Thursday, November 23, 2017

লেখা নিয়ে বাতেলা-চার্লস বুকাওস্কি

















বুকাওস্কি জন্মেছিলেন আন্দেরনাখ, জার্মানিতে। তিন বছর বয়সে বাবা মা’র সাথে আমেরিকা চলে আসেন। বড়ো হয়ে ওঠেন লস অ্যাঞ্জেলস-এ যেখানে তিনি জীবনের পঞ্চাশ বছর কাটিয়েছেন। জীবনে বহু রকম কাজ করেছেন। পোস্টঅফিসের ক্লার্ক থেকে মুটেগিরি অবধি। কিন্তু কোনটাতেই বেশিদিন টিকতে পারেননি। তাই অনেকসময় অনাহারে কাটাতে হয়েছে। একটা ক্যান্ডিবার আর শুধু হাফ বোতল সস্তা ওয়াইন দিয়ে তিন-চারদিন কাটিয়ে দিয়েছেন মাঝে মধ্যেই।
অনেকসময়ই সততার সঙ্গী হয় কৌতুক রসবোধ। বুকাওস্কি প্রথমেই নিজেকে নিয়ে মজা করতে ভালবাসতেন, যখন তিনি কৌতুক করতেন চারপাশের উন্মাদ পৃথিবীটা নিয়ে। এই উচ্চাঙ্গের অ্যাবসার্ডিটির চেতনা তার সমস্ত প্রকাশিত লেখার মধ্যেই দেখা যাবে। সম্ভবত চ্যাপলিন বলেছিলেন সেই আধুনিক মানুষ যে নিজেকে নিয়ে মজা করতে পারে। যা সারাটা জীবন করে দেখিয়েছেন চ্যাপলিন।
বুকাওস্কির প্রিয় রঙ ছিল হলুদ। রঙের প্রিয়তা দিয়ে মানুষের মানসিকতা নাকি বোঝা যায়, বলে লোকে। আরো কত কী যে বলে লোকে অথচ তিনি ভালোবাসতেন জানালার খড়খড়ি বন্ধ করে দুপুর অবধি টানা ঘুমোতে। সন্ধে থেকে ভোর রাত অবধি চলত তার লেখালেখি, রেডিয়োতে ক্ল্যাসিকাল চ্যানেলে বাখ, বেটোভেন, শুবার্ট শোনা আর বিয়ার খাওয়া। তিনি খুব ভালোবাসতেন ভারতীয় বিড়ি। জীবনের শেষ ২০-২৫টা বছর রাজস্থান থেকে যাওয়া ‘শের’ বিড়ি খেয়েছেন তিনি। যদিও তা তাকে ভারতে আসতে উদ্বুদ্ধ করে নি। লোকে বলে তিনি নাকি বিট জেনারেশনের। আর এই বিট জেনারেশনের অনেকেই শান্তির খোঁজে ভারতে এসেছেন বার বার এ কথা তো আমরা জানি। জানাজানি এ কথা। এমনকি গিন্সবার্গ বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ভারত থেকে ফেরার পর এবং কবি বব রোজেন থাল আরো জানিয়েছিলেন যে তার মৃত্যুর পর তাকে দাহ করা হয় এবং সেই ছাই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পৃথিবীর নানা জায়গায়। এ ধরনের বিশ্বাস বুকাওস্কির ছিল না। তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি এভাবে ভেবেছেন –‘বিশ্বাস জিনিসটা খারাপ না যাদের আছে, স্রেফ আমার ঘাড়ে তুলতে আসবেন না। কলের মিস্ত্রীকে ওই ভগবানের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি আমি। ওই মিস্ত্রীগুলো দারুণ ভালো কাজ করে। ন্যাড়গুলো যাতে ঠিকঠাক বয়ে যায় তার ব্যবস্থা করে’।
এরকম একটা মানুষ তাই আদি ভৌতিক, আদি দৈবিক কোনো টানেই ভারতে আসতে চাননি। বরং আস্থা রেখেছেন মদে। তার কাছে মদ ছিল এ পৃথিবীর সেরা আবিষ্কার। কারণ আমাদের সমাজে অনেকেই যারা ভুল সময়ে, ভুল জায়গায় আঁটকে গেছেন মদ তাদের সুইসাডের দিকে যেতে দেয়নি বরং আঁটকে রেখেছে। মদই সেই একমাত্র গান, নাচ যা তাঁদের জন্য পড়ে আছে এখনও। শেষ বাজার চালু সস্তা মিরাকেল।
বুকাওস্কি সম্পর্কে এটুকু একটা ধরতাই। প্রায় দু হাজার পাতার অপ্রকাশিত চিঠিপত্র থেকে বেছে যে বইটা বেরিয়েছে- ‘চার্লস বুকাওস্কি অন রাইটিং’, সেখান থেকে এই চিঠিটির অনুবাদ। চিঠিটি লেখা ১৯৮৩ সালে লস পেকুইনো গ্লাজিয়ার কে।
লস পেকুইনো গ্লাজিয়ার একজন কবি। ডিজিটাল পোয়েট্রি মুভমেন্টের একজন প্রধান প্রবক্তা। থাকেন নিউইয়র্কে।

এই চিঠিতে উল্লিখিত অন্যান্য লেখকদের সম্পর্কে দু এক লাইন জানিয়ে দেওয়া ভালো মনে হল আমার। যদিও আপনারা এদের অনেকের লেখাই পড়ে থাকবেন।



জন আপডাইক জন্মেছিলেন ১৯৩২ সালে। একজন আমেরিকান কবি, নভেলিস্ট, ছোটো গল্প লেখক এবং লিটারারি ক্রিটিক। তার খরগোশ সিরিজের জন্য তিনি বিখ্যাত। ২০০৯ সালে ৭৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
চেসলো  মিলোজ একজন পোলিশ কবি, গদ্যকার, অনুবাদক এবং ডিপ্লোম্যাট ছিলেন। ১৯৮০ তে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। তার নন ফিকশান ‘দা ক্যাপটিভ মাইণ্ড’ বিখ্যাত হয়েছিল বইটির স্টালিন বিরোধী চরিত্রর জন্য।
কবি, ঔপন্যাসিক স্টিফেন স্পেণ্ডার বিশ্বাস করতেন ক্লাস স্ট্রাগেলে। একজন ইংরেজ, যার লেখার বিষয় ছিল সামাজিক অসাম্য।
এডমাণ্ড হোয়াইট জন্মেছিলেন ১৯৪০-এ সিনসিনাতি তে। সমকাম ছিল প্রধানত তার লেখার বিষয়। মনে রাখতে হবে যখন তিনি গে-দের নিয়ে উপন্যাস লিখছিলেন তখন অন্য কেউ সে যন্ত্রণার কথা লেখেন নি। তাঁর আত্মজীবনী মূলক ট্রিলজি উপন্যাসের শেষ খণ্ড ‘দা ফেয়াওয়েল সিম্ফনি’ বিখ্যাত।
১৯৩৪ সালে লন্ডনে জন্মানো জোনাথান মিলার ছিলেন মূলত থিয়েটার আর অপেরা ডিরেক্টর। পরে পৃথিবী তাকে জানবে শুধু অপেরা ডিরেক্টর হিশেবে।
ডিক কাভেট আমেরিকান টেলিভিসানের একজন বিখ্যাত নাম তেমনই বিখ্যাত তার টক শো গুলো।
নরমান মেলার একজন আমেরিকান ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, অভিনেতা, রাজনৈতিক এক্টিভিস্ট ইত্যাদি। তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘দা নেকেড অ্যান্ড দা ডেড’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ এ।
গোর ভাইডাল-এর জন্ম ১৯২৫ সালে। তিনি বিশ্বাস করতেন লেখার স্টাইল দিয়েই নিজেকে জানা যায়। কাউকে রেয়াৎ না করে নিজের কথা বলতে পারার উপায়।
ট্রুম্যান কাপোটি পপুলার কালচারের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। ঔপন্যাসিক, ছোটো গল্পকার, নাট্যকার ইত্যাদি।
                                                                                                                                            
অ্যালেন গিন্সবার্গ বিট জেনারেশনের কবি যার নাম আমরা সবাই জানি। ‘হাউল’ সেই বিখ্যাত কবিতা যা লেখার জন্য তাকে অভিযুক্ত হতে হয়েছিল। সিটি লাইটস প্রকাশিত সেই বই আমেরিকাতে ব্যান হয়।
বার্ট রিনল্ডস হলেন একজন আমেরিকান অভিনেতা, ডিরেক্টর এবং প্রডিউসার।
এফ দস অর্থাৎ দস্ত্যেভস্কি, তুর্গেনেভ দুজনেই বিখ্যাত রাশান লেখক।
সিলিন একজন ফেঞ্চ লেখক।
হামসুন একজন নরওয়েজিয়ান লেখক। ১৯২০ সালে নোবেল পান।
জন ফান্টে একজন আমেরিকান লেখক। যার বই ‘আস্ক দা ডাস্ট’ বুকাওস্কির অনুরোধে আবার ছাপা হয়। যার মুখবন্ধ লিখেছিলেন বুকাওস্কি।
আমেরিকান শের উড অ্যান্ডারসন ছিলেন স্বশিক্ষিত। ঔপন্যাসিক এবং ছোটো গল্পকার।
কারসন ম্যাককুলার্স কবি, ঔপন্যাসিক।
জেফার্স একজন আমেরিকান কবি। 



এবার চিঠি  

লস পেকুইনো গ্লাজিয়ারের প্রতি
ফেব্রুয়ারি ১৬, ১৯৮৩

আমি জানিনা ব্যাপারটা ঘটে কীভাবে। মানে আমি বলতে চাইছি যে আমি এখন আগের থেকে অনেক বেশি ভালো লিখি না আদৌ, যা আমি লিখতাম বহু বছর আগে
যখন আমি অনাহারে মৃতপ্রায় ওই সব ছোট ছোট ঘরগুলোতে, পার্কের বেঞ্চে আর ধ্বসে পড়া বাড়িগুলোয়। আর ওই দমবন্ধ করা ফ্যাক্টরিগুলো আর ডাকঘরের বসেরা আমাকে প্রায় খুন করে ফেলেছিল। সেখানে যারা কাজ করে তাদের মানুষ হিশেবেই গণ্য করা হয়না। আসলে টিকে যেতে পারাই লেখালিখির মূল সূত্র। সেই সমস্ত সম্পাদক যারা দিনের পর দিন আমার লেখা রিজেক্ট করেছেন তারা অনেকেই আর বেঁচে নেই। মরে হেজে গেছে। কিছু নারীদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আমার এখনকার লেখায় যদি তফাৎ কিছু থেকে থাকে তা হল এখন লেখা আমাকে আনন্দ দেয়, লিখতে মজা পাই আমি। কিন্তু ব্যাপারটা ঘটে খুব দ্রুত। একটা মুহূর্তে তুমি এক পেঁচো মাতাল লড়াই করে চলেছ আরেকটি মাতাল নেশাড়ী উন্মাদ রমণীর সাথে বস্তির একটা ঘরে তার পরেই তুমি ইয়োরোপের একটা হলে ঢুকছ যেখানে ২০০০ বুনো লোক তোমার কবিতা শোনার অপেক্ষায় বসে আছে। আর তোমার বয়স ৬০ বছর...

এখন ৬৩ হতে চলেছে আমার। এখন আর কবিতা পাঠ করতে যেতে হয়না মদ আর বাড়ি ভাড়ার টাকা জোটাতে। আমি যদি অভিনেতা হতে চাইতাম, পারতাম অভিনেতা হতে। লোকের সামনে নাচা কোঁদা করা আমার পন্থা নয়। কিছুদিন হল একজন ভদ্রলোক আমাকে লিখেছিলেন ---‘... কয়েকজন যারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন তারা হলেন জন আপডাইক, চেসলো  মিলোজ, স্টিফেন স্পেণ্ডার, এডমাণ্ড হোয়াইট, জোনাথান মিলার, ডিক কাভেট এবং ওয়েণ্ডেল বেরি। তাই বুঝতেই পারছেন আপনি খ্যাতির যোগ্য লোকজনের সাথেই আছেন...’
আমি তাঁকে না বলেছিলাম। যদিও সাম্মানিকের পরিমাণটা অনেকটাই ছিল।

এদের এরকম করতে হয় কেন?
আমি এটুকুই বলতে চাই যে এই মুহূর্তে এই ছোট শহর স্যান পেদ্রো তে থাকার মত যথেষ্ট পয়সা আমার থাকলেই অনেক। যেখানে লোকজন স্বাভাবিক আর সহজ আর বোকা আর ভালো আর একজন লেখক বা একজন পেইন্টারকে আশপাশে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখানেই আমি থাকতে পারি আমার তিনটে বেড়াল নিয়ে আর প্রতিরাতে মদ খেতে পারি আর টাইপ করতে পারি রাত ২টো, ৩টে অবধি। আর পরের দিন
আছে রেসের মাঠ। আমি এটুকুই চাই। আর ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট ঠিক তোমায়(আমায়) খুঁজে নেবে। এখনও ভালো আর খারাপ মুহূর্ত গুলো আছে নারীদের সাথে। কিন্তু আমার এই সেট আপ পছন্দের। ভাগ্যিস আমি নরমান মেলার বা কাপোটি বা ভাইডাল নই। বা দা ক্ল্যাসের সাথে কবিতা পড়া গিন্সবার্গ নই, আমি সুখী যে আমি দা ক্ল্যাস-ও নই।
আমি এটাই বলতে চাইছি যে যখন ভাগ্য তোমার সহায় হয় তখন সেই ভাগ্য যেন তোমায় গিলে না খায়। তোমার বয়স যদি বিশের কোঠায় হয় আর তখন যদি তুমি বিখ্যাত হও, সেটা তখন কাটানো খুব কঠিন কাজ। আর ৬০ বছর পার করে তুমি যদি খানিকটা বিখ্যাত হও তখন তা নিয়ন্ত্রণ করাটা সোজা। বুড়ো এজরা পাউণ্ড বলতেন –‘নিজের কাজটা কর’। আর আমি ঠিক বুঝতাম আসলে তিনি কী বলতে চাইছেন। যদিও আমার কাছে লেখালিখিটা কখনও কাজ ছিলনা অন্তত মদ খাওয়ার থেকে বেশি কাজ তো নয়ই। আর অবধারিত ভাবে এখন আমি মদ খাচ্ছি আর এ চিঠিটা যদি একটু তালগোল পাকিয়ে যায়, পাকাকগে ওটাই আমার স্টাইল।

কবিদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। কয়েকজন তো শুরু করে দারুণ। লেখার ভেতর একটা বিদ্যুৎ চমক, একটা জ্বালা, একটা ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা টের পাবেন। খুব ভালো একটা প্রথম বা একটা দ্বিতীয় বই, তারপর তারা কেমন জোলো হয়ে ওঠে। চারিদিকে দেখুন দেখবেন তারা ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এর ক্লাস নিচ্ছে কোনো একটা ইউনিভার্সিটিতে। তার মানে তারা জানে কীভাবে লিখতে টিখতে হয় আর তা তারা অন্যদের সে সব বলবেও। এটাতো একটা রোগ, তারা নিজেদের মেনে নিয়েছে। এটা যে তারা করতে পারছে বিশ্বাসই করা যায় না। এটা এরকম যে একজন এসে আমাকে বলছে কীভাবে চুদতে হয় কারণ সে মনে করে সে অসাধারণ চোদে।

যদি সত্যি কোনো ভালো লেখক থাকে আমি মনে করি না তারা ঘুরে বেড়ায়, হেঁটে বেড়ায়, বকে বেড়ায় এটা ভেবে যে তারা লেখক, তারা বেঁচে থাকে আর কিছুই করার নেই বলে। ক্রমাগত বেড়ে চলে আতঙ্ক আর আতঙ্ক নয় যা আর সব বক বক, গাড়ির ফেটে যাওয়া টায়ার আর দুঃস্বপ্ন, আর্ত চিৎকার, হাসি আর মৃত্যু আর জিরোর লম্বা খালি জায়গাটা আরও ওইসব, সব কিছু জট পাকায় এক সাথে তারপর তারা দেখতে পায় টাইপ মেশিন আর বসে গিয়ে তাতে আর ঠেলে বেরিয়ে আসে সব, কোনো প্ল্যান ছাড়াই, ওটা ঘটে, যদি তাদের ভাগ্য তখনও তাদের সহায় হয়।

এখানে কোনো নিয়ম নেই। আমি আর অন্য লেখকদের লেখা পড়তে পারিনা। আমি একাকী। কিন্তু আমি অন্যদের থেকে ধার করি আমার শূন্য স্পেসের জন্য। আমি ভালোবাসি একটা ভালো প্রফেশানাল ফুটবল ম্যাচ দেখতে বা একটা বক্সিং ম্যাচ অথবা ঘোড় দৌড় যেখানে সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বীই প্রায় সমান। আমার ভালো লাগে এইসব দেখতে যা কিছুটা চরিত্রর দৃঢ়তা ধার দেয়।
এই খেলা শেষ করতে মদও সাহায্য করে খুব। যদিও অনেককেই আমি এই সাহায্য নিতে বলব না। বেশির ভাগ মাতালই খুব একটা কৌতূহল-উদ্দীপক নয়। যদিও মদ না খাওয়া লোকজনও যে খুব কিছু কৌতূহল-উদ্দীপক হয় তাও নয় আরকি।

ড্রাগ নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় আমি ড্রাগ নিয়েছি। কিন্তু সেটা ছেড়েও দিয়েছি আবার। গাঁজা প্রেষণা প্রণোদনা নষ্ট করে আর সবসময় তোমার দেরি হয়ে যায় যদিও কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তোমার। কোক ছাড়া বাকি অতি-ড্রাগ গুলো তোমায় কোথাও নিয়ে যায় না এমনকি তুমি যে আছো সে কথাই ভুলিয়ে দেয়। আমি অবশ্য মোদো, যাতে তুমি টিকবে বেশি দিন, বেশি টাইপ করবে... জুটবে কতনা নারী সঙ্গ, আরো অনেকবার ঢুকবে হাজতেও...

আর অন্য বিষয় হল, হ্যাঁ আমি ফ্যানেদের চিঠি পাই, খুব বেশি নয়, সপ্তাহে ৭টা ৮টা চিঠি, ভাগ্যিস আমি বার্ট রিনল্ডস নই। আমি সবকটার উত্তর দিতে পারি না যদিও কখনো সখন দি, যদি তা কোনো পাগলখানা বা জেলখানা থেকে আসে যেমন একবার বেশ্যালয়ের এক মাসীর থেকে একটা চিঠি এসেছিল। আমার ভালো লাগে ভাবতে যে ওইসব লোক আমার লেখা পড়েছে। সেই একই কথা জানতে চেয়ে আমি অনেক চিঠি পাই –‘আপনি যদি বিখ্যাত হয়ে থাকেন তবে তো আমাদেরও একটা সুজোগ আছে’। অন্যভাবে বলতে গেলে ওরা জানে যে আমাকে কী অত্যাচারটাই না সহ্য করতে হয়েছে। তবু আমি টিকে আছি। আমার তাতে অসুবিধে নেই যদি এটা ভেবে ওরা শান্তি পায় যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা ছ বোতল বিয়ার নিয়ে এসে আমার দরজায় কড়া নাড়ছে তাদের দুঃখের কাহিনী শোনানোর জন্য। আমি এখানে মানুষকে উদ্ধার করত বসে নেই। আমি নিজের ভিতু গাঁড় বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে আছি মাত্র। মদ খেতে খেতে টাইপ করে চলেছি শব্দগুলো যা আমাকে বাঁচিয়ে রাখছে। বোঝা গেল ব্যাপারটা?
আমি অতটাও একা নই। আমারও ক্রাচ আছে। এফ দস, তুর্গেনেভ, সিলিনের কিছুটা, কিছুটা হামসুনের, জন ফান্টের বেশিরভাগটাই, শের উড অ্যান্ডারসনের অনেকটাই, হেমিংওয়ের প্রথম দিকের লেখা, কারসন ম্যাককুলার্সের সবটুকু, জেফার্সের লম্বা কবিতা গুলো, নিৎসে আর শোপেনহাওয়ার, সারোয়ানের স্টাইল কন্টেন্ট বাদ দিয়ে, মোৎজার্ট, মাহলের, বাখ, ওয়াগ্নার, এরিক কোটস, মন্রিয়ান, ই ই কামিংস আর পূর্ব হলিউডের বেশ্যারা, জ্যাক নিকলসন, জ্যাকি গ্লিসন, চার্লি চ্যাপলিনের প্রথম দিকটা, ব্যারন ম্যানফ্রেড ভন রিচথোফেন, লেস্লি হাওয়ার্ড, বেটি ডেভিস, ম্যাক্স স্কেমেলিং, হিটলার, ডি এইচ লরেন্স, হাক্সলি আর ফিলির লালমুখো ওই বুড়ো বারটেণ্ডার...আর একজন অভিনেত্রী যার নামটা মনে পড়ছে না, যাকে আমার আমাদের সময়ের সেরা সুন্দরী বলে আমি মনে করি। সে মাল খেয়ে খেয়ে মরে গেছিল ...

আমিও কখনো রোমান্টিক হয়ে পড়ি। আমি একটি মেয়েকে জানতাম, ভালোই দেখতে ছিল সেই পাঊণ্ডের বান্ধবী ছিল। ক্যান্টোসের কিছু অংশে উল্লেখ আছে তার। তারপর সে গেল জেফার্সের সঙ্গে দেখা করতে। সে কড়া নাড়ল তার দরজায়। হয়ত সে চেয়েছিল পৃথিবীর একমাত্র নারী হতে যে পাঊণ্ড আর জেফার্স এই দুজনের সাথেই শুয়েছে। জেফার্স দরজা খোলেনি। একজন বুড়ি ভদ্রমহিলা খুলেছিলেন। এক মাসী, বাড়ির দেখাশোনা করতেন সম্ভবত। তো সেই সুন্দরী, বুড়ি কে বলল  -                            ‘আমি বাড়ির মনিবের সাথে দেখা করতে চাই’। ‘একটু দাড়ান’ – উত্তরে বললেন সেই বয়স্কা মহিলা। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বলেছিলেন –‘জেফার্স বলেছেন যে তিনি তার পাহাড় তৈরি করেছেন, যান গিয়ে আপনারটা বানান’...
আমার এই গল্পটা ভালো লেগেছিল। কারণ সে সময় সুন্দরীদের নিয়ে আমার ঝামেলার শেষ ছিল না। কিন্তু এখন যখন ভাবি তখন মনে হয় সেই বুড়ি হুয়তো কোনো কথাই বলেনি জেফার্সের সাথে। কিছুক্ষণ আড়ালে দাঁড়িয়ে ফিরে এসে সুন্দরীকে এসব কথা বলেছিল। যাইহোক আমিও পাইনি তাকে কিন্তু আমি এখনও নিজের পাহাড় তৈরি করতে পারিনি যদিও অনেক সময় যখন কিছুই থাকে না চারিদিকে তখন দেখি পাহাড়টা আছে।
আমি একথাই বলতে চাইছি যে কেউই আসলে বিখ্যাত হয় না অথবা ভালো। ওটা গতকালের ঘটনা। হয়ত তুমি বিখ্যাত আর ভালো হতে পারো মৃত্যুর পর। কিন্তু তুমি যতক্ষণ বেঁচে আছো যা হতে পারে তা হল এই ঝামেলার ভেতর খানিক্কটা ম্যাজিক দেখানো। সেটাকে হতে হবে আজকের অথবা আগামী কালের। যা তুমি করে ফেলেছ তা ধর্তব্যের মধ্যে পড়েনা। এটা নিয়ম নয় এটাই বাস্তবতা। এটাই বাস্তবতা যখন ডাকে পাওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর তুমি দিতে পার না। কারণ তাহলে তোমাকে ক্রিয়েটিভ রাইটিং–এর কোর্স পড়াতে হত।
আমি বুঝতে পারছি চড়ে যাচ্ছে আমার, কিন্তু একটা খারাপ কবিতায় এটা তো ঘটতেই পারে, যা তুমি পাবে। আমার সব সময় মনে পড়ে ক্যানিয়ন রিভিউ আর সিওয়ানি রিভিউয়ের ক্রিটিকাল লেখাগুলোর কথা সেই পুরোনো পার্কের বেঞ্ছে বসে থাকার দিনগুলো আর তাদের ভাষার ব্যবহার আমার ভালো লাগত যদিও আমার মনে হত ওগুলো আসলে সব মিথ্যে কথা।
বার্টেণ্ডার? আমরা কী করব? খুব বেশি কিছু নয়। হয়ত ভাগ্য ফেরাব। ওটুকুই দরকার আর এন্টারটেইনমেন্টের অল্পস্বল্প বোধ, সে মুহূর্তের আগে যখন ওরা আমাদের ঘরের এক কোণায় দেখবে আমরা শক্ত হয়ে গেছি, অব্যবহার্য, যারা তখনো টিকে আছে তাদের কাছে। আমার খুব দুঃখ হয় এটা ভাবতে যে আমরা এতটাই সীমাবদ্ধ। কিন্তু তুমি ঠিক, কী আর আছে তুলনা করার মত? ওটা কোন সাহায্য করে না। চল মদ খাই। আবারো খাই খানিকটা ... একটা ছোট্ট টিনের ফর্ক দিয়ে এইসব নোংরামি কেটে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টায়...

বুকাওস্কি নিজেই লিখেছেন প্রতিদিন তিনি কম করে পাঁচ ছটা কবিতা লিখতেন। আর ভাগ্য সদয় হলে অনেক বেশি। মানে বছরে প্রায় হাজার দেড়েক কবিতা বা তারো বেশি। এই চিঠি যখন তিনি লিখছেন তাঁর ২০০ পাতার বই ‘হট ওয়াটার মিউজিক’ প্রকাশিত হয়েছে ব্ল্যাক স্প্যারো প্রেস থেকে। পরের লাইনগুলো সে বই থেকেই...
উকিল, দাক্তার, কলের মিস্ত্রী
সবাই টাকা করেছিল।
লেখকেরা?  
লেখকেরা উপোষ করেছে।
লেখকেরা আত্মহত্যা করেছে।
লেখকেরা পাগল হয়ে গেছে।  
                                


                         

Saturday, October 28, 2017

চার্লস বুকাওস্কি-কে ভালোবেসে, ঘেন্না করে

লিন্ডা কিং-এর সাথে কথা হচ্ছিল ওর কাছেই জানতে পারলাম যে নতুন বইটা তার বেরিয়েছে সদ্য, এতদিন পর, ‘ম্যাড উইজা্‌’, তা লেখা চলছিল যখন লিন্ডা আর বুকাওস্কি সেই ঝোড়ো সময় কাটাচ্ছিলেন।  
আমি মনে করি আমার সমস্ত পাঠক পাঠিকাই প্রাপ্তমনস্ক তাই লিন্ডা কিং-এর এই বইয়ের যৌন অনুষঙ্গগুলো নিয়ে তারা বাড়তি লাফালাফির দিকে যাবেন না কারণ তারা জানেন শরীর এবং মন এক সূত্রেই বাঁধা। প্রেম থাকলে শরীর থাকবে। আর যৌনতাটা পাইখানা, পেচ্ছাপ পাওয়ার মতোই প্রাকৃতিক ঘটনা মাত্র।   
লিন্ডা কিং মূলত একজন ভাস্কর। তার করা বুকাওস্কির হেড বাস্টটির ফটোগ্রাফ আপনারা দেখে থাকবেন যা পৃথিবী বিখ্যাত। চার্লস বুকাওস্কির সাথে একসাথে কবিতার বইও বেরিয়েছে তার।

চার্লস বুকাওস্কিকে নিয়ে অনেক বই আছে কিন্তু কোনোটাই এ বইয়ের মতো নয়। এটা যেন আয়নার অন্য পাশ দিয়ে দেখা। ওদের পাঁচ বছরের প্রেমের ঝোড়ো জীবনের জীবন্ত দলিল। তাই অনেক সময়ই অপরিমার্জিত, কিছু না লুকোবার চেষ্টা করে বলে যাওয়া সেই আবেগের দিনগুলোর কথা, সেই গভীর প্রেম আর প্রেমহীনতার কথা, যা সরাসরি ধাক্কা মারে আমাদের হৃদয়ে কোথাও।






পঞ্চম ভাগ 



আমি ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না পার্টিতে কী পরে যাব। পার্টিতে যাব বলে পাঁচটা জামা পরে দেখলাম। শেষে একটা পাগলাটে হলুদ জামা যার ঢলঢলে হাতা আর একটা ফ্লেয়ারড প্যান্ট পরবো ঠিক করলাম। কিন্তু পার্টিতে গিয়েই টের পেলাম ভুল করেছি। আমি ছাড়া আর কেউই সেজে আসেনি। লেখকরা নিজেদের জামা কাপড়ের প্রতি এত উদাসীন। কেমন তাদের দেখতে লাগছে তারা তা পাত্তাই দেয় না।   
‘ইনভিজিবল সিটি’-র সম্পাদক পল ভ্যাঞ্জেলিস্টের সঙ্গে আলাপ হলো। নীলি ইতি মধ্যেই ভাঁজ করে কাগজ রেডি করে ফেলেছে, ‘লাফ লিটারারি অ্যান্ড ম্যান দা হাম্পিং গান্স’, আর কাগজের কপি দিচ্ছে লোকজনকে। বুকাওস্কি আর নীলি দুজনেই কমেডিয়ানদের মতো ডায়লগ বলে চলেছে। ওরা এত দ্রুত কথা বলছিল আর তা এতটাই মজাদার ছিল যে ঘরের ভেতর অন্য সকলে হাসছিল খুব।
সারা দুপুরটা জুড়ে চলেছে পার্টি। বুকাওস্কি চাইছিল সবাই চলে যাক যাতে আমরা দুজনে একা হতে পারি। কিছুক্ষণ পর বুকাওস্কি সবাইকে বিদায় জানাল। আমি চাইছিলাম ওরা আরো কিছুক্ষণ থাকুক যাতে যা ঘটতে চলেছে তা আরো কিছুটা সময় আটকানো যায়।
নীলিকে দেখে মনে হচ্ছিল না তার আমাকে আদৌ পছন্দ হয়েছে আর অন্যরা ভাবছে আমি গ্রাম্য সম্পর্কে মাসতুত বোন যার পেটে কোনো বিদ্যে নেই।
২১ বছর বয়সে আমার বিয়ে ভেঙে যায় আর তারপর থেকে আমি প্রচুর বই পড়েছি ধর্ম, তত্ত্ববিদ্যা, মনোবিদ্যা, মনোবিদ্যা বিষয়ক বইপত্র, অধ্যাত্ববাদ ইত্যাদি যা হাতের কাছে পেয়েছি পড়েছি সব।
ঘন্টাখানেকও হবে না আমি পার্টিতে এসেছি, ইতিমধ্যে বুকাওস্কি বাড়ি পরিষ্কার করে ফেলেছে আর এখন আমরা দুজনে একা। আমি ভেবেছিলাম ওই মাসের পর মাস চুমু আর ছোঁয়াছুঁয়ির পর আমরা ধিরে সুস্থে একে অপরের কাছে আসব। একটা গোটা রাত কাটবে আদরে আদরে। বাচ্চাগুলো তাদের বাবার কাছে আছে তাই সকালের আগে আমাকে বাড়ি না ফিরলেও চলবে।
জামা কাপড় খুলতে না খুলতেই ও আমার ভেতর প্রবেশ করল আর দ্রুত সব শেষ হয়ে গেল।


ভালোবাসা সে মানুষটার জন্য যে যন্ত্রণায় আছে


ও আমাকে বেডরুমে নিয়ে গেল
খেলা করল আমার বুক দুটো নিয়ে
আমাকে এমন চুমু খেল
যেন পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মেয়ে
আমি একটা জুতো খুলতে পেরেছিলাম
পৌঁছোতেই পারলাম না অন্যটার দিকে
আমি ভাবলাম, এই মানুষটার
ভালোবাসা চাই...বড্ড প্রয়োজন

ও আমার ভালোবাসা নিয়ে
ঢক ঢক করে খেয়ে চললো যতক্ষণ না তৃষ্ণা মেটে
আর আমার ভালোবাসা রাখল নিজের পকেটে

সে এখন লেখে নিজের যন্ত্রণা নিয়ে
কিন্তু কখনো সখনো সে আমার ভালোবাসা
বের করে তার দিকে চেয়ে থাকে
তারপর পকেটে রেখে দেয় ফের
আমার ভালোবাসা পকেটে নিয়ে
ও অনেক ভালো আছে
আমি কী আদৌ ভালো আছি?

লিন্ডা কিং
(‘মি অ্যান্ড ইয়োর সামটাইমস লাভ পোয়েমস’ , কিসকিল প্রেস, ১৯৭২)

আমি লেখাটা লিখি পরের দিন যখন বুকাওস্কি তার চিরাচরিত দুঃখ আর যন্ত্রণা নিয়ে কতগুলো কবিতা আমাকে পড়তে দিয়েছিল।
ভাস্কর্যটা প্রায় শেষ। ভেতরটা ফাঁপা করে দেওয়া গেছে। আমি ওর গোঁফ আর শয়তানের মতো দাঁড়ি লাগিয়ে দিলাম। বুকাওস্কি ভাবছিল আমি ওটাকে শেষে নষ্ট না করে ফেলি।
আমার ছেলে এসে দেখে বললো, ‘এটা শেষ হয়ে গেছে মা’। তানো-র চোখটা ভাস্করের। ও সবসময়ই ঠিকঠাক বলতে পারত।
‘আমার মনে হয় ও ঠিকই বলছে’, বুকাওস্কি বললো, ‘এটা সত্যিই আমি। এটা কী ধরণের ম্যাজিক কে জানে। আমার এটা দেখে এত আশ্চর্য লাগছে যে খুব বেশি কিছু বলতে পারছি না আমি’।
‘আমি যখন একটা ভাস্কর্য বানাই ওটা আমার সমস্ত শক্তি শুষে নেয় যেন। লেখালিখি শক্তি দেয় লেখার সময়। পরে যখন ভাস্কর্যটা শেষ হয়ে যায় আর তুমি ওটার দিকে তাকিয়ে থাক আর ওটার সাথে ঘর করো, তখন ওটা তোমার শক্তি ফিরিয়েও দিতে পারে’।  
‘আমি বুঝতে পারছি, ওটা তোমায় এতটা ক্লান্ত করে তোলে কেন। তুমি ওটার ভেতর তোমার রক্ত ভরে দাও। এটা আমাদের বাচ্চা, আমাদের প্রথম সন্তান’।
‘এটার কতগুলো ছবি তুলে রাখা দরকার। যদি ভেঙে যায় বা পোড়ানর সময় নষ্ট  হয়ে যায়’।
আমরা বাইরে এলাম। গাড়ির মাথায় ভাস্কর্যটাকে বসিয়ে ওকে দাঁড় করালাম তার পাশে, আর ছবি তুললাম। ওদের জমজ ভাইয়ের মতো লাগছিল।
‘বাইরে খেয়ে আমাদের সেলিব্রেট করা উচিৎ, যাই চলো কোথাও’, সে বললো।
আমরা ওয়াইন আর মোমবাতি জ্বালিয়ে সেলিব্রেট করলাম। মাংসের স্টেক অর্ডার দিলাম।
বাচ্চারা সপ্তাহের শেষে বাবার কাছে চলে গেলে আমাদের হানিমুন শুরু হলো।

সেই ছিল
সেরা
তোমার মুখোমুখি
শুয়ে
তোমাকে চুমু খাওয়া
একশ রকম ভাবে
উষ্ণ আরো উষ্ণ হয়ে ওঠা

তোমার গোঁফ নিয়ে অনুযোগ করলাম আমি
আর খেপালাম তোমায়
বলতে চেষ্টা করলাম সেসব
যা তোমাকে হাসাবে
আর টের পেলাম সেই উষ্ণতা
যা আসছিল তোমার থেকে
বেড়ে চলেছিল যা ক্রমাগত
যখন হাসছিলাম আমরা
চুমু খাচ্ছিলাম আর ছুঁয়ে দেখছিলাম
একে অপরকে

আমি তোমার দৃঢ় লিঙ্গ
আমার মধ্যে রাখলাম
ফুটোটার একটু ওপরে
টের পাচ্ছিলাম তিরগুলোকে
যা আমাকে ফুঁড়ে যাচ্ছে
আমার মুখ তোমার মুখে
আমার বুক
তোমার খোলা বুকে লাগানো
আমার মনে হচ্ছিল যেন
আমি গলে যাচ্ছি তোমার মধ্যে
যেন একটা মেঘ
পাহাড়ের ভেতর দিয়ে চলে যাচ্ছে
শুধু আমি ভেতরে
তোমার সাথে

অনেক খেলার পর
ঘষাঘষি আর চুমুর পর
বড় সুন্দর ছিল
যখন তোমার লিঙ্গ
ঠেলে ঢুকল আমার ভেতর
আঘাত করতে আরো আরো
অনুভূতির জায়গাগুলোকে।

লিন্ডা কিং
(সুইট অ্যান্ড ডার্টি, ভ্যাগাবন্ড প্রেস, ১৯৭২)

বুকাওস্কি আমাদের সেই অসাধারণ প্রথম রাত্তিরের পর আবার চিঠি লিখল যার খানিকটা এরকম –
‘তোমাকে আমার চিরকাল মনে থাকবে, সেই কাফেতে যখন আমরা খেতে চেষ্টা করছিলাম সেই অশ্লীল বড় মাংসের স্টেকগুলো, মাথার এক গোছা চুল নেমে এসেছে তোমার, প্রায় খোঁচা মারছে তোমার চোখে যখন তুমি কথা বলছিলে। তুমি আরো বেশি বেঁচেছিলে স্বর্গের সমস্ত জলকুমারীর থেকেও বেশি, শুধু তুমি তা জানতে না। হয়ত ব্যাপারটা বোকা বোকা কিন্তু তোমার যোনি নয় বা তোমার শরীর নয় বা তোমার গলার স্বরও নয় বা তোমার চুল বা যেভাবে তুমি চলাফেরা করো...কিন্তু তোমার চোখ...তোমার চোখ...আমি সারাটা জীবন যার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি...যেন একটা বাতাসের টানেলে পড়ে যাওয়া যা আমাকে তোমার গভীরে নিয়ে যায়, শতাব্দী আর সমস্ত সময়, সমস্ত গোপনতা পেরিয়ে, সমস্ত বইপত্র পেরিয়ে, সমস্ত স্বর পেরিয়ে, সমস্ত কিছু সব পেরিয়ে...তোমার চোখ, পৃথিবীর সমস্ত রস যে দুটো বিন্দুতে জমা হয়েছে আর তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি পারিনা পুরোটা নিয়ে তৃষ্ণা মেটাতে, হে ভগবান...তোমার চোখ...আমি বোঝাতে পারছি না...আমি ওদের ভেতর সাঁতরাতে পারি’।

ও আমাকে দুটো কবিতা পাঠাল, ‘স্টাইল’ আর ‘দা শাওয়ার’ যা পরে প্রকাশিত হয়েছিল ‘মকিং বার্ড উইস মি লাক’-এ।
আমি যাদের চিনতাম তাদের কেউই আমার আর বুকাওস্কির সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না। যার শুরু আমার বোনেদের দিয়ে। ওরা ওর মদ খাওয়া নিয়ে আপত্তি করছিল, আমাদের বাবা ছিল মোদো মাতাল আর তার কাজকারবার ঠিক ছিল না মোটেই, আর বুকাওস্কির সাথে মদ খাওয়ার বিপদ নিয়ে।
‘হয়ত তুমি বাবা-কে মিস করছ। বুকাওস্কির বয়স অনেক বেশি। আগে ছিল পাস্তেরনাক এখন বুকাওস্কি। তোমার জীবন কি বুড়ো লোকদের নিয়ে আঁটকে গেল’?
আমার বান্ধবী হেলগা আমাদের বলতো ‘বিউটি অ্যান্ড দা বিস্ট’। যখন প্রথম ওদের আলাপ করাই সে বললো, ‘লিন্ডা কোন পাথরের তলা থেকে একে খুঁজে পেলে’? হেলগা ছিল এল-এর প্রথম বারটেন্ডার এবং স্পষ্টভাষী।
পরে যখন মায়ের দেখা হলো ওর সাথে, মা বললো, ‘ওর যা বয়স হয়ত ওর সাথে আমার ডেটে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু আমি কখনোই এমন লোকের সাথে ঘুরতে যাব না যে এসব ফালতু লেখা লেখে। কী যে সব নোংরা ভাষা ব্যবহার করে বলার নয়’।
বুকাওস্কির কাছেও এগুলো অজানা ছিল না। সে লিখলো-
‘এই পুরো ব্যাপারটাতে আমার মন খারাপ হচ্ছে ক্রমাগত যে তোমাকে তোমার সব বোনেদের আর বন্ধুবান্ধব্দের সাথে ঝগড়া করতে হচ্ছে একা একা। তারা তোমার ভালোই চায়, আমি জানি। কিন্তু তারা একটা জিনিস ভুলে যায় যে তুমি আমাকে ওদের থেকে অনেক বেশি ভালো করে জানো। এইসব ঝামেলা যুদ্ধ এড়িয়ে আমরা যাতে একসাথে থাকতে পারি, আমি তাই চাই’।
সন্ধ্যাবেলা ওর বাড়ি গেলে দেখতাম ও আঁকছে। কখনো ও রান্না করত, কাঁচা লঙ্কা দেওয়া স্টু। ওর বাড়ি যতই নোংরা হোক আমি পরিষ্কার করার চেষ্টা করিনি। এটা আমি মনে করতাম আমার নারীস্বাধীনতার একটা বিষয়। ও আমার বাড়ি পরিষ্কার করেনি আমিও ওর বাড়ি পরিষ্কার করিনি। যখন রান্নাঘর থেকে খুব বেশি পচা গন্ধ ছাড়ত তখন আমি ওকে আমার বাড়ি থাকতে বলতাম।
একদিন ও আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করল গাড়ি করে সমুদ্রের ধারে ওর মেয়ে মারিনা’র সাথে আমি দেখা করতে যেতে চাই কিনা? আমরা মারিনাকে তার মায়ের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তুলে নিয়ে গেলাম ভেনিস বিচে। মারিনা দেখতে ঠিক ওর বাবার মতো। কোমর অবধি নেমে এসেছে তার খয়েরি চুলের বেণী। নাক ভর্তি ইতস্তত দাগ। ও একটু লাজুক। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম ও বাবাকে খুব ভালোবাসে। বুকাওস্কি আমাদের জন্য দুপুরের খাবার কিনে নিয়ে এলো। আমরা বিচে বসে সে খাবার খেলাম। মারিনার সাথে ওর একটা সোজা আন্তরিক সম্পর্ক চোখ এড়াল না। ও মারিনার থেকে ওর স্কুলের সব ক্থা শুনতে লাগলো। আর মারিনা আর কী করতে চায় সে কথাও। মারিনা কতগুলো ছবি এনেছিল যা সে এঁকেছে শুধু বুকাওস্কির জন্য।
এরকমই একটা ট্রিপে আমরা এসে থামলাম এক কবি এবং পেইন্টারের বাড়ির সামনে। স্টিভ রিচমন্ড। ও প্রায় বিচের সামনের দিকে ছবির মতো একটা সান্টামনিকা কটেজে থাকত। মাছের সব রঙিন ছবি এঁকে সাজানো সে বাড়ি।
আমাকে বুকাওস্কির সঙ্গে প্রথম দেখে সে বললো, ‘আরে তোমার খবর কী গো? শেষবার যখন তোমায় দেখি তখন প্রায় কবরে যাওয়ার জন্য তুমি তৈরি আর এখন দেখ তোমার বয়স প্রায় কুড়ি বছর কম মনে হচ্ছে’।
বুকাওস্কি আমার সাথে আলাপ করালো যেন কারণটা আমিই।
সে রাতে সে আমাকে একটা চিঠি লেখে-
‘প্রিয় লু,
তুমি জানো না রিচমন্ডের ওখানে তুমি কী দারুণ ব্যবহার করেছ। সমস্ত বালছাল বাদ দিয়ে তোমার আছে সেই জীবনের গতি...তুমি ক্ষরাও। আমি জানি জেরি আমার প্রশংসার বাগধারা মানবে না, কিন্তু তাতে আমার কিছু করার নেই, কারণ এটাই সত্যি। তোমার সবকিছু ছড়িয়ে যায় অন্য জায়গায় আর তাদের সুন্দর করে তোলে। তোমার গাড়ি, আমার কাছে বোধহয় একটা গরম পিঠের মতো, আমার ইচ্ছে করে কাঁটা চামচ নিয়ে টুকরো করে কেটে খাই। হে ভগবান, মেয়ে তুমি এই বুড়ো বাঘটাকে চড়িয়ে দিয়েছ স্বর্গের কাছে। খারাপ সময় কি আর নেই, আছে কিন্তু তা আমারই মগজ প্রসুত...এই পাগল, এই পাগল, কী হয়েছে তোমার? এই পাগল।
তুমি এত মজাদার, তুমি যখন আমাকে আর বাঁচাতে আসো না, সমালোচনা করো না আমার, তখন ভালো লাগে না সেটা...কোরো না এমন। আমার ভালো লাগে কেউ যখন আমায় পরিহাস করে আর কাটা ছেঁড়া করে আর অপমান করে। এটা আমার চরিত্র...সেই অভিনেতা, সেই লেখকটা যে আমার ভেতর আছে ... আমার ভালো লাগে যখন আমাকে লোকে ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলে একেবারে ... ছবিটার উপর আলোটা তাতে জ্বলজ্বলে হয়ে থাকে।
সব থেকে খারাপ হলো এটা শোনা, ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবি’। আমার চোয়াল ঝুলে যায় ওটা শুনলে। ওটা একটা চাপ। গলা টিপে ধরে। সে জন্যই তোমার শরীর আর মন আমার দরকার। আমার দুটোই চাই। তোমার দুটোই আছে। আমার দুটোই চাই। তুমি দুটোই কেমন সুন্দর করে আমায় দাও। আমি জীবনে এত ভালোবাসিনি। তুমি যদি চলেও যাও তবু এগুলো থেকে যাবে আমার কাছে। ওরা কিছুতেই এইসব দিন রাত্রি আমার থেকে নিতে পারবে না। ওরাও যদি চলে যায় তবু ওরা থেকে যাবে নাড়িভুঁড়ির গভীরে যেখানে ওরা বিশ্রাম নেয়, নড়েচড়ে বেড়ায় আর থেকে যায়’।   
    



Wednesday, October 25, 2017

চার্লস বুকাওস্কি-কে ভালোবেসে, ঘেন্না করে

আমি মনে করি আমার সমস্ত পাঠক পাঠিকাই প্রাপ্তমনস্ক তাই লিন্ডা কিং-এর এই বইয়ের যৌন অনুষঙ্গগুলো নিয়ে তারা বাড়তি লাফালাফির দিকে যাবেন না কারণ তারা জানেন শরীর এবং মন এক সূত্রেই বাঁধা। প্রেম থাকলে শরীর থাকবে। আর যৌনতাটা পাইখানা, পেচ্ছাপ পাওয়ার মতোই প্রাকৃতিক ঘটনা মাত্র।   
লিন্ডা কিং মূলত একজন ভাস্কর। তার করা বুকাওস্কির হেড বাস্টটির ফটোগ্রাফ আপনারা দেখে থাকবেন যা পৃথিবী বিখ্যাত। চার্লস বুকাওস্কির সাথে একসাথে কবিতার বইও বেরিয়েছে তার।

চার্লস বুকাওস্কিকে নিয়ে অনেক বই আছে কিন্তু কোনোটাই এ বইয়ের মতো নয়। এটা যেন আয়নার অন্য পাশ দিয়ে দেখা। ওদের পাঁচ বছরের প্রেমের ঝোড়ো জীবনের জীবন্ত দলিল। তাই অনেক সময়ই অপরিমার্জিত, কিছু না লুকোবার চেষ্টা করে বলে যাওয়া সেই আবেগের দিনগুলোর কথা, সেই গভীর প্রেম আর প্রেমহীনতার কথা, যা সরাসরি ধাক্কা মারে আমাদের হৃদয়ে কোথাও।




চতুর্থ ভাগ



বুকাওস্কি খুব ভালো চিঠি লিখত।

‘যখন একটি মেয়ে আমাকে সেই মন্দিরে ঢুকতে দেয় – সেই যোনি – সে আমাকে তার আত্মার ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়, তার সবকিছুর ভেতরে। প্রথম শোয়াটা সাধারণত ঠিকঠাক কাজ করে না কারণ শরীরের ওই অংশগুলো আগে আসেনি কাছাকাছি আর মানিয়ে নেয় নি একে অপরকে। একটি মেয়ের যোনি শেষ অবধি একটি পুরুষের লিঙ্গের সঙ্গে মিশ খায় তাদের অনেকবার দেখা হওয়ার পর। তাকে চারদিক থেকে চেপে ধরে, তার মতো আকার ধারণ করে। এটা প্রথম শোয়ায় হওয়া সম্ভব নয় আদৌ।  (২৫-এ জানুয়ারি, ১৯৭১)’


‘আমি ওই ছুঁকছুঁক করা বূড়োদের লাইন ব্যবহার করব না, - আমি তোমার যোগ্য নই ইত্যাদি। আমি তোমার যোগ্য কিন্তু তুমি জানোনা তা। আমি যেমন কুৎসিত, তাও দাবী করে তোমায়...  
তোমার হাতে-হাঁটা আমি পছন্দ করি। অন্য অনেক কিছুর থেকে ওটা আমাকে অনেক বেশি যৌন উত্তেজনা দিয়েছিল। তুমি যাই করো তাই আমাকে পাগলের মতো  উত্তেজিত করে। সিলিং-এর দিকে মাটি ছুঁড়ে দেওয়া...ওরে মাগি, ওরে জ্বলন্ত যৌবন, ওরে সোনা, সোনা মেয়ে...তুমি আমার ভেতর সৃষ্টি করেছ নতুন কবিতা আর নতুন আশা আর নতুন আনন্দ আর নতুন কৌশল এই বুড়ো কুত্তাটার ভিতর। আমি তোমার ফলনার চুলদের ভালোবাসি যাদের আমি আমার আঙুলে স্পর্শ করেছিলাম, তোমার যোনির ভেতরটা সেই গরম আর ভেজা জায়গাটা। তুমি তোমার রেফ্রিজারেটারের সাথে সেঁটে, তোমার রেফ্রিজারেটারটা কী যে ভালো, তোমার মাথার চুল ঝুলছে, দুলছে, পোষ না মানা, ওখানে তুমি, তোমার বুনো পাখিটা, তোমার বন্যতা, তোমার জিভ... আমি বারব্যাঙ্কে তোমার কাছে আর আমি তোমার প্রেমে, ও আমার দেবী, আমার ভগবান, আমার মাগি, আমার দপদপানো শ্বাস নেওয়া চুলে ঢাকা স্বর্গের যোনি, আমি তোমায় ভালবাসি... ভালোবাসি তোমার রেফ্রিজারেটার কে, আর যখন আমরা জড়াজড়ি করছিলাম কুস্তি করছিলাম...তোমার ভাস্কর্যের মাথাটা দেখছিল আমাদের ওর সেই কাব্যিক সিনিকাল প্রেমের হাসি মেখে, যেন জ্বলছিল...

আমি তোমায় চাই, আমি তোমায় চাই, আমি তোমায় চাই
তোমায় তোমায় তোমায়

বিউক
২রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১’

বুকাওস্কির নামটা সারাক্ষণ মাথার ভেতর বাজতে থাকল। বুকাওস্কি, বুকাওস্কি, বুকাওস্কি। আমি বার বার ওই নাম বলতে থাকলাম। আমি ওকে হ্যাঙ্ক, চার্লস বলে ডাকতাম না, যেভাবে ওর বন্ধুরা ওকে ডাকত। সবসময় বুকাওস্কিই বলেছি।
ভাস্কর্যটা শেষ হয়ে আসছিল। চোখের দৃষ্টিটা ঠিক করতে হবে এবার। সময় এত দ্রুত চলে গেছে। যদিও আমরা দুটো গরম খাওয়া কুত্তার মতো চুমু, আদর, একে অপরের শরীর আবিষ্কার করেছি তবু আমি নিজেকে বার বার বলেছি আমি কিছুতেই বুকাওস্কির সাথে জড়িয়ে পড়ব না। আরেকটা চিঠি পেলাম সে সময়।

‘তোমাকে আমি আদর করতে পারি ১২ ঘন্টা জুড়ে একবারো না থেমে। আমি একটা চুমু খাওয়ার প্রতিযোগিতার কথা পড়লাম। জয়ীরা চুমু খেয়েছিল মাত্র ২৪ ঘন্টা। হে ভগবান, এ তো কিছুই নয়।
রাস্তায় আমি মেয়েদের দিকে দেখি। বলি, এ মেয়েটা লিন্ডার থেকে ভালো দেখতে। আরে, ওই মেয়েটা তো প্রায় লিন্ডার মতোই ভালো দেখতে...আর তারপর ভাবি এরা কেউই লিন্ডা নয়। তারপর ভাবি, এসব বাদ দাও হে, ঘোড় দৌড়ের মাঠের জন্য তৈরি হও। টাকাটা থাবড়ে রাখো যে ভাবে তুমি ভেবেছ। ভালোবাসা মারা গেছে। ভালোবাসা হলো ১৮৯০। ভালোবাসা হলো সেই চ্যারিটি রেস যেখানে যিশু দৌড়চ্ছেন চতুর্থ স্থানে পৃথিবীটাকে নির্মল করার জন্য’।  

তারপর ডাকে এলো একটা কবিতা।


যখন শয়তান বেরিয়ে আসে ভালোবাসার জন্য


শোনো হে, শুরু করে দাও
লেখো কতগুলো স্টিলের জুতো পরা নীল-চোখো কবিতা
তাদের দীর্ঘ লিঙ্গ আর রক্তাক্ত মুখ,
যেহেতু তুমি বসে আছো ওই তরুণী মেয়েটার বাড়ি
কফি খাচ্ছ যখন সে তার রান্নাঘরে তোমার ভাস্কর্য বানাচ্ছে
দেখছে
তোমার দিকে তার খয়েরি চোখ দিয়ে যা পৌঁছে যাবে
পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিতে
সম্মোহিত অবস্থায়
তুমি দেখবে তাকে তুমি সেঁটে ফেলেছ ফ্রিজের গায়ে
-তুমি কী করছ?
-তুমি কী করছ আমায়? সে জিজ্ঞাসা করে,
আর তুমি যখন তাকে চুমু খাও, তার চোখের মণি পেছনে চলে যায়
ভাস্কর্যের যন্ত্রপাতিগুলো একা একা পড়ে থাকে টেবিলে
অপেক্ষা করে মাটি-
সেই মাটি সেই মাটি সেই মাটি-শোনো হে, শুরু করে দাও।

যেহেতু তোমার মাথার ভাস্কর্য তৈরি করছে একটি মেয়ে
আর তাকাচ্ছে তোমার দিকে
তুমি-
শোনো, তোমার কবিতার কথা মনে রেখ, বুকাওস্কি
পৃথিবীটা নিয়ে কবিতা লেখো, লেখো
বস্তি বাড়ি নিয়ে,
আগুন নিয়ে আর আত্মহত্যা আর-
-আস্তে, ও বলছে আস্তে, ওই যে আমার মেয়ে-
ওর ৩ বছরের বাচ্চা মেয়েটা ঘরে এসে ঢুকল,
-মামাম, আমার আঙুলে লেগেছে-
-তুমি আঙুলে লাগিয়ে ফেলেছ? আহা রে সোনা আমার-
তুমি বসে পড় আবার, কফিটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে
অন্যকিছু তোমার সামনে আগুন হয়ে আছে
সে আবার ভাস্কর্যের যন্ত্রপাতি হাতে তুলে নেয়
-ওই শয়তানের হাসিটা ফুটিয়ে তোলার জন্য
সে একটা যন্ত্র তোমার দিকে তুলে নাড়ায়,
একটা যন্ত্র যার মাথায় একটা ছোট লুপ আছে
খয়েরি আগ্নেয়গিরি-চোখ জ্বলে ওঠে হাসির আগুনে, সে হাসে,
তুমিও হাসো-
পর্দা ভেদ করে রোদ এসে ঢোকে,
হারিয়ে যেওনা শূন্যতায়, হারিয়ে যেওনা ভালোবাসার
ফাঁকা জায়গায়-তুমি হয়ত ফিরে আসবে না বা তুমি হয়ত
ঠিকই ফিরে আসবে
দ্রুত – ধাম –
পৃথিবীর মাটিতে আবার, ভেঙে চুরমার,
তাকিয়ে দেখছ ঘরের কোণার নোংরায় মাকড়সার জালের দিকে
যেখানে তোমার টাইপরাইটার গর্জন করছে –
(আমি সুযোগটা নেব।)
(বোকার মতো কাজ করোনা।)
রাতের খাওয়ার খাওয়া এক জায়গায় মোমবাতি জ্বালিয়ে
মদও সরাতে পারে না এইসব –
-   কবে তুমি আসতে পারবে আরেকবার বসতে?
, কাল, বুকাওস্কি বলে, পরশু আর 
তার পরের দিন আর তার পরের দিন আর চিরকাল
যদি এটা চলে চিরকাল ধরে, ওই মাথাটা শেষ হয়ে গেলে
কাঁদব আমি –

তোমার পেছনের আলোটা তোমায় বয়স কমিয়ে দিয়েছে, মেয়েটা বলে
তোমাকে লাগছে ১৮ বছরের...

এটা আমার পেছনের আলোর জন্য নয়, বুকাওস্কি বলে,
শেষমেশ সে আর সিনিকাল নয়, শেষমেশ আর সেই শয়তানটা নয়,
মদটা শেষ করতে করতে তাকে দেখে আর টের পায়
সেরা কবিতাগুলো এখনো লেখা হয়নি,
কিন্তু বিল নিয়ে আসে টেবিল সামলানো মেয়েটা
আর লোকটি টাকা দেয়, বেরিয়ে আসে ভাস্কর মেয়েটির সাথে
এটা ভাবতে ভাবতে যে সে কি সঠিক পুরুষ বা এতটাই খাঁটি
যে লিখতে পারবে এইসব
বাঁচবে এটাতে
করবে এটাতে।
এটা নষ্ট না করে যা প্রায় অন্য সবাই করে
হ্যাঁ, সে স্থির করে, সে পারবে আর সে হাত রাখে
তার কোমরে
তার উরুর মাংস ধাক্কা মারে তার উরুতে
চাঁদ উঠে আছে ওইখানে
পৃথিবী কাঁপছে
যখন একটা লাল আলোর ঝলকানি ছুটে যায় আকাশের ভেতর
একটা বাজপাখি তাকে দু টুকরো করে
আর তারা দুজনে গাড়িতে গিয়ে ওঠে
আর চালিয়ে বেরিয়ে যায়
সেটা পরীক্ষা করে দেখবে বলে

চার্লস বুকাওস্কি
(মি অ্যান্ড ইয়োর সামটাইমস লাভ পোয়েমস, কিসকিল প্রেস, ১৯৭২)

বুকাওস্কি যখন এলো ভাস্কর্যের জন্য বসতে সে আমাকে একটা চুমু খেলো। আমার ছোট মেয়েটা নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে বললো, ‘আমার মা-কে চুমু খাবে না’।
বুকাওস্কি আমাকে কতগুলো কবিতার বই দিলো, ‘এখানে গোটা দুই পত্রিকা আছে যেখানে আমার কবিতা বেরিয়েছে। ‘ভ্যাগাবন্ড’ আর ‘ওয়ার্মঊড রিভিউ’ সেরা। মারভিন ম্যালন সেরা কাগজটা করে’।
আমার হাতে মাটি ছিল। আমি কাজ শুরু করে দিলাম। ওর চোখের চারধার আর নাকের খুঁটিনাটি। ও আমার চোখের গভীরে তাকাল যখন আমিও দেখছিলাম ওর দিকে। আমার কেমন যেন করছিল শরীরটা।
‘আমি এখান থেকে চলে যাব,’ আমি বললাম। ‘আমার বোন লা রে একটা অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছে, ওখানেই আমরা সবাই উঠে যাব। এখান থেকে অবশ্য খুব বেশি দূরে নয়। লা রে বড় অ্যাপার্টমেন্টটাতে থাকবে, ] আমি সামনেটা নেব আর জেরি নেবে পেছনেরটা। আমারটাতে একটা ফায়ার প্লেস আছে’।
‘ওটা কোথায়’?
‘রিভারসাইড ড্রাইভে। আমার কারিসার জন্য ভয় হয় পাছে এখানে ও সুইমিং পুলে পড়ে যায়। অ্যাপার্টমেন্টের দরজাটাই তো খোলে একেবারে সুইমিং পুলের সামনে'।
‘নিলী চেরি আর আমি একটা পত্রিকার পাতা যথাযথ ভাবে সাজানোর (কোলেটিং) পার্টি রেখেছি আমাদের পত্রিকা ‘লাফ লিটারারি অ্যান্ড ম্যান দা হাম্পিং গান্স’-এর জন্য এই শুক্রবার। তুনি আসবে’?
‘একটা কপুলেটিং পার্টি, দারুণ, আমার তো কপুলেট করতে ভালোই লাগে...নাকি তুমি বললে কোলেটিং...’
‘ওই পাতাগুলো একসাথে গোছানো আরকি। ওটা কপুলেটিং পার্টিও হতে পারে, যদি তুমি তাই চাও’।
‘একটু মজা করছিলাম। আমি জানি না যাবো কিনা। কারা থাকবে ওই পার্টিতে’?
‘একদল গাঁড় মারানো লেখক’।
‘লেখকদের আমার ভয় করে। ওদের সাথে থাকলে আমি কথাই বলতে পারি না’।
‘আমিও তো লেখক। আমাকে তুমি তো অনেক কিছুই বলেছ।‘
‘এই মাটি নিয়ে কাজ করতে করতে অনেকটা সময় পেয়েছি একে অপরকে জানার’।
‘নীলিটা নার্ভাস। ও ওখানে পাগলা হয়ে যাবে’।
‘কখন শুরু হবে তোমার পার্টি’?
ও আমার মুখের উপর পড়ে থাকা এক গোছা চুল তুলে নিয়ে হাত বুলিয়ে আমার বুকে এসে থামল। আমি উদ্দীপিত হয়ে পড়ছিলাম। হঠাৎ ও উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করল।
‘তোমার বোন তোমার মেয়ের দেখাশোনা করছে, তাই না’?
‘হ্যাঁ’। আমি তাকালাম ওর দিকে। ‘বুকাওস্কি, তুমি কী করছ? ভাস্কর্যটার কী হবে? ভাস্কর্যটা নিয়ে কাজ করা দরকার আরো’।
শুক্রবারের আগে আর দেখা হবে না আমাদের’।
‘আমার বোন উঠনের ওদিকেই থাকে। ও কিন্তু চলে আসতে পারে’।
‘কেয়ার করিনা আমি। তুমি দিনের পর দিন সপ্তাহের পর সপ্তাহ জুড়ে আমাকে ক্ষেপিয়ে তুলছো’।
ও আমাকে দু হাতে তুলে নিয়ে বেডরুমে নিয়ে গেল।
‘তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। দাঁড়াও। এটা ঠিক সময় নয়’।
‘আমি তোমাকে এটা প্রমাণ করে দেবো যে ওই ফলনা কে আমি ভয় পাই না’।
‘আরে ওই কপুলেটিং পার্টি অবধি তো অপেক্ষা করা যায়’।
‘না। এখনই দরকার’।
বিছানাতে আমরা আদর করা শুরু করলাম। আর চুমু খেতে খেতে ও আমার জামা আমার ব্রা খুলতে শুরু করল। আমার প্যান্ট খুলে গেল তারপর আমার প্যান্টি।
‘দাঁড়াও, দাঁড়াও। দেখা যাক না আমরা কতক্ষণ চুমু খেতে পারি’, আমি বললাম।
ওকে থামানো গেল না। এটা বলেও থামান গেল না, ‘বুকাওস্কি ওখান থেকেই রক্তটা বেরোয়’।
আমার তখন মেশানো অনুভূতি, এই হঠাৎ করে ব্যাপারটা ঘটে যাওয়া আর আমার ভয় যে কোন মুহুর্তে আমার মেয়ে যদি চলে আসে, আমাকে ব্যাপারটা উপভোগ করতে দিল না। আমরা একটা পাগল করা যৌন উন্মাদনার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু আসল সময়ে দেখা গেল ওরটা মিঃ পি-র মতোই নরম হয়ে রইল। আমার বুকে যেন ধ্বস নামলো এই সমানে একটানা মদ খাওয়া কি ওর করতে পারার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না কারণ ঠিক তখনই দরজাটায় ধাক্কা দিল কেউ। আর আমরা বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে জামা কাপড় পরতে লাগলাম।

পরে ও যখন আমায় ফোন করলো ও বললো ওরটা নরম হয়েছিল কারণ আমি ওটা ভেতরে নিই নি। ‘তুমি আমায় থামাতে চেয়ে এমন সব কথা বলছিলে যাতে আমি ঘেন্না পাই। ওখান দিয়ে আমরা মুতি’।
আমি হাসলাম, ‘ওই কথাগুলো তুমিই আমায় বলেছিলে কয়েক মাস আগে’।
‘তোমার ভেতরের এই কমেডিয়ানটাকে আমি বেশি ভালোবাসি শিল্পীটার থেকে। যদিও দুটোই একই ব্যাপার। একজন ভালো শিল্পীর ভালো কমেডির বোধ থাকে’।

পরে ওর কবিতা এলো ‘হাফ এন হাফ’-এর জন্য।


ভালোবাসার গান   


আমি তোমাকে খেয়েছি পিচ ফলের মতো
আমি গিলে নিয়েছি দানা
আর আঁশ
তোমার পায়ের ভেতরে বন্দি হয়ে
আমি চুষেছি চিবিয়েছি আর জিভ দিয়ে চেটেছি আর
গিলে নিয়েছি তোমায়।
টের পেয়েছি তোমার শরীরের কাঁপন আর বেঁকে দুমড়ে
এক হয়ে যাওয়া
মেশিন গান চালানো
আর, আমি আমার জিভটাকে বিন্দু করে তুলেছি
আর গিলে নিয়েছি
পাগলে গিয়ে
তোমার ভেতরটার সবটুকু
তোমার যোনি পুরোটাই আমার মুখের ভেতর
আমি কামড়েছি
আমি কামড়েছি
আমি গিলেছি
আর তুমিও
পাগল হয়ে গেছিলে
আর আমি সরে এসে চুমু খেয়েছি তোমায়
তারপর তোমার পেট
তোমার নাভি
তারপর হড়কে নেমে গেছি
তোমার সাদা ফুলের মতো পায়ের মাঝে
আর চুমিয়েছি আর কামড়েছি আর
মুখ দিয়ে খুঁটেছি
সমস্ত সময়
আরেকবার
ওই অসম্ভব যোনির চুলগুলো
ডাকছে আর ডাকছে
যখন আমি নিজেকে সরিয়ে রেখেছি
যতক্ষণ পারি
তারপর ঝাঁপিয়ে পড়েছি ওর উপর
চুষেছি আর জিভ নাড়িয়েছি
আমার আত্মার চুল
আমার আত্মার যোনি
এক মিরাকেল বিছানায়
বাচ্চারা বাইরে চিৎকার করছে
স্কেট করতে করতে
সাইকেল চালাতে চালাতে
বিকেল ৫টায়
সেই অসম্ভব দারুণ সময়ে
বিকেল ৫টায়
সমস্ত প্রেমের কবিতা লেখা হয়েছিল
আমার জিভ সেঁধিয়েছিল তোমার যোনিতে তোমার আত্মায়
আর নীল বিছানার চাদরটা ছিল
আর সেটা গান গাইছিল আর গান গাইছিল
আর গান গাইছিল।

আমার কবিতাটা ভালো লেগেছিল, অবশ্য ‘হাফ এন হাফ’-এর জন্য নয়। পরে ওটা ব্যবহার করেছিলাম ‘মি অ্যান্ড ইয়োর সামটাইমস লাভ পোয়েমস’ বইয়ে আর একটা এরোটিক আন্ডাররগ্রাউন্ড ম্যাগাজিন ‘পারর’-এ পরে যেটা আমি আর আমার বোন জেরি শুরু করি। এটা সেরকম কবিতা নয় যা জন মার্টিন ছাপবে তার ব্ল্যাক স্প্যারো প্রেসের বইয়ে। পরে যখন বুকাওস্কি বুঝতে শিখল পিচ ফলের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো তাকে তখন ওই কাজে ছাড়িয়ে যাওয়া অন্য কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি একটা নতুন গান গাইছিলাম, ‘বুড়ো কুত্তারা নতুন কৌশল শিখে নিতে পারে’।