Sunday, October 1, 2023

  সোমব্রেরো ফল আউট


রিচার্ড ব্রটিগান


দাঙ্গা

 

এদিকে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে-

আমি তোমাদের মেয়র! আমাকে কিছুতো সম্মান দেখাও! আমি আদেশ দিচ্ছি তোমরা কান্না থামাও! আমি কিন্তু পুলিশ ডাকব!

মেয়র লোক দুটোর উপর চেঁচায়। সে তার  ধৈর্য্যের শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছে। শান্তভাবে আর ব্যাপারটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ভিড় আরো বেড়েছে আর মেয়রের মাথার স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে।

পুলিশ! পুলিশ! পুলিশ! সে চেঁচায়, যদিও কাঁদতে থাকা একটা লোক তার নিজের পিসতুত ভাই। মেয়র গেছে গিয়া। সে পাগলে যাচ্ছে।

পুলিশ অবশ্যই আসছে। যে মুহূর্তে মেয়র পাগল হয়ে গেল তখনই কেউ একটা তাদের ফোন করেছে। আর বলেছে মেন স্ট্রিটে দাঙ্গা বেধে গেছে।

‘প্রচুর কাঁদানে গ্যাস নিয়ে আসুন’! টেলিফোনে বলেছে লোকটা। লোকটা কিছুটা হিস্টিরিয়া গ্রস্ত বলে পুলিশ বুঝতে পারছিল না কী ভাবা ঠিক, তবু তারা আসছে।

দুটো লোক কাঁদছে, মেয়র চেঁচাচ্ছে আর সোমব্রেরোটা জাস্ট পড়ে আছে একই অবস্থায়।  ভিড় করা জনতা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। তারা আর ফিসফিস করে কথা বলছে না।

তারা বেশ জোরেই কথা বলা শুরু করেছে। কয়েকজন নিজেদের ভেতর চেঁচিয়ে বলছিল-

‘কী হচ্ছেটা কী?’

‘আমি জানি না’।

‘আমার ভয় করছে’, একজন বয়স্ক চেঁচিয়ে বলল।

‘এতো হাস্যকর’, একটি টিনএজার মেয়ে চেঁচিয়ে বলল।  

‘মেয়রটা পাগল’, একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলা চেঁচিয়ে বলল। কথাগুলো তার মুখ থেকে বেরিয়েছে কি বেরোয়নি কেউ একটা তার মুখে একটা ঘুষি মারল। ঘুষিতে বেশ জোর ছিল। তার ঘায়ে মহিলা রাস্তায় গিয় পড়ল। এক পলকে সে জ্ঞান হারাল।

যে লোকটা ঘুষি মেরেছিল সে প্রতিটা নির্বাচনে মেয়রকে ভোট দিয়েছে তাই তার প্রিয় মেয়রের নামে এমন কথা সে সহ্য করতে না পেরে ছুটে এসে ঘুষি মেরেছে মহিলাকে। তার প্রতিশোধ নেওয়ার আনন্দ অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না কারণ তার চেয়েও একজন বড় চেহারার লোক তাকে এক পালটা ঘুষিতে মাটি ধরিয়ে ছাড়ল। এবং সেও জ্ঞান হারাল।

এখনো কিছু মানুষ আছে যারা সহ্য করতে পারে না এটা যে কেউ একজন মহিলাকে এভাবে মারবে। তারা কেয়ার করে না কী কারণে কেউ এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে। তারা জবাব দিতে পছন্দ করে।  এক্ষেত্রে তার জবাবী ঘুষি এসে পড়ে লোকটার চোয়ালে।  রাস্তায় মহিলার পাশে পড়ে থাকল লোকটা। তারা এতটাই অজ্ঞান হয়েছিলে যে তাদের দেখে মনে হচ্ছিল তাদের সবে মাত্র বিয়ে  হয়েছে আর তাদের চারধারের জনতা যেন এই অদ্ভুত বিয়ের পার্টিতে যোগ দিয়েছে।

সবকিছুই যেন এক চরম অবস্থার দিকে এগোচ্ছে।

লোক দুটো সমানে কেঁদে চলেছে। তারা এত কেঁদেছে যে তারা আর মানুষ নেই। অতটা চোখের জল একটা মানুষের শরীরে থাকা সম্ভব নয়। তাদের পায়ের তলায় যেন আছে এক চোখের জলের ধারা যার বুদবুদ তাদের পা বেয়ে উঠে তাদের কাঁদতে সাহায্য করছে।

মেয়র প্রচন্ড রেগে ক্ষিপ্তের মতো আচরণ করছে।

সে আর লোক দুটোকে চেঁচিয়ে কান্না থামাতে বলছে না বা তাদের পুলিশের ভয়ও দেখাচ্ছে না।

সে এমন সব জিনিস নিয়ে চেঁচাচ্ছে যার কোনো মানে নেই যেমন ১৯৪৭ এ তার যে গাড়ি ছিলা তার লাইসেন্স প্লেটের নাম্বার চেঁচিয়ে আওড়াতে শুরু করল সে।

এ জেড ১৪৯২! এ জেড ১৪৯২! এ জেড  ১৪৯২! সে বার বার চেঁচিয়ে বলে যেতে থাকল। যতবার সে এটা বলছিল ততবার জনতার ভিড় উত্তরোত্তর উত্তেজিত হচ্ছিল।

ওর লাইসেন্স প্লেটের নাম্বার জনতাকে দাঙ্গার জন্য উস্কাচ্ছিল।  

দুপুর হয়ে গেছিল আর হাইস্কুলের ছাত্ররা দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ছাড়া পেয়েছিল।

হাইস্কুল শহরের প্রধান রাস্তায় তিনটে মোড় দূরে। ছাত্ররা দ্রুত এই ঝামেলার দিকে এগিয়ে আসছিল।

এ জেড ১৪৯২! মেয়র চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আওড়ে চলল। এ জেড ১৪৯২!

এখন আধ ডজন মারপিট চলছে ভিড়ের ভেতর। ভিড় আরো বেড়ে গেছে। প্রতি মিনিটে আরো লোক এসে জুটছে সেখানে। মেয়রের নাম্বার প্লেটের আওড়ানো চিৎকারে প্রভাবিত হয়ে তারা অন্য লোকজনকে ধাক্কা মেরে নিজেরাও চেঁচামেচি শুরু করেছে নানান জিনিস নিয়ে।

‘আমি তোমাকে ঘেন্না করি’, একজন সত্তর বছরের মহিলা একটি অচেনা লোককে দেখে চেঁচায়। যাকে সে জীবনে কখনো দেখেনি।  তারপর সে বুড়ো লোকটা্র বিচিতে এক গুঁতো  মারে। একটা পাথরের মতো রাস্তায় পড়ে যায় বুড়োটা। এই অবস্থাতেও কোনরকমে, বেকারি  থেকে সদ্য কেনা একটা লেবুর ক্রিমের পিঠে ঠোঙা থেকে বার করে ঠুঁসে দেয় বুড়ির হাঁটুতে।

‘নোংরা কোথাকার’, বুড়ি চেঁচিয়ে ওঠে। বুড়ো শুয়ে শুয়েই পিঠেটা ঠুসতে থাকে বুড়ির হাঁটুতে। বুড়ির হাঁটু অদ্ভুত লাগে দেখতে।  ডিমের সাদা আর হলুদ পুরে ভরে যায় বুড়ির হাঁটু আর তা তার পা বেয়ে গড়িয়ে যায় তার জুতোর উপর।

পুলিশ কোথায়?

এসব থামাতে তারা আসছে না কেন?

দশ মিনিট আগে তারা থানা থেকে বেরিয়েছে। পাঁচটা মোড় পরই থানা কিন্তু তাদের এখনো কোনো পাত্তা নেই। তারা থাকলে এই ভিড়কে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত এবং একটা জাতীয় বিপর্যয় আঁটকাতে পারত।

তারা কোথায় ছিল?

তারপর তিনশ হাইস্কুলের ছাত্র এসে গেল এবং একটা কাগজের নৌকার মতো এই ব্যাপক আবর্ত তাদের টেনে নিল।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যে রাস্তার উপর শুরু হলো যৌনতা আর একটা বাচ্চার জন্ম হলো। কয়েক দিন পর ওই বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ইউনাটেড স্টেটসের প্রেসিডেন্টের ছবি ছাপা হবে। তিনি বাচ্চাটা কোলে নিয়ে বলবেন এ ভবিষ্যতের প্রতীক যা দেশকে আবার একত্র করবে।

বাচ্চাটা একটা ছেলে। তার নাম ঠিক হয়েছিল র‍্যালফ। যার প্রতিকৃতি থাকার কথা একটা স্মারক ডাক টিকিটে। দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে বাচ্চাটির মায়ের এবং তার সদ্য জন্মানো  বাচ্চার পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছিল না এই উন্মাদ বন্য জন্তুর মতো জনতার ভেতর।  মা’টি রাস্তায় শুয়ে চিৎকার করছিল পাগলের মতো। হাতজড়ো করে অনুরোধ করছিল তার বাচ্চাটাকে লোকে যেন মাড়িয়ে না দেয়। জনতা সেই অনুরোধ রেখে বাচ্চাটার বদলে তার শরীর মাড়িয়ে দিচ্ছিল। রাস্তায় পড়ে থাকা বুড়োকে হাজার হাজার পা মাড়িয়ে মাড়িয়ে বার্গার বানিয়ে ফেলেছিল ইতিমধ্যে।

কয়েক দিন পর যখন মৃতদেহগুলো কবর দেওয়ার জন্য সরানো হবে তখন বুড়োর মৃতদেহ দেখে আর চেনবার উপায় থাকবে না। সে যখন রাতে খাওয়ার জন্য পিঠে কিনতে ডাউন টাউন গেছিল তখন ভুলে গেছিল সঙ্গে পরিচয়পত্র নিতে। সে শুধু একটা পিঠে কেনার জন্য কিছু টাকা সঙ্গে নিয়েছিল। তাকে কবর দেওয়া হলো একটি গণকবরে অন্যান্য আরো ২২৫ জন হতভাগ্যের সাথে  যাদের চেনা যায়নি আর যাদের সঙ্গে কোনো পরিচয়পত্র ছিল না।

দিন কয়েক পরেই প্রেসিডেন্টের ছবি দেখা যাবে। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন সদ্য কবর দেওয়া মানুষগুলোর পাশে। পরে সেখানে একটা সুন্দর মনুমেন্ট বানানো হবে। আর ওই গণকবর আর মনুমেন্টের ছবির পোস্টকার্ড বাজারে পাওয়া যাবে আর সেটা খুব জনপ্রিয় হবে।

আমেরিকার একজন বিখ্যাত ভাস্করকে নিয়োগ করা হবে এই মনুমেন্টের অলঙ্করণের জন্য।

কিন্তু আমরা গল্পটার একটু বেশি আগে চলে গেছি।

ফিরে যাওয়া যাক প্রাথমিক অবস্থায়।

পুলিশ কোথায় ছিল?


Saturday, September 30, 2023

  সোমব্রেরো ফল আউট


রিচার্ড ব্রটিগান


সিয়াটেল

 

ছেলেটির সাথে ইউকিকোর এই দু বছরের প্রেমের সময় সে প্রায়ই রাতের এই সময়টা কাটিয়েছে ছেলেটির সঙ্গে। দশটা নাগাদ তার কাজ শেষ হওয়ার পর সে সোজা চলে আসত ছেলেটির অ্যাপার্টমেন্টে। আর তার সাথে রাত কাটাত।

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত লোকজনের সাথে আট ঘন্টা কাটিয়ে সে যেত ছালেটির কাছে। কোনো রুগীর সুইসাইডের চেষ্টা, কারো নার্ভাসব্রেকডাউন, কেউ স্রেফ  পাগল ইত্যাদিদের দেখতে হতো, তারপর তাকে ভাগ করে নিতে হতো ছেলেটার নানান কিসিমের মানসিক চাপ।  

মজার ব্যাপার হলো সে ছেলেটিকে কখনোই তার রুগীদের মতো ভাবেনি। তাকে ভেবেছে এক অন্য রকমের মানুষ। আর এছাড়াও সে তো তার প্রেমে পড়ে আছে তাই ছেলেটির রোলার কোস্টার মানসিকতা নিয়ে সে কিছু সিদ্ধান্তে আসেনি।

ছেলেটির সাথে দেখা হওয়ার অল্প দিন পরেই সে ফিরে পড়েছে তার লেখা সমস্ত বইগুলো আরেকবার এটা দেখতে যে তার সব সঠিকভাবে মনে আছে কিনা। ছেলেটির সাথে দেখা হওয়ার আগে যখন সে বইগুলো পড়েছিল তখন তার মনে হয়েছিল সে বইগুলো লিখেছে নিজেকে নিয়ে। বইয়ের মূল চরিত্র আসলে সে নিজেই।  

আবার বইগুলো ফিরে পড়তে গিয়ে সে বুঝল ছেলেটির ব্যক্তি বৈশিষ্টয়ের ছায়া খুব কমই প্রতিফলিত হয়েছে বইগুলোয়। সে ভেবেছে ছেলেটি কীকরে নিজের ব্যক্তি বৈশিষ্টকে এভাবে লুকিয়ে রাখতে পারল তার পাঠকের কাছে? এতো প্রায় জিনিয়াসের কাজ। ছেলেটি এতটাই জটিল যে একটা গোলকধাঁধাকে সে একটা সরল রেখায় পরিণত করতে পারে। প্রথম প্রথম মেয়েটির মেধার কাছে এটা ছিল আকর্ষণের বিষয়। কিন্তু যখন এটা নিয়ে সে বিরক্ত হতে শুরু করল তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। ছেলেটির প্রেমে পড়েছিল সে আর যত ব্যাপারটা খারাপের দিকে এগোল সে আরো বেশি ভালোবাসতে থাকল ছেলেটিকে।

মেয়েটি যদিও মর্ষকামী ছিল না।

তবু এভাবেই চলল ব্যাপারটা।

যে মাসে তারা আর দেখা করছিল না একে অপরের সাথে সে মাসে অনেক কিছু সে ঠিকঠাক বুঝতে পারছিল। মেয়েটি ভাবতে লাগল কেন সে সমানে ছেলেটির সাথে সময় কাটিয়ে গেছে, মাথার ভেতর জমে থাকা ময়লাগুলো সরাতে সরাতে সে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারল অবশেষে। নিজের রুগীদের প্রতি যত সহজে সে সিন্ধান্ত নিতে পারে তা সে পারেনি ছেলেটির ক্ষেত্রে কারণ সে ভালোবাসত তাকে।  

যেসব ভাবনা সে ভেবেছিল তার কিছুটা এরকম-

১। ছেলেটির সাথে কখনোই নীরস মুহূর্ত কাটেনি তার, এমনকি চেলেটি যখন বদ্ধ উন্মাদের মতো আচরণ করছে তখনো। তার রুগীদের রঙ্গ তাকে বোর করত কারণ তারা কী করবে তা অনুমান করা যেত। কিন্তু ছেলেটির সমস্যাগুলো ছিল তুলনাহীন, একক। আর ছিল নতুন নতুন নিয়ন্ত্রণহীন ইচ্ছে তৈরির অসাধারণ ক্ষমতা।

২। অনেক সময় তাকে খুশী করার জন্য ছেলেটি ছোট ছোটো ব্যাপারেও নজর দিতো।

৩। সব থেকে জরুরী হচ্ছে ছেলেটির তাকে বিছানায় আনন্দ দেওয়ার ক্ষমতা। সে ব্যাপারে সে ছিল তুখোড়। তার এই ক্ষমতা যদি ৫০ ভাগও কম হতো তাহলে ছেলেটিকে সে আগেই ছেড়ে দিতে পারত। তাদের সম্পর্ক কয়েক মাসের বেশি টিকত না।  

দুটো বছর অনেকটা সময়।

তার অনেক কিছু ভাবার কথা কিন্তু এখন সে ঘুমোচ্ছে আর তার মন অন্য কিছু করছে। স্বপ্ন দেখছে জাপানের।

ইউকিকো জন্মেছিল টোকিয়োয় কিন্তু যখন তার ছ মাস বয়স তার বাবা মা চলে আসে আমেরিকায়। তার বাবা ছিলেন একজন কূটনৈতিক দূত। সে বড় হয়ে ওঠে  আমেরিকায়। দু বছরে একবার জাপানে যেত তারা। তার বাবা মা তাকে ইংরেজি জাপানি দুটোই শিখিয়েছিলেন কিন্তু যেহেতু সে বড় হয়েছে সিয়াটেল, ওয়াশিংটনে জাপানি ভাষা হয়ে যায় তার সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ।

যখন সে চোদ্দতে পা দিয়েছে তার মা ব্যভিচারিণী হয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলে সিয়াটেলের বোইং বিমান প্লান্টের একজন উচ্চ পদাধিকারী অফিসারের সাথে। তার বাবা ব্যাপারটা জানতে পেরে নিজের অফিসে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার বাবা ছিলেন ইম্পেরিয়াল আর্মির একজন অফিসার এবং একজন মাননীয় ব্যক্তি। চিঠি খোলার একটা ছুরি দিয়ে তিনি হারাকিরি করেন।

মিডিয়া ঘটনাটাকে অনেকটা জায়গা দিয়েছিল। লাইফ ম্যাগাজিনে এটা নিয়ে একটা আর্টিকেলও প্রকাশিত হয় এবং এগারোটার খবরেও এটা ছিল।

সমস্ত নেটওয়ার্কেরই কিছু না কিছু বক্তব্য ছিল।

তার বাবার দেহ দাহ করা হয় তারপর জাহাজে করে সেই ছাই জাপানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বোইং-এর অফিসার তার বাইশ বছর বিবাহিত জীবনের স্ত্রীকে ছেড়ে ইউকিকোর মাকে বিয়ে করে আর ইউকিকো ওদের সাথে থাকতে শুরু করে।

সিয়াটেলে এই কলঙ্কের কথায় সাড়া পড়ে যায় কারণ অফিসারটির রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল এবং তাকে তা নিয়ে প্রচুর উৎসাহ দেওয়া হচ্ছিল।

ইউকিকো তার সৎ বাবাকে বেশি পাত্তা দেয়নি, কিন্তু যতক্ষণ না সে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হলো সে ওদের সঙ্গে একই বাড়িতে ছিল। সে তার মাকে খুব ভালোবাসত তাই তার সৎ বাবা বুঝতেই পারেনি যে ইউকিকো তাকে পছন্দ করে না। এমনকি সৎ বাবার দেওয়া ডাক নাম ‘চিনে পুতুল’ ইউকিকো সহ্য করেছে দিনের পর দিন।  

সে তার মোনরোগের স্নাতক স্তরের কাজ শেষ করেছে ইউসিএলএ-তে তারপর সানফ্রানসিস্কোতে চলে গেছে যেখানে সে ইন্টার্নশিপ করে এখন কাজ করছে রাতের শিফটে স্থানীয় এক হাসপাতালের এমারজেন্সিতে।

ইউকিকো জাপানে ন বার গেছে, অল্প কদিন থেকেওছে। এখন সে স্বপ্ন দেখছে কিয়োটোতে শরৎ কালের বৃষ্টির। কিয়োটো তার প্রিয় শহর।

সে ইচ্ছে করেই তার ছাতা ফেলে এসেছে তার মাসির বাড়ি আর তার মুখ আর চুলে বৃষ্টির ছোঁয়া তার ভালো লাগছে।

সে যাচ্ছিল গোরস্থানে যেখানে তার বাবার দেহের ছাই কবর দেওয়া হয়েছে। এমনিতে ওখানে গেলে তার মন খারাপ হয় কিন্তু আজ তা হয়নি। বৃষ্টি তাকে খুশী করেছে।

সে জানে বাবা ব্যাপারটা বুঝবে।


Thursday, September 28, 2023

  সোমব্রেরো ফল আউট


রিচার্ড ব্রটিগান


অ্যাভোকাডো

 

অবশেষে টুনা মাছের স্যান্ডউইচের কল্পনা তার মাথা থেকে চলে হয়ে গেল আর সে ভাবতে  পারল অন্য কিছু খাওয়ার কথা। ইতিমধ্যে তার খুব খিদে পেয়ে গেছিল। দ্রুত কিছু একটা খাওয়া দরকার।

টুনা মাছের স্যান্ডউইচ খাওয়ার জন্য অসহায়তাটা এখন গেছে মাথা থেকে আর সে ভাবতে পারছে অন্য সব পুষ্টিকর খাবারের কথা। একটা কিছু আছে নিশ্চয়ই যেটা সে খেতে পারে।

বার্গার বাদ আর টুনা মাছের স্যান্ডউইচও সে খাবে না।

এগুলো বাদ দিলে হাজারও খাবার আছে খাওয়ার জন্য, তার কয়েকটা নিয়ে সে ভাবতে শুরু করে সে।

তার স্যুপ চাই না।

রান্নাঘরে ক্যান ভরতি মাশরুম স্যুপ আছে কিন্তু সেটা সে খাবে না।

কোনো কারণেই নয়।

সে ভাবল একটা অ্যাভোকাডোর কথা।

ওটা বেশ হবে।

আমি একটা অ্যাভোকাডো খাব।

সে মনে মনে এক কামড় অ্যাভোকাডো খেল লেবুর রস দিয়ে, বেশ লাগল তার। হ্যাঁ  অ্যাভোকাডো খাওয়াই সঠিক সিন্ধান্ত। তারপর তার মনে পড়ল তার ঘরে অ্যাভোকাডো নেই আর কাছাকাছি সব দোকানপাট বন্ধ। অনেক রাত হয়ে গেছে।

মাস খানেক আগে যেদিন জাপানি মেয়েটা তাকে বলেছিল সে আর তার সাথে দেখা করতে চায় না সেদিন সে একটা অ্যাভোকাডো কিনেছিল। সে মানসিক ভাবে এতটাই ভেঙ্গে পড়েছিল যে ওটাকে উপেক্ষা করেছিল আর রান্নাঘরের জানালার তাকে ওটা পড়ে থেকে ওটা পচে গেছিল। শেষে ফেলে দিতে হয়েছিল অ্যাভোকাডোটা।  

ওই অ্যাভোকাডোটা এখন থাকলে ভালো হতো, সে ভাবল।

ওর উপর খানিকটা লেবুর রস দিয়ে খেলে খিদেটা মিটত। তারপর সে অন্যকিছু নিয়ে ভাবতে পারবে। সে ফিরে যেতে পারে তাকে ছেড়ে যাওয়া জাপানি মেয়েটার প্রতি তার প্রেমের ভাবনাটায় বা ফালতু কোনো বিষয় নিয়ে আকাশ পাতাল চিন্তা করতে পারে।  উদ্দ্বেগ করার জন্য বিষয়ের অভাব তার কখনো হয়নি। ওই চিন্তাগুল তার পিছু নিয়েছে কয়েক লক্ষ প্রশিক্ষিত সাদা ইঁদুরের মতো আর সে তাদের শিক্ষক। সে যদি তার সমস্ত ইদ্বেগকে গান গাইতে শেখাতে পারত তাহলে মোরমন টাবেরনাকেল কয়্যারকে শুনতে লাগত ঠিক আলুর মতো।

হয়ত খানিকটা ঝুরো ডিম ভাজা, সে ভাবল। যদিও সে জানত বাড়িতে কোনো ডিম নেই  আর কোনো রেস্তরাঁয় যাওয়ার ইচ্ছে তার নেই।  

হ্যাঁ, কয়েকটা ডিম হলে ভালো হয়।

হালকা আর ফুলো ফুলো।

একদম ওটাই।

ডিম।

 

 


Wednesday, September 27, 2023

  সোমব্রেরো ফল আউট


রিচার্ড ব্রটিগান


ভিড়

 

এতক্ষণে একটা ছোট ভিড় জমে গেছে মেয়র, কাঁদতে থাকা দুটো লোক আর সোমব্রেরো  ঘিরে। কী ঘটছে জানতে তারা উৎসুক, কিন্তু তারা মেয়র, কাঁদতে থাকা দুটো লোক আর সোমব্রেরো ঘিরে ভিড় করে চুপ দাঁড়িয়ে থাকে।

ভিড় করে থাকা লোকজন কথা বলে না বিশেষ। মাঝে মাঝে দু একটা ফিসফিস শোনা  যাচ্ছে অবশ্য। এটা ভাবাই যাবে না যে এরাই পরে লোকাল পুলিশকে বাওয়াল দেবে, ন্যাশানাল গার্ডদের দাঁড় করিয়ে রাখবে লড়াই করে, তারপর ছত্রি বাহিনী, ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার গানশিপের বিরুদ্ধেও লড়ে যাবে। এখন ওদের দেখে এসব কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

মেয়র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল যাতে লোক দুটোর কান্না থামানো যায়, যাতে সে ঘটনার কারণটা বুঝতে পারে কিন্তু লোক দুটো কান্নার ঝর্ণা ধারায় তাদের চিন্তাভাবনা ডুবিয়ে ফেলেছিল এবং তাই না পারছিল কান্না থামাতে না পারছিল কারণ বোঝাতে।

ভিড় করা লোকজন ফিসফিস করে চলেছিল –

ওদের মধ্যে একজন ফিসফিস করে বলল, ‘ওটা কী একটা সোমব্রেরো?’

‘ওটা একটা সোমব্রেরো’, উত্তর এলো ফিসফিস করে।

‘ওটা রাস্তায় পড়ে আছে কেন?’

‘আমি জানি না। আমি এখনই এলাম’।

‘ওটা কারো টুপি?’

‘আমি জানি না’।

‘আমিও না’।

‘আমি জানি তুমি জানো না কারণ তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলে’।

‘সেটা ঠিক কথা। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। আমি দুঃখিত’।

‘এতে দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই’।

‘ধন্যবাদ’।

ভিড়ের অন্যদিকে চলছিল আরো ফিসফিস-

‘ওরা কাঁদছে কেন?’

‘ওটা কি মেয়রের পিসতুত ভাই?’

‘হ্যাঁ’।

‘ও কাঁদছে কেন? আমি আগে ওকে কখনো কাঁদতে দেখিনি। ওতো কোনোদিন ছিঁচকাদুনে ছিল না। আমি তো ওর সাথে হাইস্কুলে পড়েছি। ওতো স্কুলের দৌড়ের টিমে ছিল। ও ১০০ মিটার দৌড়ত ১০.৩ সেকেন্ডে। খুব ভালো দৌড়ত। কখনো কাঁদত না’।

‘চুপ। আমি মেয়র কী বলছে শুনতে চাই’।

‘তখনকার দিনে ১০.৩ খুব ভালো সময়’।

‘সেটা ঠিক আছে কিন্তু আমি মেয়র কী বলছে সেটা শুনতে চাই’।

‘আমি কি খুব বেশি কথা বলছিলাম?’

‘হ্যাঁ’।

মেয়র খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ছিল।

‘কান্না থামাও’, সে চেঁচাল। ‘এখনি কান্না থামাও। শুনতে পাচ্ছো? আমি তোমাদের মেয়ের। আমি আদেশ করছি তোমরা কান্না বন্ধ করো!’

মেয়রের চ্যাঁচামিচিতে তাদের কান্না বাড়ল চাই কমল না।

ফিসফিস কথাবার্তা চলতেই থাকল-

‘মেয়র ওরকম চেঁচাচ্ছে কেন? আগে তো এরকম চেঁচাতে শুনিনি’।

‘আমি জানি না। আমি তো ভোট দিয়েছিলাম অন্য ক্যান্ডিডেটকে। তুমি কি মেয়রকে ভোট দিয়েছিলে?’

‘হ্যা, আমি ওকেই ভোট দিয়েছিলাম’।  

‘তাহলে আর আমাকে জিজ্ঞাসা কোরো না ও কেন চেঁচাচ্ছে। তুমি ওকে ভোট দিয়েছিলে’।

দুজন ভদ্রমহিলা ফিসফিস করতে শুরু করল-

‘কী জঘন্য ব্যাপার’।

‘কোনটা জঘন্য ব্যাপার?’

‘এটা’।

‘ওহ’।

বাচ্চারাও ফিসফিস করছে-

‘এই লোকগুলো কাঁদছে’।

‘হ্যাঁ, আমাদের থকেও ওরা খারাপ আছে’।

‘আমি এরকম করে কাঁদলে আমাকে আমার ঘরে যেতে হতো’।

বুড়োবুড়িরা ফিসফিস করছিল-

‘আমাদের সোশ্যাল সিকিউরিটির টাকা নাকি বাড়বে এ নিয়ে তুমি শুনেছ কিছু?’

না, কিছু শুনিনি তো’।

‘৪.১ পারসেন্ট এই নভেম্বর থেকেই বাড়বে যদি কংগ্রেস অনুমোদন করে’।  

‘আর যদি সেটা ওরা না করে?’

‘কী?’

‘আমি বলছি যদি ওটা কংগ্রেস অনুমোদন না করে?’

দুজন গৃহিনী ফিসফিস করছিল-

‘আমার পিরিয়ডের সময় আট দিন হলো পার হয়ে গেছে’।

‘কী মনে হয় তুমি আবার প্রেগনেন্ট?’

‘আশা করি তা নয়। তিনটে বাচ্চা যথেষ্ট’।

‘আমার মনে পড়ছে তোমার কথা এক ডজন বাচ্চা চাইতে তুমি’।

‘তখন আমার মাথা পাগলে গেছিল’।

ফিসফিস কথাবার্তা বাড়তে থাকল ক্রমে।

ভিড় বাড়ছিল আরো।

ফিসফিস হঠাৎ মনে হলো যেন মৌচাকে  মৌমাছির ভনভন।

ওরা পায়ে পায়ে এগোচ্ছিল রাস্তা ধরে যা শেষ হবে ফেডারেল সৈন্যদের সাথে  যুদ্ধংদেহী মনোভাবে। আর তাদের ছোট্ট শহর বিশ্বের নজরে চলে আসবে।

আর বেশি দেরী নেই।

কয়েক ঘন্টার ভেতর মেশিন গান আর কামানের শব্দের সাথে পরিচয় ঘটবে তাদের আর সারা বিশ্ব চেয়ে দেখবে।  

কয়েকদিনের ভেতরেই ইউনাটেড স্টেটসের  প্রেসিডেন্ট আসবেন সেখানে ক্ষয় ক্ষতি জরিপ করতে আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সান্ত্বনা  দিতে আর মিটমাট করাতে।  

সেই বিখ্যাত বক্তৃতাটাও তিনি দেবেন যা মনে করা হবে লিঙ্কনের গেটিসবার্গ বক্তৃতার মতো। কয়েক বছরের ভেতরেই স্কুল ছাত্রদের পাঠ্য বইয়ে যা জায়গা করে নেবে।  

মৃতদের সম্মানে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হবে আর যারা বেঁচে আছে তাদের জাতীয় ঐক্যের জন্য আবার নতুন করে প্রতিশ্রুতির পাঠ পড়ানো হবে।  


Tuesday, September 26, 2023

  সোমব্রেরো ফল আউট


রিচার্ড ব্রটিগান


টুনা

 

হ্যাম-বার্গার খাওয়ার সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলার পর সে ভাবে টুনা মাছের স্যান্ডউইচ খাবে কিন্তু সেটাও খুব ভালো কথা নয়। কারণ  সবসময় টুনা মাছের স্যান্ডউইচ খাওয়ার ভাবনা থেকে সে নিজেকে দূরে রেখেছে। গত তিন বছর সে টুনা মাছের স্যান্ডউইচের ভাবনা ভাবতে চায়নি। চেষ্টা করেছে না  ভাবার। যখনই সে টুনা মাছের স্যান্ডউইচের কথা ভাবে তার বাজে লাগে আর এখন এত চেষ্টা করার পরও সে ভাবছে টুনা মাছের স্যান্ডউইচের কথা।

একটা বড়কা টুনা মাছের স্যান্ডউইচ সাদা পাঁউরুটিতে, ভেজা ভেজা, মেয়নিস প্রায় টপ টপ করে পড়ে যাওয়ার জোগাড়, যেভাবে সে সেটাকে খেতে ভালোবাসে, তার ভাবনা অধিকার করে আছে আর এমন অবস্থায় যা হয় চিরকাল তার খারাপ লাগতে থাকে।

সে তার মাথা থেকে টুনা মাছের স্যান্ডউইচের ভাবনাটাকে তাড়াতে চাইল কিন্তু সেটা পণ করেছে কিছুতেই যাবে না। ইথোপিয়ার যুদ্ধ জাহাজে জড়িয়ে থাকা খুদে সমদ্রের পাণীর মতো তা আঁকড়ে থাকল। টুনা মাছের স্যান্ডউইচ নড়ল না একটুও। সে আরেকবার চেষ্টা করল টুনা মাছের স্যান্ডউইচের ভাবনাটাকে মাথা থেকে সরাতে কিন্তু সেটা সরল না।

তার বাজে লাগাটা পরিণত হলো অসহায়তায়।

তাকে বসে পড়তেই হলো।

এসবের কারণ হলো সে টুনা মাছ খেতে ভালোবাসত আর গত তিন বছর সে টুনা খায়নি। সপ্তাহে গোটা পাঁচেক টুনা মাছের স্যান্ডউইচ খেত অথচ এখন সে অনেক বছর হলো খায়নি। টুনা মাছের স্যান্ডউইচ ছাড়া জীবন বড় শূণ্য লাগে তার।

অনেক সময় নিজের অজান্তে সুপারমার্কেটে সে টুনা মাছের ক্যান তুলে নিয়েছে হাতে। পরে টের পেয়েছে সেটা। ক্যানের গায়ের লেখাটার অর্ধেক পড়া হয়ে যাওয়ার পর অনেক সময় টের পেয়েছে সে কী করছে। তারপর এমন চমকে উঠেছে যে মনে হবে চার্চে পানু পড়তে গিয়ে ধরা পড়েছে সে, তারপর দ্রুত ক্যানটা সেলফে নামিয়ে রেখে হাঁটা মেরেছে এমন ভাবে যেন সেটা সে ছুঁয়েও দেখেনি।  

আমেরিকান কৌতুক কাহিনী রচয়িতার এই টুনা মাছের ব্যাপারে এই ঝামেলার কী কারণ? উত্তরটা খুব সোজা, ভয়। সে এটাকে ভয় পায়। তার বয়স ৩৮, সে ভয় পায় টুনা মাছকে। ব্যাপারটা এতটাই সরল। ভয়ের কারণ হলো পারদ।

ওরা যখন কয়েক বছর আগে বার করল যে টুনা মাছে যতটা পারদ থাকার কথা তার থেকে বেশি থাকে, সে টুনা মাছ খাওয়া বন্ধ করে দিলো কারণ তার ধারনা হলো সেটা তার মস্তিষ্কে গিয়ে জমা হতে থাকবে আর  তার চিন্তা ভাবনায় প্রভাব ফেলবে এবং তার লেখালিখিও প্রভাবিত হবে।

সে ভাবল তার লেখা পালটে গিয়ে অপরিচিত হয়ে উঠব, কেউ আর তার বই কিনবে না কারণ পারদ তাদের নষ্ট করেছে আর টুনা মাছে খেলে সে পাগল হয়ে যাবে। তাই সে টুনা মাছ খাওয়া বন্ধ করেছে।

টুনা মাছের স্যান্ডউইচ না খাওয়ার তার এই সিদ্ধান্ত মেনে চলা তার কাছে ছিল খুবই কঠিন আর একটা বড় আঘাতের মতো। তবু তা দুঃস্বপ্নের কারণ হতো।

সে এমনকি একবার তার ডাক্তারের কাছে গেছিল এবং জিজ্ঞাসা করেছিল টুনা মাছে খুব বেশি পরিমান পারদ আছে কিনা যা তার ক্ষতি করতে পারে। ‘না, না আপনি চাইলে টুনা মাছ খেতে পারেন’,  তার ডাক্তার উত্তর দিয়েছিল। কিন্তু তবু সে টুনা মাছ খায়নি। তার ডাক্তারের উপদেশ মানতেও সে ভয় পেয়েছিল।

সে সত্যই টুনা মাছে খেতে খুব ভালোবাসত কিন্তু তার থেকে বেশি ভালোবাসত তার নিজের লেখালিখি। তাই সে টুনা মাছের  স্যান্ডউইচের কথা আর ভাবতে চাইছিল না, কিন্তু মানুষ বলেই মাঝে মাঝে তার পদস্খলন হতো যা এখনি ঘটেছে আর তার জন্য তাকে দাম মেটাতে হচ্ছে।

কোচে বসে তার হাত কাঁপছিল টূনা মাছ খাওয়ার আকর্ষণ আরে ভয়ের টানাপোড়েনে।

মাইলখানেক দূরে সানফ্রানসিস্কোতে ঘুমন্ত জাপানি মেয়েটার জন্য গভীর সহানুভূতিই শুধু থাকতে পারে আমাদের। গত দু বছর ধরে এরকম পাগলামো সে সহ্য করেছে কখনো কখনো এর থেকেও এতটা বেশি যে এটা কে তখন মনে হবে ছেলেখেলা। সে দেখেছে ছেলেটির কখনো না শেষ হওয়া ঘোর আর ব্যক্তিত্বের অস্পষ্টতা।

মেয়েটি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। লোকাল হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে সে কাজ করে। রাতের বেলা যে সব পাগলদের সামলাতে হয় তাকে তারা ছেলেটির তুলনায় খবই সাধারণ জটিলতাহীন লোকজন।