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত এবং একটা জাতীয় বিপর্যয় আঁটকাতে
পারত।
তারা কোথায় ছিল?
তারপর তিনশ
হাইস্কুলের ছাত্র এসে গেল এবং একটা কাগজের নৌকার মতো এই ব্যাপক আবর্ত তাদের টেনে
নিল।
কয়েক মুহূর্তের
মধ্যে রাস্তার উপর শুরু হলো যৌনতা আর একটা বাচ্চার জন্ম হলো। কয়েক দিন পর ওই
বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ইউনাটেড স্টেটসের প্রেসিডেন্টের ছবি ছাপা হবে। তিনি বাচ্চাটা
কোলে নিয়ে বলবেন এ ভবিষ্যতের প্রতীক যা দেশকে আবার একত্র করবে।
বাচ্চাটা একটা
ছেলে। তার নাম ঠিক হয়েছিল র্যালফ। যার প্রতিকৃতি থাকার কথা একটা স্মারক ডাক
টিকিটে। দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে বাচ্চাটির মায়ের এবং তার সদ্য জন্মানো বাচ্চার পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছিল না এই উন্মাদ বন্য
জন্তুর মতো জনতার ভেতর। মা’টি রাস্তায় শুয়ে
চিৎকার করছিল পাগলের মতো। হাতজড়ো করে অনুরোধ করছিল তার বাচ্চাটাকে লোকে যেন মাড়িয়ে
না দেয়। জনতা সেই অনুরোধ রেখে বাচ্চাটার বদলে তার শরীর মাড়িয়ে দিচ্ছিল। রাস্তায়
পড়ে থাকা বুড়োকে হাজার হাজার পা মাড়িয়ে মাড়িয়ে বার্গার বানিয়ে ফেলেছিল ইতিমধ্যে।
কয়েক দিন পর যখন
মৃতদেহগুলো কবর দেওয়ার জন্য সরানো হবে তখন বুড়োর মৃতদেহ দেখে আর চেনবার উপায় থাকবে
না। সে যখন রাতে খাওয়ার জন্য পিঠে কিনতে ডাউন টাউন গেছিল তখন ভুলে গেছিল সঙ্গে
পরিচয়পত্র নিতে। সে শুধু একটা পিঠে কেনার জন্য কিছু টাকা সঙ্গে নিয়েছিল। তাকে কবর দেওয়া
হলো একটি গণকবরে অন্যান্য আরো ২২৫ জন হতভাগ্যের সাথে যাদের চেনা যায়নি আর যাদের সঙ্গে কোনো পরিচয়পত্র
ছিল না।
দিন কয়েক পরেই
প্রেসিডেন্টের ছবি দেখা যাবে। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন সদ্য কবর দেওয়া মানুষগুলোর পাশে। পরে
সেখানে একটা সুন্দর মনুমেন্ট বানানো হবে। আর ওই গণকবর আর মনুমেন্টের ছবির
পোস্টকার্ড বাজারে পাওয়া যাবে আর সেটা খুব জনপ্রিয় হবে।
আমেরিকার একজন
বিখ্যাত ভাস্করকে নিয়োগ করা হবে এই মনুমেন্টের অলঙ্করণের জন্য।
কিন্তু আমরা
গল্পটার একটু বেশি আগে চলে গেছি।
ফিরে যাওয়া যাক
প্রাথমিক অবস্থায়।
পুলিশ কোথায় ছিল?