Thursday, September 1, 2016

হ্যারল্ড নর্স










আমি পুরুষ নই



আমি পুরুষ নই, রোজগার করতে পারিনা, আমার পরিবারের জন্য নতুন নতুন জিনিস কিনে দিতে পারিনা। আমার বয়োব্রণ আর লিঙ্গে যৌনতার অভাবে ফুসকুড়ি হয়ে আছে।

আমি পুরুষ নই। আমার ফুটবল ভালো লাগে না, বক্সিং বা গাড়ি।
আমার ভালো লাগে নিজের আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করতে। এমনকী ভালো লাগে বন্ধুর কাঁধে নিজের হাতটা রাখতে।

আমি পুরুষ নই। যে চরিত্রে আমাকে অভিনয় করতে দেওয়া হয়েছে সে চরিত্রে আমি অভিনয় করব না – যে রোল তৈরি করেছে ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ, প্লেবয়, হলিউড আর অলিভার ক্রোমওয়েল, টেলিভিশন আমার আচরণ নিয়ে নির্দেশ দিতে পারে না।  

আমি পুরুষ নই। একবার যখন একটা কাঠবিড়ালিকে গুলি করেছিলাম আমি শপথ নিয়েছিলাম আর কখনো হত্যা করব না। মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি আমি। রক্ত দেখলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার ফুল ভালো লাগে।

আমি পুরুষ নই। যুদ্ধে লড়তে যাওয়ার বিরোধিতা করে আমি জেল খেটেছি। আমি লড়তে যাই না যখন আসলি পুরুষ আমাকে সমকামী বলে পেটায়। ভায়োলেন্স আমার পছন্দ নয়।

আমি পুরুষ নই। আমি কখনো কোন মেয়েকে ধর্ষণ করিনি। আমি কালোদের ঘেন্না করি না। ফ্ল্যাগ নাড়ালেই আমি আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ি না। আমি মনে করি না আমেরিকাকে আমায় ভালোবাসতেই হবে অথবা ছেড়ে যেতে হবে। আমি মনে করি আমেরিকাকে নিয়ে আমার হাসিঠাট্টা করা উচিৎ।

আমি পুরুষ নই। আমার কখনো যৌনরোগ হয়নি।

আমি পুরুষ নই। প্লেবয় আমার প্রিয় পত্রিকা নয়।

আমি পুরুষ নই। আমি দুঃখে কাঁদি।

আমি পুরুষ নই। নিজেকে নারীদের থেকে উৎকৃষ্ট মনে হয়না।

আমি পুরুষ নই। পুরুষদের জন্য তৈরি আঁটসাঁট স্পোর্টস জাঙিয়া আমি পরি না।

আমি পুরুষ নই। আমি কবিতা লিখি।

আমি পুরুষ নই। আমি ধ্যান করি ভালোবাসা আর শান্তির।

আমি পুরুষ নই। আমি তোমাকে ধ্বংস করতে চাই না।         


Sunday, August 21, 2016

চার্লস বুকাওস্কি









বুকাওস্কির প্রিয় রঙ ছিল হলুদ। রঙের প্রিয়তা দিয়ে মানুষের মানসিকতা নাকি বোঝা যায়, বলে লোকে। আরো কত কী যে বলে লোকে অথচ তিনি ভালোবাসতেন জানালার খড়খড়ি বন্ধ করে দুপুর অবধি টানা ঘুমোতে। সন্ধে থেকে ভোর রাত অবধি চলত তার লেখালেখি, রেডিয়োতে ক্ল্যাসিকাল চ্যানেলে বাখ, বেটোভেন, শুবার্ট শোনা আর বিয়ার খাওয়া। তিনি খুব ভালোবাসতেন ভারতীয় বিড়ি। জীবনের শেষ ২০-২৫টা বছর রাজস্থান থেকে যাওয়া ‘শের’ বিড়ি খেয়েছেন তিনি। যদিও তা তাকে ভারতে আসতে উদ্বুদ্ধ করে নি। লোকে বলে তিনি নাকি বিট জেনারেশনের। আর এই বিট জেনারেশনের অনেকেই শান্তির খোঁজে ভারতে এসেছেন বার বার এ কথা তো আমরা জানি। জানাজানি এ কথা। এমনকি গিন্সবার্গ বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ভারত থেকে ফেরার পর এবং কবি বব রোজেন থাল আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে আরো জানিয়েছিলেন যে তার মৃত্যুর পর তাকে দাহ করা হয় এবং সেই ছাই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পৃথিবীর নানা জায়গায়।

 এ ধরনের বিশ্বাস বুকাওস্কির ছিল না। তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি এভাবে ভেবেছেন –‘বিশ্বাস জিনিসটা খারাপ না যাদের আছে, স্রেফ আমার ঘাড়ে তুলতে আসবেন না। কলের মিস্ত্রীকে ওই ভগবানের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি আমি। ওই মিস্ত্রীগুলো দারুণ ভালো কাজ করে। ন্যাড়গুলো যাতে ঠিকঠাক বয়ে যায় তার ব্যবস্থা করে’।

এরকম একটা মানুষ তাই আদি ভৌতিক, আদি দৈবিক কোনো টানেই ভারতে আসতে চাননি। বরং আস্থা রেখেছেন মদে। তার কাছে মদ ছিল এ পৃথিবীর সেরা আবিষ্কার। কারণ আমাদের সমাজে অনেকেই যারা ভুল সময়ে, ভুল জায়গায় আঁটকে গেছেন মদ তাদের সুইসাডের দিকে যেতে দেয়নি বরং আঁটকে রেখেছে। মদই সেই একমাত্র গান, নাচ যা তাঁদের জন্য পড়ে আছে এখনও। শেষ বাজার চালু সস্তা মিরাকেল।

বুকাওস্কি যে মদ খেতে ভালোবাসতেন তা বলাই বাহুল্য। তিনি নিজেই বলেছেন সে কথা। এমনকি তাঁর সমস্ত লেখালিখি মদের নেশায় বুঁদ হয়ে, সে কথাও তিনি বলেছেন। এক ধরনের  বাওয়াল-বাজ পেঁচো মাতালের ইমেজ তিনি তৈরি করেছিলেন নিজে, নাকি তাঁর পাঠকদের এই ফেটিশ ভালো লাগতো বলেই এটা করতেন! কবিতা পাঠের আসরে বিয়ারের বোতল নিয়ে কবিতা পাঠ করতেন আর পাঠ চলাকালীন বিয়ার পান করতেন। যেন কবিতা পাঠের থেকে এইসব বেশি জরুরি। শ্রোতারা হই হই করে সেটাকে সমর্থন জানাতো। পাঠকদের এই উসকানি ভালোই লাগতো বলতে হবে। কারণ কবিকে তাদেরই একজন বলে কল্পনা করতে সুবিধে হত তখন। অথচ জীবনের শেষ দিকে যখন তিনি লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হন তখন মদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাতে তার লেখালিখির উপর কোনো চাপ পড়েনি। মদ না খেয়েই তিনি শেষ করেছেন তার শেষ উপন্যাস ‘পাল্প’, লিখেছেন অজস্র কবিতাযা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। এখনও হয়ে চলেছে।

১৯৭২এর সেপ্টেম্বর মাসে তাকে সান ফ্রানসিস্কো নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যান তাঁর প্রকাশক ‘সিটি লাইটস বুকস’। একটি ছোটো গল্পের সংকলন ‘ইরেকসান্স, ইজ্যাকুলেসান্স, একজিবিসান্স এন্ড জেনারেল টেলস অফ অর্ডিনারি ম্যাডনেস’-এর সাফল্যের পর তাকে সেখানে ডাকা হয়। যে বই তিনি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর তরুণী বান্ধবী তখনকার প্রেমিকা, লিন্ডা কিং কে --
 
'যে আমাকে এনে দিয়েছে
যে আবার ফের
নিয়ে যাবে'

লিন্ডা কিং-এর সাথে বহু বছর একত্রে বাসও করেছেন বুকাওস্কি। বুকাওস্কির জীবিত কালে সেই বিখ্যাত হেড বাস্টটি লিন্ডা কিং-এরই সৃষ্টি। লিন্ডা ছিলেন আর্টিস্ট এবং কবি। বুকাওস্কির সাথে তার কবিতাও একসাথে বই হয়ে বেরিয়েছে। কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে তার নতুন বই ‘লাভিং এন্ড হেটিং চার্লস বুকাওস্কি এ ট্রু স্টোরি (২০১৪)।’ সেখানে ছাপা হয়েছে লিন্ডা কিং কে লেখা বুকাওস্কির প্রেম পত্র, একে অপরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রচুর কবিতা। এ বই পড়া একটা অভিজ্ঞতা। আমার কয়েকটা প্রিয় বইয়ের মধ্যে এটা থাকবে। 
  
টেলিগ্রাফ হিল-এর জিম্নাসিয়ামে ৮০০ লোক টিকিট কেটে জড়ো হয়েছেন সেই লেখক কে দেখতে যিনি লিখেছেন ‘লাইফ ইন এ টেক্সাস হোর হাউস’ ইত্যাদি সব উল্টো পাল্টা লেখা। যা বলা হয় তার নিজের জীবন থেকে নেয়া। এই জনতার সামনে আত্নপ্রকাশ করতে চাইছিলেন না বুকাওস্কি। বিশেষত বিট লেখকদের নিজের শহরে, যে দলটিকে না তিনি পছন্দ করতেন, না নিজিকে ভাবতেন তাদের একজন হিসেবে। কারণ তিনি মনে করতেন দল বেঁধে আর যাই হোক সাহিত্যটা হয় না। দল বাঁধে দুর্বলরাই, কারণ তারা একা একা দাঁড়াতে পারে না। একে অপরকে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের। আর এও মনে করতেন গিন্সবার্গ হাউল-এর পর আর কিছু উচ্চাঙ্গের লেখেননি। ওই যে লোকে বলে তিনি নাকি বিট জেনারেশনের কথাটা এবার কিছুটা ভুলভাল মনে হচ্ছে কি আপনার? হওয়ারই কথা।
     
তো একটা ভয় কাজ করছিল তার ভেতর ভেতর। তাই সাহস বাড়াতে সারাদিন মদে ডুবেছিলেন। স্টেজে ওঠার আগে বার দুই বমিও করলেন। তিনি তার বন্ধু টেলর হ্যাকফোর্ড কে বললেন –‘এর থেকে ফ্যাক্ট্রিতে কাজ করা সোজা, এত চাপ ওখানেও থাকে না।‘

জনতা তাকে চিনত তাঁর ছোটো গল্পের জন্য। কিন্তু তিনি কবিতা পাঠ করলেন। মদ্য পান, জুয়া, যৌনতা এমনকি পাইখানায় যাওয়া নিয়ে কবিতা সব। তিনি জানতেন এসব কবিতা প্রভূত আনন্দ এবং আহ্লাদ দেবে শ্রোতাদের। শুধু কবিতা পাঠই নয় তিনি কথাবার্তা শুরু করলেন শ্রোতাদের সঙ্গে। খেপিয়ে দিলেন একেবারে। শেষে কবিতা পাঠ শেষ হল বোতল ছোঁড়াছুড়ি দিয়ে। সিটি লাইটস-এর ফারলিংঘেট্টি শেষমেশ  কোনোরকমে স্টেজের পেছন দিক দিয়ে বের করে আনেন বুকাওস্কিকে।

  বুকাওস্কি জন্মেছিলেন আন্দেরনাখ, জার্মানিতে। তিন বছর বয়সে বাবা মা’র সাথে আমেরিকা চলে আসেন। বড়ো হয়ে ওঠেন লস অ্যাঞ্জেলস-এ যেখানে তিনি জীবনের পঞ্চাশ বছর কাটিয়েছেন। জীবনে বহু রকম কাজ করেছেন। পোস্টঅফিসের ক্লার্ক থেকে মুটেগিরি অবধি। কিন্তু কোনটাতেই বেশিদিন টিকতে পারেননি। তাই অনেকসময় অনাহারে কাটাতে হয়েছে। একটা ক্যান্ডিবার আর শুধু হাফ বোতল সস্তা ওয়াইন দিয়ে তিন-চারদিন কাটিয়ে দিয়েছেন মাঝে মধ্যেই।

অনেকসময়ই সততার সঙ্গী হয় কৌতুক রসবোধ। বুকাওস্কি প্রথমেই নিজেকে নিয়ে মজা করতে ভালবাসতেন, যখন তিনি কৌতুক করতেন চারপাশের উন্মাদ পৃথিবীটা নিয়ে। এই উচ্চাঙ্গের অ্যাবসার্ডিটির চেতনা তার সমস্ত প্রকাশিত লেখার মধ্যেই দেখা যাবে। সম্ভবত চ্যাপলিন বলেছিলেন সেই আধুনিক মানুষ যে নিজেকে নিয়ে মজা করতে পারে। যা সারাটা জীবন করে দেখিয়েছেন চ্যাপলিন।

বুকাওস্কি একটা খবরের কাগজের কলম লিখতেন বেশ কয়েক বছর। যা পরে বই হয়ে বেরোয়। তার কাটানো জীবনে খানিকটা রঙ চড়িয়ে যে সব গল্প পাঠককে পরিবেশন করেছেন সে সব নিয়ে ‘নোটস অফ এ ডার্টি ওল্ড ম্যান’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। এই ডার্টি ওল্ড ম্যানটি অবশ্যই বুকাওস্কি নিজে। আমেরিকার সমাজের নিচু তলার জীবন, তার ভায়োলেন্স, সেক্স, ব্যার্থতা সব উঠে এসেছে সে বইয়ে। যদিও অনেকেই এটাকে তার সেরা বই বলে মানতে চান না। যদিও জনপ্রিয়তার নিরিখে এ বইও কোনো অংশে কম নয়। তাদের বিচারে নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে অনেক বেশি সঠিক ভাবে কাজ করেছেন তিনি তাঁর কবিতার বই ‘লাভ ইজ এ ডগ ফ্রম হেল’ এবং তার সেই অসাধারণ তৃতীয় উপন্যাস ‘উওমেন’-এ। 
   
 তিনি ছিলেন মূলত লিটল ম্যাগাজিনের লেখক। প্রথম দিকে আমেরিকায় তাঁকে লেখক হিসেবে কেউ পাত্তা দিত না। ইয়োরোপ কিন্তু তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। তাঁর লেখার সারকাস্টিক অবস্থান ইয়োরোপীয়দের মানসিকতার সঙ্গে মেলে। তাই হয়তো কার্ল ওয়েসনার তার লেখার প্রেমে পড়ে  জার্মান ভাষায় অনুবাদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সে সব বই এডিশানের পর এডিশান হু হু করে বিক্রি হয়েছিলমনে রাখা দরকার এই কার্ল ওয়েসনারই হাংরিদের লেখা পত্রও অনুবাদ করেছিলেন বলে শোনা যায়। এবং পরে ধিরে ধিরে আমেরিকার লিটল ম্যাগাজিনগুলো তাঁর পাশে দাঁড়ায়। একের পর এক ছোটো ছোটো বই প্রকাশিত হতে থাকে এইসব স্বাধীন প্রেস থেকে। বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয় তাকে নিয়ে। ১৯৬৯ সালে, তখন বুকাওস্কির বয়স ৪৯, ব্ল্যাক স্প্যারো প্রেসের জন মার্টিন তাকে পেটের জন্য এই অনাবশ্যক ছুটছাট কাজ করার থেকে বাঁচিয়ে দেন। প্রতি মাসে যাতে উপোস দিতে না হয় তার ব্যবস্থা করেন তিনি। এই সামান্য কিছু ডলারের আস্থায় বুকাওস্কি সমস্ত আজে বাজে কাজ ছেড়ে লেখাতে মন দেন। অর্থাৎ ফুল টাইম লেখক হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেন। তারপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জন মার্টিন কথা রেখেছিলেন। বুকাওস্কির প্রায় সব বইয়ের প্রকাশক ছিলেন ব্ল্যাক স্প্যারো।   

কবিতাকে সোজাসাপ্টা ভাষায় লিখে আরেকবার তাকে মানুষের কাছাকাছি এনেছিলেন তিনি। কবিতায় তথাকথিত কাব্যিক মারপ্যাঁচে তার বিশ্বাস ছিলনা। প্রফেসরদের একে অপরের পিঠ চুলকোবার বস্তু কোনো। কবিতা যে ভিন গ্রহের কোনো বস্তু নয় তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তিনিপাঠকরা আবার ফিরে এসেছিলেন কবিতার কাছে। কবিতার বই বিক্রি হচ্ছিল দেদার


হেমিংওয়ে আর জন ফান্টের প্রভাব তার লেখায় ছিল। তাদের মতই তিনি বিশ্বাস করতেন ছোটো বাক্য গঠনে, কোনো রকম ভণিতা ছাড়া খুব সাধারণ ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে, লেখাতে ছোটো ছোটো প্যারাগ্রাফের ব্যবহার ইত্যাদি। তা তিনি কবিতা, গদ্য যাই লিখুন না কেন এই নিয়ম তিনি আজীবন মেনে চলেছেন তার লেখালিখিতে। জন ফান্টে ছিলেন তার প্রিয়তম লেখকদের মধ্যে একজন, এতটাই যে ফান্টের প্রথম উপন্যাস ‘আস্ক দ্য ডাস্ট’ তিনি তাঁর প্রকাশককে আবার ছাপতে অনুরোধ করেন। সে বইয়ের একটা মুখবন্ধও তিনি লিখে দিয়েছিলেন। সে সময় ফান্টে অসুস্থতাকে প্রায় ভুলতে বসেছে সবাই। অসুস্থ ফান্টে তখন সে বইয়ের জন্য কিছু অর্থ সাহায্য পেয়েছিলেন সে সময়।

তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাই তার লেখার মূল রসদ একথা বুকাওস্কি নিজেই বলেছেন। তিনি বলেছেন ৯৭% চোখে দেখা অভিজ্ঞতা আর ৭% সাহিত্য নিয়ে তার কারবার। এটাই বুকাওস্কি। তার বইগুলোতে একথাই প্রমাণ হয়েছে বার বার। আমেরিকার নিচুতলার মানুষের জীবন নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার সৎ রিপ্রেজেন্টেশান যেখানে তিনি নিজে সবসময় উপস্থিত। কখনো চিনাস্কি, কখনো হ্যাঙ্ক হিসেবে। এটা মনে রাখা দরকার যে তাঁর বন্ধু বান্ধবও তাকে ডাকত হ্যাঙ্ক বলে। তিনি বন্ধুবান্ধবদের কাছে লেখা চিঠিপত্রেও হ্যাঙ্ক এই নামে সই করতেন। কখন যেন গল্পের চরিত্র আর তিনি মিলেমিশে এক হয়ে গেছেন।

বুকাওস্কির জীবনে নারীরা এসেছেন বার বার। সেই নারীদের নিয়ে তাঁর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘উওমেন’। যদিও তাঁর জীবনে আসা প্রথম নারী জেন কুনিকে তিনি কোনোদিন ভুলতে পারেননি। নেশা আর অপরিণামদর্শী জীবন যাকে শেষ করে দিয়েছিল। 






জেন কুনি বেকারের জন্য, মৃত্যু ২২-১-৬২


আর তুমি চলে গেলে
আমাকে এখানে ফেলে
সেই ঘরে যেখানে জানালার পর্দাটা ছেঁড়া
আর একটা ছোটো লাল রেডিওতে বাজচ্ছে সিগফ্রাইডের আইডল।

আর তাই তুমি চলে গেলে দ্রুত
যেভাবে এসেছিলে আমার কাছে,
আর আমরা আগেও বিদায় জানিয়েছি।
আর আমি যখন তোমার মুখ আর ঠোঁট মুছছি
তুমি তোমার চোখ এত বড় করে খুললে
যা আমি আগে কখনো দেখিনি আর বললে
‘আমি হয়ত জানতাম
এটা তুমিই হবে’ ... তুমি দেখেছিলে আমায়
কিন্তু বেশিক্ষণ নয়
আর একজন সরু সাদা পায়ের বুড়ো ভদ্রলোক
বলল, ‘আমি মরতে চাইনা’,
আর তোমার রক্ত উঠল আবার
আমি অঞ্জলি ভরে ধরেছিলাম তা
যা বাকি ছিল
সব রাতের আর দিনের
আর বুড়োটা বেঁচে ছিলো তখনো
কিন্তু আমরা নই
আমরা নই।

আর তুমি চলে গেলে যেভাবে এসেছিলে,
তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে দ্রুত,
তুমি আগেও আমাকে ছেড়ে গেছ বহুবার
তখন ভাবতাম তা আমার মৃত্যু আনবে
কিন্তু আনেনি
আর তুমি ফিরে এসেছ।

এখন আমি লাল রেডিওটা বন্ধ করে দিয়েছি
আর কেউ একটা পাশের ফ্ল্যাটে ধাম করে দরজা বন্ধ করল।
এটাই শেষ অভিযোগ, রাস্তায় আর তোমায় পবো না আমি
অথবা ফোনটাও বাজবে না তবু প্রতিটা মুহূর্ত
আমাকে টিকতে দেবে না।

এটুকুই যথেষ্ট নয় যে অনেক মৃত্যু আছে
আর এই প্রথম তাও নয়
এটুকুই যথেষ্ট নয় যে আমি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকব
হয়ত আরো কিছু বছর।

এটুকুই যথেষ্ট নয়
যে ফোনটা মৃত একটা পশুর মত যা
কথা বলবে না, সে তো কথা বলেছে
কিন্তু এখন সারাটা সময় ভুলভাল গলায়।

আমি অপেক্ষা করেছি আগেও আর তুমি চলে গেছ
দরজার ভেতর দিয়ে, এখন আমার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।








Monday, July 25, 2016

কার্সন ম্যাককুলার্স

সে মারা গেছিল মদ খেয়ে খেয়ে
একটা মহাসমুদ্রের জাহাজের
ডেকচেয়ারে
চাদরে মোড়া।

তার সব বই
ভয় পাওয়া একাকীত্বের

তার সব বইয়ের
ভালোবাসাহীন ভালোবাসার
নিষ্ঠুরতা

শুধু মাত্র পড়েছিল

যখন হাঁটতে বেরোনো
ছুটি কাটাতে আসা একজন
তার মৃত শরীর আবিষ্কার করল

ক্যাপ্টেন কে গিয়ে জানাল

আর তাকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হল
জাহাজের
অন্য কোনখানে

আর সব কিছুই
চলতে লাগল
যেভাবে
সে লিখেছিল।

~  চার্লস বুকাওস্কি
অনুবাদ ~ শুভঙ্কর দাশ



Sunday, June 19, 2016

প্রেয়ার ফ্ল্যাগগুলো






তুমি আর ফিরবে না
ফিরতে পারবে না আর,
জানিয়েছ।

নদীও পারে না ফিরতে,
তবু পুরনো ছবিগুলো জলের গভীরে কোথাও
গা ঢাকা দিয়ে ঠিক র‍্য়ে যা্বে

জলের উপর হাত রেখে ডাকলে
তারা যে ভেসে উঠে আঙুলে জড়ায়
সেতো তুমি জানো।

সেই যে ছমাস পর তোমার স্মৃতির সাথে
আমার স্মৃতির দেখা হয়ে গেল
কাঠের একটা ঝুলন্ত ব্রিজের উপর

যেখানে আমরা কেউ নেই।

হাওয়া দিচ্ছিল আর প্রেয়ার ফ্ল্যাগগুলো
বাতাসের কানে কানে গল্প করছিল আমাদের।
ব্রিজটাও কি দুলে উঠল সেই কথা শুনে?

কখন এলে?
যেন তুমি জানতে তুমি ডাকলেই
তারা আসবে,
ভেসে উঠবে জলের উপর।
অথবা বন বাদাড় ভেদ করে
ছুটে আসবে চেনা সব হাওয়া

ওই প্রেয়ার ফ্ল্যাগগুলো সাক্ষী
যারা হই হই করছে এখন।

Friday, June 3, 2016

জ্যাক মিশেলিন-এর কবিতা

জ্যাক মিশেলিন একজন আমেরিকান কবি। রাস্তা ঘাটে কবিতা পড়ে বেড়াতেন। কোন বড় প্রকাশক তার বই কখনো প্রকাশ করেনি। বেশির ভাগ বই বেরিয়েছে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশকদের প্রকাশনা থেকে। স্ট্রিট পোয়েট মিশেলিন বেঁচেছিলেন দারিদ্রের সীমা বরাবর। হার্ট অ্যাটাকে মারা যান ১৯৯৮-এর ২৭এ ফেব্রুয়ারি। তাকে বিট জেনারেশনের কবি বলা হলেও তিনি মনে করতেন ‘বিট জেনারেশন আসলে একটা মিডিয়া ফ্যান্টাসি। এই প্রথম বাংলায় তার কবিতা। অনুবাদ ~ শুভঙ্কর দাশ।








পৃথিবীর শিশুদের জন্য একটি কবিতা


একটি শিশু হাঁটছে স্বপ্নের ভেতরে
সেই তারার রাত্রিতে মেয়েটির চোখ দুটো নাচছে
যেদিন পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে
জিপসিরা ফিরবে ঘরে
তারা চিরদিনের জন্য ঘরে ফিরে আসবে
আর সমস্ত নৌকো যা কখনো জলে ভাসেনি
চিরকালের জন্য ভেসে যাবে জলে
আর যে সমস্ত ফুল বড় হয়ে ওঠেনি
চিরটাকালের জন্য ফুটে উঠবে
একটি শিশু হাঁটছে স্বপ্নের ভেতরে
আর সমস্ত তারা যারা চমকায়নি ঝকমক করে উঠবে চিরদিনের জন্য
আর সমস্ত শিশু যারা নাচতে পারেনি এতদিন তারা নাচবে চিরটাকাল
একটি শিশু হাঁটছে স্বপ্নের ভেতরে




তাই শুধু সৃষ্টিশীল যা সীমিত


যখন ভালবাসা সৃষ্টি করে
যখন স্নেহ সৃষ্টি করে
সে শব্দ সমস্ত শব্দের ভেতর সেরা
যখন মানুষ আর মানুষী সৃষ্টি করে এক শিশুর জন্ম হয়
যখন ভয় সৃষ্টি করে রাগ জন্মায়
যখন নিঃসঙ্গতা সৃষ্টি করে হতাশা জন্মায়
যখন ব্যবসা সৃষ্টি করে অতিক্রিয়তা জন্মায়
যখন খবরের কাগজ সৃষ্টি করে রাজনীতিবিদ জন্মায়
যখন আর্ট গ্যালারি সৃষ্টি করে তখন টাকার জন্ম হয়
কবরখানা সৃষ্টি করে না
মিউজিয়াম সৃষ্টি করে না
হাঁসপাতাল সৃষ্টি করে না
জেলখানা সৃষ্টি করে না
শক্তি সৃষ্টি করে না
শুধু ভালবাসাই সৃষ্টিশীল
আর তা খুবই সীমিত





সবুজ


লোভের রঙ সবুজ আর ঘাস আর গাছের পাতার
সবুজ চোখ ডাইনি আর মাগিদের
মাঠ আর পাহাড়ের রঙ সবুজ
আইসবক্সে পচতে থাকা বুকাওস্কির
চিজের রঙও সবুজ
সবুজ ফারলিংগেট্টির টুপি আর বিল সারোয়ানের বুক
নরমান মেলারের মুখের চারদিকের বলয়ও সবুজ
সবুজ জেনিস জপলিনের আকাশ আর তার বুক
জ্যাক কেরুয়াকের মটরের স্যুপের রঙও সবুজ
যা তাঁর মা বানাতেন তাঁর জন্য
সবুজ আমার গ্যাম্বলার প্যান্টের রঙ
সবুজ জেড পাথরের রঙ
ব্রোকলি সবুজ, পালং শাক আর মটরও সবুজ
সাপেরা সবুজ, মুল্ডন এল্ডার সবুজ, চার্লিও সবুজ
রাসপুটিন ছিল লাল আর সবুজ, লাল আর সবুজে মিলে হয় বাদামি
সবুজ বেড়ালের চোখগুলো, পান্না, জেড পাথর
জঙ্গল ভর্তি সবুজে
গ্রিনবে প্যাকারসরা সবুজ
পিশাচের চোখ সবুজ
আমার পাছা যখন ব্যাথা করে তা সবুজ
ওয়াল স্ট্রিট সবুজ
স্যা্মরক্স সবুজ
সেন্ট প্যাট্রিক্স ডে সবুজের সমুদ্র
পুরোহিত আর নানরা সবুজ নাড়ায়
সবুজ মানায় লাল, নীল আর হলুদ আর অফ হোয়াইটের সাথে
সমুদ্র সবুজ
আছে সবুজ টুপি, ব্লাউজ, স্টকিং, প্যান্ট আর
হ্যাণ্ডব্যাগ
সবুজ একটা কঠিন রঙ
সবুজের থেকে দূরে থাকুন
ওটা আপনার নাকের ফুটোর কফ-দলা
সাবধান লাল টুপি পরা সবুজ ছেলেপুলেদের থেকে
টাকা ছাপা হয় সবুজে
জলদস্যুরা সবুজ পরে
পৃথিবীর মাঠ সবুজ, হলুদ আর নীল
সমুদ্র সবুজ
লতা পাতায় জড়াজড়ি সবুজ
পৃথিবী সবুজে ভর্তি
সবুজ চোখো বেড়ালটা রাস্তা দিয়ে নেচে নেচে গেল
সবুজ, আমি তোমায় ভালবাসি সবুজ

Friday, April 22, 2016

অসম্পাদিত চার্লস বুকাওস্কি

আমেরিকান কবি বুকাওস্কির কবিতা আমি আগেও অনুবাদ করেছি। প্রথম কুড়িটা কবিতা নিয়ে গ্রাফিত্তি থেকে একটা ছোটো বই বেরিয়েছিল। তার সাথে পরে আরো তিরিশটা কবিতা জুড়ে ভাষালিপি থেকে বেরোয় ‘চার্লস বুকাওস্কির কবিতা’। এই কবিতাগুলো নতুন। দৈবাৎ আমার  হাতে আসে একটা বই। ‘বুকাওস্কি ব্যাক টু দা মেশিনগান’। বইটা বার করেছেন পৃথিবীর কয়েকজন বুকাওস্কি ভক্ত মিলে। একটি আন্ডারগ্রাউন্ড প্রকাশনাই বলব। কারণ প্রকাশকের নামধাম ঠিকানা ওতে কিছুই নেই। ওরা কেন এটা করলেন? কারণ তারা দেখছিলেন ১৯৯৪এ বুকাওস্কির মৃত্যুর পর বড় বড় প্রকাশকরা বুকাওস্কির লেখা কাটা ছেঁড়া করে নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে তা সম্পাদনা করে প্রকাশ করছেন। ম্যানুস্ক্রিপ্টের সাথে মেলালে যা অনেকটাই আলাদা। বুকাওস্কির লেখার ধার কমিয়ে করা হয়েছে মোলায়েম। তাই তারা সরাসরি ম্যানুস্ক্রিপ্টের সাথে মিলিয়ে তার রচনা প্রকাশে সচেষ্ট হয়েছেন। যদিও এর জন্য তাদের কারাবাস পর্যন্ত ঘটতে পারে। ওই বইয়ের প্রথম খণ্ড থেকে এই অনুবাদ গুলো। আসলে আমার কিছু করার ছিলনা ওই প্রতিবাদে গলা মেলানো ছাড়া।   









আবার আঁটকে গেছি কোনো অসম্ভব অবস্থায়



আর ওই বড়কা পাওয়ালা লোকটা, পাঁঠা, নড়ছিল না
আমি তখন দু সারি আসনের মাঝের পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম, সে রাতে
গোলাবাড়ির নাচে এলমার হোয়াইটফিল্ড একটা দাঁত খুইয়েছিল
শক্তিশালী এডি গ্রিনের সাথে লড়াইয়ে,
ওর রেডিওটা কেড়ে নেব আমরা, ওর ঘড়িটাও, বলছিল ওরা
আমার দিকে আঙুল তুলে, শালা ইয়াঙ্কি, কিন্তু ওরা জানত না
আমি এক উন্মাদ কবি আর আমি ওখানেই কাৎ হয়ে ওয়াইন খাচ্ছিলাম
আর ওদের মেয়েমানুষদের আদর করছিলাম
আমার চোখ দিয়ে, আর ওরা ভয় পাচ্ছিল, কুঁকড়ে যাচ্ছিল
যে কোনো ছোটো শহরের গবাদি পশুর মত
ভাবছিল কীভাবে আমাকে খুন করবে
কিন্তু প্রথমে
বোকার মত
খুঁজছিল একটা কারণ, আমি ওদের বলতে পারতাম
এই কিছুদিন আগেই
আমি একজনকে প্রায় মেরে ফেলেছিলাম কারণের অভাবে
তার বদলে আমি ৮.১৫-র বাস ধরলাম
মেম্ফিস যাওয়ার।





স্বীকৃতি পাওয়ার অভিশাপ



স্বীকৃতি পাওয়ার অভিশাপ
যেখানে এমনকি
জিনিয়াসরাও
ব্যর্থ হয়
আর প্রতিভা সব সময়
বেশ্যাবৃত্তি করে,

সাবধান হে ছোকরার দল
ওখানে পৌঁছতে পারাটাও
সোজা ছিলনা একেবারেই,
আর ওখান থেকে ফিরে আসাও চলে না,
মনে রেখ ঠাণ্ডা ঘরগুলোতে
তুমি কী রচনা করেছিলে,
আর জেনো
ভগবান সদয় ছিলেন,
আর এই মুহূর্তে
যারা বেঁচে আছে সেই জনগণ
কিছুই ঠিক করেন না
নিজেরা
অন্তত তুমি তো
আদৌ না।






মারিপোসা অ্যাভিনিউয়ের পাশে ঘাসের ভেতর একটা মৌমাছির মৃত্যু



মৌমাছি নিচে পড়ে গেছে, মৌমাছি নরকপ্রাপ্ত, ভাগ্যহত,
ঘড়ির চোখের ইশারা আমাদের সবাইকে নিয়েছে
৩০৯-এর মাতাল পেইন্টার ভগবানের থেকে
কোনো অংশে খারাপ নয়
সেও শেষমেশ মাথা ঘুরে পড়ে থাকবে
তার সমস্ত নাড়িহীন সৃষ্টির ভেতর
আর তাই রৌদ্র মাতালেরা চলে যাবে পুব দিকের পথে
আর চিরকেলে ৫ম রাস্তারা
যেন মোৎজা্টের পিয়ানো কনচেরটো
যা কিছু পড়ে আছে তার উপর যেন লাফিয়ে পড়েছে বাঘেদের মত,
মৌমাছি নিচে পড়ে গেছে, মৌমাছি নরকপ্রাপ্ত হোক আর ভাগ্যহত
যেভাবে আমরা
যা এক ফোঁটা বাকিটাকি পড়ে আছে,
আর ঘাস আর ফুলের কুঁড়ি
আর পাড়ার মেয়েটা হেঁটে চলেছে।






জেন কুনি বেকারের জন্য, মৃত্যু ২২-১-৬২



আর তুমি চলে গেলে
আমাকে এখানে ফেলে
সেই ঘরে যেখানে জানালার পর্দাটা ছেঁড়া
আর একটা ছোটো লাল রেডিওতে বাজচ্ছে সিগফ্রাইডের আইডল।

আর তাই তুমি চলে গেলে দ্রুত
যেভাবে এসেছিলে আমার কাছে,
আর আমরা আগেও বিদায় জানিয়েছি।
আর আমি যখন তোমার মুখ আর ঠোঁট মুছছি
তুমি তোমার চোখ এত বড় করে খুললে
যা আমি আগে কখনো দেখিনি আর বললে
‘আমি হয়ত জানতাম
এটা তুমিই হবে’ ... তুমি দেখেছিলে আমায়
কিন্তু বেশিক্ষণ নয়
আর একজন সরু সাদা পায়ের বুড়ো ভদ্রলোক
বলল, ‘আমি মরতে চাইনা’,
আর তোমার রক্ত উঠল আবার
আমি অঞ্জলি ভরে ধরেছিলাম তা
যা বাকি ছিল
সব রাতের আর দিনের
আর বুড়োটা বেঁচে ছিলো তখনো
কিন্তু আমরা নই
আমরা নই।

আর তুমি চলে গেলে যেভাবে এসেছিলে,
তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে দ্রুত,
তুমি আগেও আমাকে ছেড়ে গেছ বহুবার
তখন ভাবতাম তা আমার মৃত্যু আনবে
কিন্তু আনেনি
আর তুমি ফিরে এসেছ।

এখন আমি লাল রেডিওটা বন্ধ করে দিয়েছি
আর কেউ একটা পাশের ফ্ল্যাটে ধাম করে দরজা বন্ধ করল।
এটাই শেষ অভিযোগ, রাস্তায় আর তোমায় পবো না আমি
অথবা ফোনটাও বাজবে না তবু প্রতিটা মুহূর্ত
আমাকে টিকতে দেবে না।

এটুকুই যথেষ্ট নয় যে অনেক মৃত্যু আছে
আর এই প্রথম তাও নয়
এটুকুই যথেষ্ট নয় যে আমি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকব
হয়ত আরো কিছু বছর।

এটুকুই যথেষ্ট নয়
যে ফোনটা মৃত একটা পশুর মত যা
কথা বলবে না, সে তো কথা বলেছে
কিন্তু এখন সারাটা সময় ভুলভাল গলায়।

আমি অপেক্ষা করেছি আগেও আর তুমি চলে গেছ
দরজার ভেতর দিয়ে, এখন আমার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।