দা ডাই হার্ড সাক্ষাৎকার
পৃথিবীর নানান লেখক, কবি,
প্রকাশকদের সঙ্গে কথাবার্তা
শনিবার, ১লা জানুয়ারি, ২০১১
শুভঙ্কর দাশ, একটা স্বাধীন
পথ
শুভঙ্কর দাশ হলেন একজন
লেখক, প্রকাশক, ফিল্ম প্রজোজক। থাকেন কোলকাতায়, ভারতে। তার প্রকাশিত বাংলা কবিতার
বইয়ের সংখ্যা ১৪ যদিও তার সদ্য প্রকাশিত বই The Streets, the Bubbles of Grass ইংরেজিতে তার আর্টস
কালেক্টিভ গ্রাফিত্তি কোলকাতা থেকে প্রকাশিত। উনি অ্যালেন
গিন্সবার্গের ক্যাডিস বাংলাতে অনুবাদ করেছেন আর সম্পাদনা করেছেন The stark electric space-এর। এটি একটি আন্তর্তজাতিক পরিক্ষা মূলক লেখালিখির সংকলন।
উনি ৬ টা ছোট ছবি প্রযোজনা করেছেন আর একটা বইয়ের দোকান আছে তার।
ডাই হার্ড – আপনার
ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কিছু বলুন। আপনি কবে কবিতা লিখতে শুরু করলেন?
শুভঙ্কর – বাংলায় একটা
প্রচলিত বাক্য আছে –‘একদা এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল’ – যেটা আমি ফের লিখেছিলাম
এভাবে, বা আমি বলতে চাইব ওটাকে রিমিক্স করেছিলাম এভাবে – ‘একদা এক হাড়ের গলায় বাঘ
ফুটিয়াছিল’ – আর আমি জানিনা কবে কবিতার হাড়ে আঁটকে গেছিলাম। শুধু মনে আছে ৯ বছর
বয়সে একটা কবিতা লিখে পুরষ্কার পেয়েছিলাম আমি, বাংলা ভাষার সাথে হিন্দি শব্দ
মিশিয়ে একটা ছন্দে লেখা কবিতাতে।
আমি জন্মেছিলাম ১৯৬৩ সালে
কোলকাতায়। দু ভাই আর এক বোনের ভেতরে আমি ছিলাম সবার ছোট। আমার
বাবা ছিলেন এক জমিদার সন্তান যাদের প্রচুর জমি জায়গা ছিল মেদিনীপুরে, কোলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে একটা গ্রামে ছিল তাদের
বসত বাড়ি। জমিদারদের সাধারণত থাকত প্রচুর জায়গা জমি আর বন্ডেড লেবারদের প্রতি
তাদের নিষ্ঠুর ব্যবহারের বদনাম।
আমার বাবা বাড়ি ছাড়েন লাভ
ম্যারেজের জন্য প্রভূত বাওয়ালের জন্য আর কোলকাতায় চলে আসেন একজন ছোট ব্যবসাদার
হিশেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তার সঙ্গে ছিল তার বউ আর এক বছরের সন্তান,
আমার দাদা। সাহিত্য নিয়ে আমার বাবা-মায়ের কোনো ধ্যান ধারণা ছিল না, কবিতা তো অনেক
দূরের ব্যাপার। কিন্তু তাদের মিথ, রূপকথা, রূপক কাহিনী আর উপকথার প্রতি ভালোবাসা
ছিল যা আমার কাছে ছিল আশির্বাদ স্বরূপ। আমার ঠাকুমা মুখস্ত বলতে পারতেন ছন্দে বোনা
রামায়ণ আর মহাভারত, যা প্রতিটাই প্রায় হাজার পাতার বেশি। ছোটো বেলার সেই সময়টুকু
এখনো আমার জন্য সব থেকে বেশি সুররিয়াল হয়ে থেকে গেছে।
আমার বাবা-মা চাইতেন আমি
ইঞ্জিনিয়ার হই আর ভুলে যাই আমার জমিদারি রক্তের কথা। তো আমি ইঞ্জিনিয়ার হলাম তারপর
একদিন বিরক্ত হয়ে, যদিও বিরক্ত শব্দটা ততটা ঘৃণা জাগানো শব্দ নয় যা আমি টের
পাচ্ছিলাম এই করপোরেট দুনিয়ার প্রতি, ওই পাউডার মাখা জন্তুগুলো যারা কিছুরই কিছু
জানেনা, ঠাণ্ডি ঘরে বসে যারা বিগ বস-এর অভিনয় করে চলে। আমাকে চিন্তা করতে বারণ করা
হয়েছিল, বলা হয়েছিল অর্ডার মোতাবেক কাজকর্ম করতে। তো মাস ছয়েক পরে আমি ওই চাকরি
ছেড়ে মন দিয়ে কবিতা লিখতে শুরু করি। মাঝে মাঝে ছোটখাটো উলটো পালটা কাজ করেছি,
ইন্সিয়োরেন্সের দালালি থেকে কম্প্রেশারের স্পেয়্যার পার্টস বিক্রি, বা আমার বাবার
দোকানে দোকানদারের কাজ, জাঙ্গিয়া আর বাচ্চাদের জামাকাপড় বিক্রি করা। আমার বাবা
মারা যাওয়ার পর ওটাকে আমি বইয়ের দোকান বানাই যে দোকান আমার এখনো আছে।
আপনি কবে থেকে কবিতা প্রকাশ
করতে শুরু করেন?
প্রথম ছন্দবদ্ধ কবিতাটা
যেটার জন্য আমি পুরষ্কার পাই ছাপা হয়েছিল একটি কমার্শিয়াল কাগজে অন্যান্য কবিতার
সাথে। সেটা ছিল একটা বিশেষ সংখ্যা যেমন এ ধরণের কাগজগুলো করে থাকে। শয়ে শয়ে ঝাঁ
চকচকে রঙিন পাতা যা প্রকাশিত হয় কোনো এক উৎসবের সময়ে যাতে তাদের বিক্রি বেশি হয়।
মাঝে মাঝে এসব কাগজের সাথে আপনি ফ্রি পেতে পারেন ওয়াশিং পাউডারের স্যাসেও।
তো আমার প্রথম কবিতা
প্রকাশিত হয়েছিল এমন এক পাবলিশিং গ্রুপের কমার্শিয়াল পত্রিকায় যাদের আমি পরে ঘৃণা
করতে শিখেছি। যখন দেখেছি তারা কীভবে সৃষ্টিশীল লেখকদের দলদাস বানায়, কীভাবে একজন
ভাল ছোট গল্পকারকে স্পোর্টস জার্নালিস্ট বানায় তারা বা একজন কবিকে চুটকি কলাম
লেখক। বাংলা ভাষায় আমি তাই লিটল ম্যাগাজিনের লেখক থাকতে চেয়েছি যা বিশ্বাস করবে
স্বাধীন পথে, যা লেখকের স্বাধীনতা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে প্রশ্রয় দেবে। ট্র্যাকের
বাইরে, অন্যধরণের লেখা পত্র ছাপা হয় এই ভিন্ন রাস্তায় চলা লিটল ম্যাগাজিনগুলোতে। আমি যেখানে লিখে আরাম পাই।
সাম্প্রতিক উত্তরণের
সম্পাদক ভাবছি্লেন আবার নতুন ভাবে তার লিটল ম্যাগাজিনটা বার করবেন। তিনি আমাকে
অনুরোধ করেন সম্পাদক হিসেবে তার কাগজের সঙ্গে জড়িত হতে। ওই কাগজের সঙ্গে বহু বছর
আমি কাজ করেছি। প্রচুর অনুবাদের কাজ করতে দিয়েছিলেন উনি। ওই সময়ে আমার প্রথম
কবিতার চ্যাপ বই ‘বিকৃত মস্তিষ্কদের গান’ বেরিয়েছিল ওই লিটল ম্যাগাজিনের প্রকাশনা
থেকে।
আপনার প্রিয় কবিরা কারা?
ওদের কাছে থেকে আপনি কী শিখেছেন?
ওঁরা হলেন জীবনানন্দ দাশ,
৩০-এর দশকের একজন বাঙালি কবি, আর অ্যালেন গিন্সবার্গ, আমেরিকার বিট কবি। জীবনানন্দ
দাশ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক কবি, যার কবিতা এখনো শরীরের ভেতর কাজ করে,
সাইকোসোম্যাটিক্যালি, গায়েগতরে, বুদ্ধি আর আর চালাকি সরিয়ে রেখে। ‘শুধু মাথার গুরুত্ব দিও না – বুদ্ধি আর চালাকির উপর নির্ভর কোরো না শুধু’। - সুভাষ ঘোষ, ৬০
দশকের একজন হাংরি গদ্যকার একথা আমাদের বার বার বলতেন। ‘যখন শরীর সাইকোসোম্যাটিক্যালি
রিয়্যাক্ট করে, তোমার ভাব প্রকাশের অস্ত্র, কাজ করে ঠিকঠাক’। আমি এটা অনুভব করেছি
জীবনানন্দের কাজে। আমি শব্দের বিপন্নতা শিখেছি তাঁর কাছে। চাঁদের অন্ধকার দিক।
কতটা জরুরি একটা কমা বা দাড়ির।
গিন্সবার্গ আমাকে শিখিয়েছেন
বাস্তব জীবনের কথ্য শব্দের ব্যবহারিক রূপ, কীভাবে লোকাল গ্লোবাল হয়ে ওঠে। ওই
অপ্রয়োজনীয় অলঙ্কার কীভাবে খুলে দিতে হয় যাতে ভাষা স্মৃতিতে জাগিয়ে তোলে গদ্যের
রূপ। আমার এখনো মনে আছে তাঁর ওই কথা যা কিছুটা এরকম, -‘আমার কবিতায় বাক্য কতটা
লম্বা হবে তা নির্ভর করে পাতাটা কতটা বড় তার উপর’। এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ যে তাঁর
ভারত ভ্রমণের পর গিসবার্গের কবিতার লাইন নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ভারতীয় মন্ত্র আর
প্রাণায়ামের নিঃশ্বাস নেওয়া আর ছাড়ার পদ্ধতির উপর। পরের দিকে তাঁর ভালো আর খারাপ
অনুরননের উপর বিশ্বাসও এই প্রাচ্যের মন্ত্রের প্রভাবে ঘটেছিল। উত্তর আধুনিকতায়
লোকালকে গ্লোবাল ভাবার এই চিন্তা আমাকে তাঁর লেখালিখির উপর অনেক বেশি আকর্ষিত করে।
আমি গিন্সবার্গের ক্যাডিস বাংলায় অনুবাদও করেছি।
কিছুদিন
আগেই যে সংকলন আপনি বের করেছেন, the stark electric space… সেখানে হাংরিদের দিকে আরেকবার
ফিরে দেখার প্রচেষ্টা আছে বা ৬০ দশকের হাংরি মুভমেন্ট যা ভারতে ঘটেছিল। ওই
মুভমেন্ট কতটা আপনার কাজকর্ম বা দেখার ভঙ্গীকে প্রভাবিত করেছে?
হাংরি মুভমেন্ট বাংলা সাহিত্যের মনোভাব বা ধারণার একটা বড় পরিবর্তন
ঘটিয়েছিল। যদিও আমি মনে করি যে কোনো ধরণের মুভমেন্ট একটা রেজিমেন্টেশন শেষ অবধি
তৈরি করে। নানান গ্রুপ তৈরি হয় আর লেখকের স্বাধীনতার বলি চড়ানো হয় মুভমেন্টকে
বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনে। কিছুদিন আগেই মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে (হাংরি মুভমেন্ট যাঁর
হাতে শুরু) কথাবার্তায় আমি এই প্রশ্ন তাঁর কাছে রেখেছিলাম তার উত্তরে তিনি
বলেছিলেন পশ্চিমী মুভমেন্টের সাথে হাংরি মুভমেন্টকে গোলালে চলবে না। হাংরি
মুভমেন্টের কোনো কেন্দ্রীয় পাওয়ার সেন্টার ছিল না, হাই কমান্ড বা পলিটবুরো ছিল না।
যে কেউ বা সবাই ছিলেন স্বাধীন এই মুভমেন্টে যোগ দেওয়ার জন্য, শুধু তিনি হাংরি এই
কথাটি ঘোষণা করতে হতো। ঘটনা হচ্ছে পরের দিকের অনেক হাংরিকে আমি আজও চিনি না’।
কিন্তু তবু আমার মনে হয় হাংরিদের এই ক্লোজড গ্রুপের জন্য, পরের দিকের
হাংরিদের স্বীকার করা হয়নি, আর হাইকমান্ড বা লিডার গড়ে ওঠার জন্যই হয়ত এই মুভমেন্ট
শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এর জন্য তাদের ডিফায়েন্সকে অস্বীকার করার মানে হয় না, বা
তাদের ফর্ম নিয়ে পরিক্ষা নিরিক্ষার পরও মূল কন্টেন্ট অটুট রাখার কথা আমরা জানি আর
তাদের টেক্টে subjective personal
feelings, এগুলো আমাকে নাড়িয়েছিল আর তাই তাদের ছাড়া একটা ইন্ডি সংকলন হতেই পারে না বলে আমার মনে হয়েছিল।
একটা কবিতা কীভাবে আপনি তৈরি করেন? কোথা থেকে তার প্রেরণা পান?
এটা সাধারণত এভাবে ঘটে, একটা শব্দ, কখনো একটা গোটা বাক্য, আমার মাথার ভিতর
ঘুরতে থাকে কয়েক দিন ধরে যতক্ষণ না আমি সেটাকে লিখে ফেলছি। তারপর আরো শব্দ তার
সঙ্গে জুড়ে যায়। এটা সাধারণত ঘটে ছোটো কবিতার ক্ষেত্রে। কিন্তু বড় কবিতার ক্ষেত্রে
খানিকটা রিসার্চ থাকেই। কখনো কখনো একটা ঐতিহাসিক পটভূমি তৈরি করে একটা বাক্য বা
একটা শব্দ।
ধরা যাক আমার বড় কবিতা ‘অজয়ের পাড় ধরে জয়দেব কোথায় যে হেঁটে চলে গেল’-র
ক্ষেত্রে আমাকে তিনটে বইয়ের নাম করতেই হবে যা এই কবিতার পেছনে প্রেরণা জুগিয়েছে। ‘Who was Sinclair Beiles’ যা সম্পাদনা
করেছিলেন গ্যারি কামিস্কি আর এভা কোয়ালস্কা, ‘The
Colossus of Marousi’ যা লিখেছিলেন হেনরি মিলার আর হেনরি দিনান্দারের বই ‘Mr Blue’ এবং ‘হাইড্রা’ শব্দের নানান রকম রূপ আমাকে তাড়া করে ফিরছিল বহু দিন ধরে।
হাইড্রা, গ্রিসের একটা দ্বীপ, একটা সময় ছিল বোহেমিয়ানদের স্বর্গ রাজ্য যা গ্রিক
রূপকথার সেই জলের জন্তুটাও যার ছিল নটা মাথা। আমি বাংলার সেই মিথ হয়ে যাওয়া কবির
কথাও ভাবছিলাম, জয়দেব, যার বাড়ি ছিল অজয়ের পাড়ে। যেখানে আজও তার স্মৃতিতে একটি
গ্রামীণ মেলা বসে। বাউল সাধকরা সারা রাত গান গায় রাধা কৃষ্ণের প্রেম নিয়ে। সাধারণ
মানুষের বিশ্বাস রাধা কৃষ্ণের প্রেমের মিথকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। এছাড়াও আমি
ভাবছিলাম আজ যারা তাদের ছেলের নাম জয়দেব রাখে তারা কি জানে জয়দেব আসলে কে ছিলেন?
এই পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে খুব ম্যাজিকাল আর কাব্যিক মনে হয় আর এটা আমাকে লিখতে
প্রেরণা যোগায়।
আমি মনে করি প্রথম চিন্তাই সেরা চিন্তা তাই খুব একটা কাটাকুটিতে আমি বিশ্বাস
করি না, যদিও আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ শুধু যে বার বার কাটাকুটিতে বিশ্বাসই শুধু
করতেন তাই নয়, তিনি প্রুফে আবার নতুন করে লিখতেন, আর মাথা খারাপ করে দিতেন
প্রিন্টারের।
আমার কাছে কবিতা শুধু শব্দ সাজানো নয় বরং উলটোটা, তাতে লেগে থাকবে ঘাম, লোম,
থুতু, কফ, পিত্ত –
এই সবকিছু থাকে একটা কবিতার ভেতর। আমার রাগ, দুঃখ, যন্ত্রণা, হতাশা, ভাবপ্রবণতা,
প্রেম – এই সমস্তই আছে ওই কবিতার হাড়ে। আমি শুধু ওই হাড়গুলোকে সাজাই যখন ইচ্ছে
করে। একই কথা খাটে কবিতা ছাপার ব্যাপারেও।
আপনার আর্টস কালেক্টিভ গ্রাফিত্তি কোলকাতা নিয়ে কিছু বলুন।
বাংলায় আমাদের প্রকাশন সংস্থার নাম গ্রাফিত্তি আর আমরা প্রচুর বই বার করেছি –
একশোর বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে আর একশোর বেশি ইস্যু আমাদের পত্রিকার প্রকাশিত হয়েছে
বাংলায়, সেখানে আছে আমার কবিতার বইগুলো আর অনুবাদের কাজগুলো। আর তিরিশজনের বেশি
অন্য ধরণের লেখকদের কাজও আছে গত ১৮ বছরের এই পথ চলায়।
২০০৪ সাল নাগাদ আমরা অডিয়ো ভিসুয়াল নিয়ে কাজ করতে শুরু করি, তৈরি হয় ৬ টা
ছোটো ফিল্ম। এ সময়টাতে আমরা বাংলা লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করতে শুরু করি, প্রাথমিক
ভাবে যা ছিল ছোটো ফিল্মগুলোকে সাবটাটেল দেওয়ার জন্য যাতে যারা বাংলা জানেন না
তাদের কাছেও এই কাজ পৌঁছনো যায়। ভারতেও বাংলা একটা প্রাদেশিক ভাষা মাত্র। আমার
প্রচুর বন্ধু বান্ধব আছেন যারা বাংলা পড়তে বা বলতে জানেন না। এই প্রচেষ্টা ছিল সেই
ফাঁকটাকে কমিয়ে আনার জন্য। আমরা একটা ব্লগ শুরু করি ইংরেজিতে যারা নাম ‘গ্রাফিত্তি
কোলকাতা’। ২০০৮ সাল নাগাদ। এটা বেরোয় ইংরেজিতে যেখানে বেরোয় সারা পৃথিবীর লেখকদের
কবিতা আর আমাদের প্রথম ইংরেজি সংকলন যা ছাপা হয়ে প্রকাশিত হয়েছে ২০১০ এ সেটা হলো the stark electric space তারপর নানান কবিতার
চ্যাপ বই।। এসব কাজে আমাকে টাকা জুগিয়েছে আমার বাঁ ডান ব্যাক পকেটেরা। যদিও শুনেছি
কবিতার জন্য নাকি ফান্ড পাওয়া যায় কিন্তু তার পিছনে ডান বাম পলিটিকাল দলগুলো উৎসাহ
দেয় যা আমাদের না পসন্দ। আমরা স্বাধীন থাকতেই বেশি পছন্দ করি। স্বপ্ন আর জীবনের যন্রণা
আমাদের ইন্ধন যোগায় এইসব কাজকর্মে। আমাদের কাছে গ্রাফিত্তি একটা
আন্দোলন...গ্রাফিত্তি একটা যাপন... এটা আমাদের স্বপ্নের একটা পথ...চিন্তার
কঞ্জিউমারিজমের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ... আর এখন সারা পৃথিবী জুড়েই আমাদের বন্ধু
বান্ধব আছেন যারা বিশ্বাস করে্ন এই স্বাধীনতায়, এই সৃষ্টিতে।
কোলকাতায় কবিতার হালচাল কেমন?
১৯৮০ বা তারপর যারা বাংলায় কবিতা লিখেছেন বা লিখছেন তাদের সৃজনশীল অস্থিরতার
সঙ্গে নিজেদের চিহ্নিত করতে হয়েছে তাদের চারপাশে যা ঘটছে তার সঙ্গে, খুন,
টেরোরিজিম, মাওবাদ, দুর্নীতি ইত্যাদির সঙ্গে। তার ফলে তাদের লেখালিখি কমার্শিয়াল
লেখালিখির থেকে আলাদা হয়েছে ভাষায়, ভাব প্রকাশে।
বাংলাদেশকে মাথায় রাখলে বাংলা বইয়ের বাজারটা বেশ বড়। প্লেনে করে গেলে যা মাত্র
আধ ঘন্টা দূরে। একটা গোটা দেশ যার ভাষা বাংলা।
তো এই বাজার ধরতে প্রচুর টাকা ঢালা হয়ে থাকে। আর এই অবস্থায় স্বাধীন লেখকেরা
যে লড়াইটা লড়ে তা শব্দের। বড় কমার্শিয়াল কাগজে তাদের রিভিউ জোটে না। তাদের নামও
অনেক পাঠক শোনেননি তাই।
লড়াইটা কঠিন কিন্তু তা বলে লড়াই ছেড়ে কেউ কেউ পালালেও অনেকেই আছেন যারা
লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যে কমেন্টগুলো পাঠকেরা করেছেন এই সাক্ষাৎকার পড়ে
হ্যাঙ্ক ডি
শুভঙ্কর একজন দারুণ কবি আর খুব ভালো একটা মানুষ আর এটা সত্যিই আগ্রহ নিয়ে
পড়বার মতো। ধন্যবাদ।
জানুয়ারি ২, ২০১১
ফেডেরিকা নাইটেঙ্গেল
এই সাক্ষাৎকারটা পড়ে এত ভাল লাগল, শুভ একজন ভাল কবি আর অনুবাদকও। ওর কাজ
আমার সত্যিই ভালো লাগে। শুভেচ্ছা।
জানুয়ারি ২, ২০১১
জুন নন্দী
শুভঙ্করকে ব্যক্তিগত ভাবে জানার সৌভাগ্য আমার হয়েছে আর একজন ভাল কবি ছাড়াও ও
একজন খুব সুন্দর মানুষ। এই সাক্ষাৎকারটি তরুণ কবিদের জন্য নির্ণায়ক এবং উদ্দীপক
হিশেবে কাজ করবে আর তরুণরা বুঝতে পারবে কীভাবে স্বাধীন চিন্তা নিয়ে কাজ করে টিকে
থাকা যায়।
আমার শুভেচ্ছা ওর ভবিষ্যতের কাজকর্মের জন্য।
জানুয়ারি ৮, ২০১১