Saturday, August 19, 2023

 সোমব্রেরো ফল আউট





রিচার্ড ব্রটিগান

সোমব্রেরো

 

একটা সোমব্রেরো আকাশ থেকে খসে, পড়ল এসে শহরের প্রধান সড়কে। মেয়র আর তার পিসতুত ভাই এবং চাকরি চলে যাওয়া একটা লোকের সামনে। মুরুভূমির হাওয়ায় দিনটা ঘঁষে মেজে পরিষ্কার হয়ে ছিল। আকাশটা ছিল নীল। মানুষের চোখের নীলের মতো, যা অপেক্ষা করে আছে কোনো কিছু ঘটার জন্যআকাশ থেকে এই মেক্সিকান টুপিটা খসে পড়ার কোনো কারণই ছিল না। কোনো প্লেন বা হেলিকপ্টারও যাচ্ছিল না মাথার উপর দিয়ে বা কোনো ধর্মীয় ছুটির দিনও সেটা ছিল না।

কান্নার প্রথম ফোঁটা তৈরি হলো তার ডান চোখে। ওই চোখটাই চিরকাল প্রথম কাঁদতে শুরু করে। তারপর শুরু করে বাঁ চোখটা। ব্যাপারটা তার কাছে ইন্টারেস্টিং হতে পারত যদি সে জানত তার ডান চোখটাই আগে কান্না শুরু করে। বাঁ চোখটা ডান চোখের কান্না শুরু করার পর এত দ্রুত কান্না শুরু করে যে সে বুঝতেই পারে না কোন চোখটা আগে কাঁদতে শুরু করেছে, কিন্তু চিরকালই ডান চোখটাই শুরু করে।

সে ভালোই অনুভব করতে পারে কিন্তু এতটাও অনুভব করতে পারে না এটা বুঝতে যে কোন চোখটা প্রথম কাঁদতে শুরু করেছিল। মানে যদি কেউ এই ছোট একটা তথ্য কাজে লাগাতে পারে অনুভবের ব্যাখ্যায়।

‘ওটা কি একটা সোমব্রেরো?’ মেয়র জিজ্ঞাসা করে। মেয়ররা চিরকাল প্রথম কথা বলে, বিশেষত যদি তারা আর কোনো রাজনৈতিক অবস্থানে পৌঁছতে না পেরে একটা ছোটো শহরের মেয়র হয়ে থেকে যায়।   

‘হ্যাঁ’, বলে ওঠে তার পিসতুতো ভাই, যে নিজেও মেয়র হতে চায়।

 চাকরি চলে যাওয়া লোকটা কিছুই বলে না। সে আসলে দেখতে চাইছিল  কোনদিকে হাওয়া বয়। সে সাঁকো নাড়াতে চাইছিল না। আমেরিকায় চাকরি না থাকাটা হাসির ব্যাপার নয়।

‘ওটা আকাশ থেকে পড়েছে’ বলল মেয়র স্বচ্ছ নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে।

‘হ্যাঁ’ বলল তার পিসতুতো ভাই।

যে লোকটার চাকরি চলে গেছে সে কিছুই বলল না কারণ তার একটা চাকরি চাই। চাকরি পাবার যে ক্ষীণ আসাটুকু আছে সেটা সে গুবলেট করে ফেলতে চাইল না। বড় বড় লোকদের কথা বলতে দেওয়া সবার জন্য ভালো।

তিনটি লোকই আকাশ থেকে কেন সোমব্রেরো ঝরে পড়ল তার কারণ খঁজছিল কিন্তু তারা কোনো কারণই খুঁজে পেল না, এমনকি যে লোকটার চাকরি চলে গেছে সেও কোনো কারণ খুঁজে পেল না

সোমব্রেরোটা দেখে মনে হচ্ছিল একদম নতুন

ওটা রাস্তায় পড়ে ছিল আর তার চূড়ো আকাশের দিকে তাক করা

সাইজ- /

' আকাশ থেকে টুপি কেন ঝরে পড়ছে'? বলল মেয়র

' আমি জানি না' উত্তর দিল তার পিসতুত ভাই

যে লোকটার চাকরি চলে গেছিল সে ভাবছিল টুপিটা তার মাথায় ফিট করবে কিনা

এখন দুটো চোখই কাঁদছে

হে ভগবান...

সে টাইপরাইটারের দিকে এগলো এমন ভাবে যেন সে একজন মুর্দাফরাশ যেন সে একটা কফিনে একজন মৃত মানুষের প্যান্টের চেন টেনে আঁটকে দিচ্ছে আর টেনে নিচ্ছে একটা  কাগজের পাতা ইতিমধ্যে যা লেখা হয়েছে সব সমেত শুধু বাদ গেছে তার কান্নাটুকু, কারণ সে যে কাঁদছে সে কথা সে জানেই না কারণ ইদানীং সে এতবার কেঁদেছে যে ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে এক গ্লাস জল খাবার মতো যা আপনি হঠাৎ খেয়ে ফেলেন তেষ্টা না পেলেও আর পরে তা মনে থাকে না আপনার।  

সোমব্রেরো নিয়ে আপনি এখানে যা পড়েছেন সেই কাগজটা সে ছিঁড়ে ফেলে। সে খুব সাবধানে ছোটো ছোটো টুকরো করে কাগজটার তারপর ছুঁড়ে ফেলে দেয় মেঝেতে।

সে কাল আবার লিখতে শুরু করবে অন্যকিছু যার সঙ্গে আকাশ থেকে ঝরে পড়া সোমব্রেরোর কোনো সম্পর্ক নেই।

তার কাজ হলো বই লেখা। সে একজন বিখ্যাত আমেরিকান কৌতুক কাহিনী রচয়িতা। এরম কোনো বইয়ের দোকান পাওয়া মুশকিল যেখানে তার একটাও কোনো বই নেই।

তাহলে সে কাঁদছে কেন?

খ্যাতি কি যথেষ্ট নয়?

উত্তরটা আসলে খুব সোজা।

তার জাপানি বান্ধবী তাকে ছেড়ে চলে গেছে।

সেটাই কারণ এই কান্নাকাটির যা তার চোখে শুরু হয়েছিল যা সে আর মনে করতে পারে না শুধু মনে থাকে এই কান্না, জাপানি মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর যা প্রায় একটা রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এক এক দিন সে এত কাঁদে যে তার মনে হয় সে স্বপ্ন দেখছে।


No comments:

Post a Comment