সোমব্রেরো ফল আউট
রিচার্ড ব্রটিগান
সিয়াটেল
ছেলেটির সাথে
ইউকিকোর এই দু বছরের প্রেমের সময় সে প্রায়ই রাতের এই সময়টা কাটিয়েছে ছেলেটির
সঙ্গে। দশটা নাগাদ তার কাজ শেষ হওয়ার পর সে সোজা চলে আসত ছেলেটির অ্যাপার্টমেন্টে।
আর তার সাথে রাত কাটাত।
মানসিকভাবে
বিপর্যস্ত লোকজনের সাথে আট ঘন্টা কাটিয়ে সে যেত ছালেটির কাছে। কোনো রুগীর
সুইসাইডের চেষ্টা, কারো নার্ভাসব্রেকডাউন, কেউ স্রেফ পাগল ইত্যাদিদের দেখতে হতো, তারপর তাকে ভাগ করে
নিতে হতো ছেলেটার নানান কিসিমের মানসিক চাপ।
মজার ব্যাপার হলো
সে ছেলেটিকে কখনোই তার রুগীদের মতো ভাবেনি। তাকে ভেবেছে এক অন্য রকমের মানুষ। আর
এছাড়াও সে তো তার প্রেমে পড়ে আছে তাই ছেলেটির রোলার কোস্টার মানসিকতা নিয়ে সে কিছু
সিদ্ধান্তে আসেনি।
ছেলেটির সাথে
দেখা হওয়ার অল্প দিন পরেই সে ফিরে পড়েছে তার লেখা সমস্ত বইগুলো আরেকবার এটা দেখতে
যে তার সব সঠিকভাবে মনে আছে কিনা। ছেলেটির সাথে দেখা হওয়ার আগে যখন সে বইগুলো
পড়েছিল তখন তার মনে হয়েছিল সে বইগুলো লিখেছে নিজেকে নিয়ে। বইয়ের মূল চরিত্র আসলে
সে নিজেই।
আবার বইগুলো ফিরে
পড়তে গিয়ে সে বুঝল ছেলেটির ব্যক্তি বৈশিষ্টয়ের ছায়া খুব কমই প্রতিফলিত হয়েছে
বইগুলোয়। সে ভেবেছে ছেলেটি কীকরে নিজের ব্যক্তি বৈশিষ্টকে এভাবে লুকিয়ে রাখতে পারল
তার পাঠকের কাছে? এতো প্রায় জিনিয়াসের কাজ। ছেলেটি এতটাই জটিল যে একটা গোলকধাঁধাকে
সে একটা সরল রেখায় পরিণত করতে পারে। প্রথম প্রথম মেয়েটির মেধার কাছে এটা ছিল
আকর্ষণের বিষয়। কিন্তু যখন এটা নিয়ে সে বিরক্ত হতে শুরু করল তখন অনেক দেরী হয়ে
গেছে। ছেলেটির প্রেমে পড়েছিল সে আর যত ব্যাপারটা খারাপের দিকে এগোল সে আরো বেশি
ভালোবাসতে থাকল ছেলেটিকে।
মেয়েটি যদিও
মর্ষকামী ছিল না।
তবু এভাবেই চলল
ব্যাপারটা।
যে মাসে তারা আর
দেখা করছিল না একে অপরের সাথে সে মাসে অনেক কিছু সে ঠিকঠাক বুঝতে পারছিল। মেয়েটি
ভাবতে লাগল কেন সে সমানে ছেলেটির সাথে সময় কাটিয়ে গেছে, মাথার ভেতর জমে থাকা
ময়লাগুলো সরাতে সরাতে সে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারল অবশেষে। নিজের রুগীদের প্রতি
যত সহজে সে সিন্ধান্ত নিতে পারে তা সে পারেনি ছেলেটির ক্ষেত্রে কারণ সে ভালোবাসত
তাকে।
যেসব ভাবনা সে
ভেবেছিল তার কিছুটা এরকম-
১। ছেলেটির সাথে
কখনোই নীরস মুহূর্ত কাটেনি তার, এমনকি চেলেটি যখন বদ্ধ উন্মাদের মতো আচরণ করছে
তখনো। তার রুগীদের রঙ্গ তাকে বোর করত কারণ তারা কী করবে তা অনুমান করা যেত। কিন্তু
ছেলেটির সমস্যাগুলো ছিল তুলনাহীন, একক। আর ছিল নতুন নতুন নিয়ন্ত্রণহীন ইচ্ছে তৈরির
অসাধারণ ক্ষমতা।
২। অনেক সময় তাকে
খুশী করার জন্য ছেলেটি ছোট ছোটো ব্যাপারেও নজর দিতো।
৩। সব থেকে জরুরী
হচ্ছে ছেলেটির তাকে বিছানায় আনন্দ দেওয়ার ক্ষমতা। সে ব্যাপারে সে ছিল তুখোড়। তার
এই ক্ষমতা যদি ৫০ ভাগও কম হতো তাহলে ছেলেটিকে সে আগেই ছেড়ে দিতে পারত। তাদের
সম্পর্ক কয়েক মাসের বেশি টিকত না।
দুটো বছর অনেকটা
সময়।
তার অনেক কিছু
ভাবার কথা কিন্তু এখন সে ঘুমোচ্ছে আর তার মন অন্য কিছু করছে। স্বপ্ন দেখছে
জাপানের।
ইউকিকো জন্মেছিল
টোকিয়োয় কিন্তু যখন তার ছ মাস বয়স তার বাবা মা চলে আসে আমেরিকায়। তার বাবা ছিলেন
একজন কূটনৈতিক দূত। সে বড় হয়ে ওঠে আমেরিকায়।
দু বছরে একবার জাপানে যেত তারা। তার বাবা মা তাকে ইংরেজি জাপানি দুটোই শিখিয়েছিলেন
কিন্তু যেহেতু সে বড় হয়েছে সিয়াটেল, ওয়াশিংটনে জাপানি ভাষা হয়ে যায় তার সেকেন্ড
ল্যাঙ্গুয়েজ।
যখন সে চোদ্দতে
পা দিয়েছে তার মা ব্যভিচারিণী হয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলে সিয়াটেলের বোইং বিমান
প্লান্টের একজন উচ্চ পদাধিকারী অফিসারের সাথে। তার বাবা ব্যাপারটা জানতে পেরে
নিজের অফিসে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার বাবা ছিলেন
ইম্পেরিয়াল আর্মির একজন অফিসার এবং একজন মাননীয় ব্যক্তি। চিঠি খোলার একটা ছুরি
দিয়ে তিনি হারাকিরি করেন।
মিডিয়া ঘটনাটাকে
অনেকটা জায়গা দিয়েছিল। লাইফ ম্যাগাজিনে এটা নিয়ে একটা আর্টিকেলও প্রকাশিত হয় এবং
এগারোটার খবরেও এটা ছিল।
সমস্ত
নেটওয়ার্কেরই কিছু না কিছু বক্তব্য ছিল।
তার বাবার দেহ
দাহ করা হয় তারপর জাহাজে করে সেই ছাই জাপানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বোইং-এর অফিসার তার
বাইশ বছর বিবাহিত জীবনের স্ত্রীকে ছেড়ে ইউকিকোর মাকে বিয়ে করে আর ইউকিকো ওদের সাথে
থাকতে শুরু করে।
সিয়াটেলে এই
কলঙ্কের কথায় সাড়া পড়ে যায় কারণ অফিসারটির রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল এবং তাকে তা
নিয়ে প্রচুর উৎসাহ দেওয়া হচ্ছিল।
ইউকিকো তার সৎ
বাবাকে বেশি পাত্তা দেয়নি, কিন্তু যতক্ষণ না সে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক
হলো সে ওদের সঙ্গে একই বাড়িতে ছিল। সে তার মাকে খুব ভালোবাসত তাই তার সৎ বাবা
বুঝতেই পারেনি যে ইউকিকো তাকে পছন্দ করে না। এমনকি সৎ বাবার দেওয়া ডাক নাম ‘চিনে
পুতুল’ ইউকিকো সহ্য করেছে দিনের পর দিন।
সে তার মোনরোগের
স্নাতক স্তরের কাজ শেষ করেছে ইউসিএলএ-তে তারপর সানফ্রানসিস্কোতে চলে গেছে যেখানে
সে ইন্টার্নশিপ করে এখন কাজ করছে রাতের শিফটে স্থানীয় এক হাসপাতালের এমারজেন্সিতে।
ইউকিকো জাপানে ন
বার গেছে, অল্প কদিন থেকেওছে। এখন সে স্বপ্ন দেখছে কিয়োটোতে শরৎ কালের বৃষ্টির।
কিয়োটো তার প্রিয় শহর।
সে ইচ্ছে করেই
তার ছাতা ফেলে এসেছে তার মাসির বাড়ি আর তার মুখ আর চুলে বৃষ্টির ছোঁয়া তার ভালো
লাগছে।
সে যাচ্ছিল
গোরস্থানে যেখানে তার বাবার দেহের ছাই কবর দেওয়া হয়েছে। এমনিতে ওখানে গেলে তার মন
খারাপ হয় কিন্তু আজ তা হয়নি। বৃষ্টি তাকে খুশী করেছে।
সে জানে বাবা ব্যাপারটা
বুঝবে।