বুকাওস্কির প্রিয় রঙ ছিল হলুদ। রঙের প্রিয়তা দিয়ে মানুষের
মানসিকতা নাকি বোঝা যায়, বলে লোকে। আরো কত কী যে বলে লোকে অথচ তিনি ভালোবাসতেন
জানালার খড়খড়ি বন্ধ করে দুপুর অবধি টানা ঘুমোতে। সন্ধে থেকে ভোর রাত অবধি চলত তার
লেখালেখি, রেডিয়োতে ক্ল্যাসিকাল চ্যানেলে বাখ, বেটোভেন, শুবার্ট শোনা আর বিয়ার
খাওয়া। তিনি খুব ভালোবাসতেন ভারতীয় বিড়ি। জীবনের শেষ ২০-২৫টা বছর রাজস্থান থেকে
যাওয়া ‘শের’ বিড়ি খেয়েছেন তিনি। যদিও তা তাকে ভারতে আসতে উদ্বুদ্ধ করে নি। লোকে
বলে তিনি নাকি বিট জেনারেশনের। আর এই বিট জেনারেশনের অনেকেই শান্তির খোঁজে ভারতে
এসেছেন বার বার এ কথা তো আমরা জানি। জানাজানি এ কথা। এমনকি গিন্সবার্গ বৌদ্ধ ধর্ম
গ্রহণ করেছিলেন ভারত থেকে ফেরার পর এবং কবি বব রোজেন থাল আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে আরো জানিয়েছিলেন যে তার
মৃত্যুর পর তাকে দাহ করা হয় এবং সেই ছাই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পৃথিবীর নানা জায়গায়।
এ
ধরনের বিশ্বাস বুকাওস্কির ছিল না। তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি এভাবে
ভেবেছেন –‘বিশ্বাস জিনিসটা খারাপ না যাদের আছে, স্রেফ আমার ঘাড়ে তুলতে আসবেন না।
কলের মিস্ত্রীকে ওই ভগবানের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি আমি। ওই মিস্ত্রীগুলো দারুণ
ভালো কাজ করে। ন্যাড়গুলো যাতে ঠিকঠাক বয়ে যায় তার ব্যবস্থা করে’।
এরকম একটা মানুষ তাই আদি ভৌতিক, আদি দৈবিক কোনো টানেই ভারতে
আসতে চাননি। বরং আস্থা রেখেছেন মদে। তার কাছে মদ ছিল এ পৃথিবীর সেরা আবিষ্কার।
কারণ আমাদের সমাজে অনেকেই যারা ভুল সময়ে, ভুল জায়গায় আঁটকে গেছেন মদ তাদের
সুইসাডের দিকে যেতে দেয়নি বরং আঁটকে রেখেছে। মদই সেই একমাত্র গান, নাচ যা তাঁদের
জন্য পড়ে আছে এখনও। শেষ বাজার চালু সস্তা মিরাকেল।
বুকাওস্কি যে মদ খেতে ভালোবাসতেন তা বলাই বাহুল্য। তিনি
নিজেই বলেছেন সে কথা। এমনকি তাঁর সমস্ত লেখালিখি মদের নেশায় বুঁদ হয়ে, সে কথাও
তিনি বলেছেন। এক ধরনের বাওয়াল-বাজ পেঁচো মাতালের ইমেজ তিনি তৈরি
করেছিলেন নিজে, নাকি তাঁর পাঠকদের এই ফেটিশ ভালো লাগতো বলেই এটা করতেন! কবিতা
পাঠের আসরে বিয়ারের বোতল নিয়ে কবিতা পাঠ করতেন আর পাঠ চলাকালীন বিয়ার পান করতেন।
যেন কবিতা পাঠের থেকে এইসব বেশি জরুরি। শ্রোতারা হই হই করে সেটাকে সমর্থন জানাতো।
পাঠকদের এই উসকানি ভালোই লাগতো বলতে হবে। কারণ কবিকে তাদেরই একজন বলে কল্পনা করতে
সুবিধে হত তখন। অথচ জীবনের শেষ দিকে যখন তিনি লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হন তখন মদ ছেড়ে
দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাতে তার লেখালিখির উপর কোনো চাপ পড়েনি। মদ না খেয়েই তিনি
শেষ করেছেন তার শেষ উপন্যাস ‘পাল্প’, লিখেছেন অজস্র কবিতা। যা তার মৃত্যুর
পর প্রকাশিত হয়। এখনও হয়ে চলেছে।
১৯৭২এর সেপ্টেম্বর মাসে তাকে সান ফ্রানসিস্কো নিয়ে যাওয়া
হয়। নিয়ে যান তাঁর প্রকাশক ‘সিটি লাইটস বুকস’। একটি ছোটো গল্পের সংকলন ‘ইরেকসান্স,
ইজ্যাকুলেসান্স, একজিবিসান্স এন্ড জেনারেল টেলস অফ অর্ডিনারি ম্যাডনেস’-এর
সাফল্যের পর তাকে সেখানে ডাকা হয়। যে বই তিনি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর তরুণী বান্ধবী
তখনকার প্রেমিকা, লিন্ডা কিং কে --
'যে আমাকে এনে দিয়েছে
যে আবার ফের
নিয়ে যাবে'
লিন্ডা কিং-এর সাথে বহু বছর একত্রে বাসও করেছেন বুকাওস্কি।
বুকাওস্কির জীবিত কালে সেই বিখ্যাত হেড বাস্টটি লিন্ডা কিং-এরই সৃষ্টি। লিন্ডা
ছিলেন আর্টিস্ট এবং কবি। বুকাওস্কির সাথে তার কবিতাও একসাথে বই হয়ে বেরিয়েছে। কিছুদিন
আগে প্রকাশিত হয়েছে তার নতুন বই ‘লাভিং এন্ড হেটিং চার্লস বুকাওস্কি এ ট্রু স্টোরি
(২০১৪)।’ সেখানে ছাপা হয়েছে লিন্ডা কিং কে লেখা বুকাওস্কির প্রেম পত্র, একে অপরের
উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রচুর কবিতা। এ বই পড়া একটা অভিজ্ঞতা। আমার কয়েকটা প্রিয় বইয়ের
মধ্যে এটা থাকবে।
টেলিগ্রাফ হিল-এর জিম্নাসিয়ামে ৮০০ লোক টিকিট কেটে জড়ো হয়েছেন
সেই লেখক কে দেখতে যিনি লিখেছেন ‘লাইফ ইন এ টেক্সাস হোর হাউস’ ইত্যাদি সব উল্টো
পাল্টা লেখা। যা বলা হয় তার নিজের জীবন থেকে নেয়া। এই জনতার সামনে আত্নপ্রকাশ করতে
চাইছিলেন না বুকাওস্কি। বিশেষত বিট লেখকদের নিজের শহরে, যে দলটিকে না তিনি পছন্দ
করতেন, না নিজিকে ভাবতেন তাদের একজন হিসেবে। কারণ তিনি মনে করতেন দল বেঁধে আর যাই
হোক সাহিত্যটা হয় না। দল বাঁধে দুর্বলরাই, কারণ তারা একা একা দাঁড়াতে পারে না। একে
অপরকে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের। আর এও মনে করতেন গিন্সবার্গ হাউল-এর পর আর কিছু
উচ্চাঙ্গের লেখেননি। ওই যে লোকে বলে তিনি নাকি বিট জেনারেশনের কথাটা এবার কিছুটা
ভুলভাল মনে হচ্ছে কি আপনার? হওয়ারই কথা।
তো একটা ভয় কাজ করছিল তার ভেতর ভেতর। তাই সাহস বাড়াতে
সারাদিন মদে ডুবেছিলেন। স্টেজে ওঠার আগে বার দুই বমিও করলেন। তিনি তার বন্ধু টেলর
হ্যাকফোর্ড কে বললেন –‘এর থেকে ফ্যাক্ট্রিতে কাজ করা সোজা, এত চাপ ওখানেও থাকে
না।‘
জনতা তাকে চিনত তাঁর ছোটো গল্পের জন্য। কিন্তু তিনি কবিতা
পাঠ করলেন। মদ্য পান, জুয়া, যৌনতা এমনকি পাইখানায় যাওয়া নিয়ে কবিতা সব। তিনি
জানতেন এসব কবিতা প্রভূত আনন্দ এবং আহ্লাদ দেবে শ্রোতাদের। শুধু কবিতা পাঠই নয় তিনি
কথাবার্তা শুরু করলেন শ্রোতাদের সঙ্গে। খেপিয়ে দিলেন একেবারে। শেষে কবিতা পাঠ শেষ
হল বোতল ছোঁড়াছুড়ি দিয়ে। সিটি লাইটস-এর ফারলিংঘেট্টি শেষমেশ কোনোরকমে স্টেজের
পেছন দিক দিয়ে বের করে আনেন বুকাওস্কিকে।
বুকাওস্কি জন্মেছিলেন আন্দেরনাখ, জার্মানিতে।
তিন বছর বয়সে বাবা মা’র সাথে আমেরিকা চলে আসেন। বড়ো হয়ে ওঠেন লস অ্যাঞ্জেলস-এ
যেখানে তিনি জীবনের পঞ্চাশ বছর কাটিয়েছেন। জীবনে বহু রকম কাজ করেছেন। পোস্টঅফিসের
ক্লার্ক থেকে মুটেগিরি অবধি। কিন্তু কোনটাতেই বেশিদিন টিকতে পারেননি। তাই অনেকসময়
অনাহারে কাটাতে হয়েছে। একটা ক্যান্ডিবার আর শুধু হাফ বোতল সস্তা ওয়াইন দিয়ে
তিন-চারদিন কাটিয়ে দিয়েছেন মাঝে মধ্যেই।
অনেকসময়ই সততার সঙ্গী হয় কৌতুক রসবোধ। বুকাওস্কি প্রথমেই
নিজেকে নিয়ে মজা করতে ভালবাসতেন, যখন তিনি কৌতুক করতেন চারপাশের উন্মাদ পৃথিবীটা
নিয়ে। এই উচ্চাঙ্গের অ্যাবসার্ডিটির চেতনা তার সমস্ত প্রকাশিত লেখার মধ্যেই দেখা
যাবে। সম্ভবত চ্যাপলিন বলেছিলেন সেই আধুনিক মানুষ যে নিজেকে নিয়ে মজা করতে পারে।
যা সারাটা জীবন করে দেখিয়েছেন চ্যাপলিন।
বুকাওস্কি একটা খবরের কাগজের কলম লিখতেন বেশ কয়েক বছর। যা
পরে বই হয়ে বেরোয়। তার কাটানো জীবনে খানিকটা রঙ চড়িয়ে যে সব গল্প পাঠককে পরিবেশন
করেছেন সে সব নিয়ে ‘নোটস অফ এ ডার্টি ওল্ড ম্যান’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। এই
ডার্টি ওল্ড ম্যানটি অবশ্যই বুকাওস্কি নিজে। আমেরিকার সমাজের নিচু তলার জীবন, তার
ভায়োলেন্স, সেক্স, ব্যার্থতা সব উঠে এসেছে সে বইয়ে। যদিও অনেকেই এটাকে তার সেরা বই
বলে মানতে চান না। যদিও জনপ্রিয়তার নিরিখে এ বইও কোনো অংশে কম নয়। তাদের বিচারে
নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে অনেক বেশি সঠিক ভাবে কাজ করেছেন তিনি তাঁর কবিতার বই
‘লাভ ইজ এ ডগ ফ্রম হেল’ এবং তার সেই অসাধারণ তৃতীয় উপন্যাস ‘উওমেন’-এ।
তিনি ছিলেন মূলত
লিটল ম্যাগাজিনের লেখক। প্রথম দিকে আমেরিকায় তাঁকে লেখক হিসেবে কেউ পাত্তা দিত না।
ইয়োরোপ কিন্তু তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। তাঁর লেখার সারকাস্টিক অবস্থান
ইয়োরোপীয়দের মানসিকতার সঙ্গে মেলে। তাই হয়তো কার্ল ওয়েসনার তার লেখার প্রেমে পড়ে জার্মান ভাষায় অনুবাদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সে
সব বই এডিশানের পর এডিশান হু হু করে বিক্রি হয়েছিল। মনে রাখা দরকার
এই কার্ল ওয়েসনারই হাংরিদের লেখা পত্রও অনুবাদ করেছিলেন বলে শোনা যায়। এবং পরে
ধিরে ধিরে আমেরিকার লিটল ম্যাগাজিনগুলো তাঁর পাশে দাঁড়ায়। একের পর এক ছোটো ছোটো বই
প্রকাশিত হতে থাকে এইসব স্বাধীন প্রেস থেকে। বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয় তাকে নিয়ে।
১৯৬৯ সালে, তখন বুকাওস্কির বয়স ৪৯, ব্ল্যাক স্প্যারো প্রেসের জন মার্টিন তাকে
পেটের জন্য এই অনাবশ্যক ছুটছাট কাজ করার থেকে বাঁচিয়ে দেন। প্রতি মাসে যাতে উপোস
দিতে না হয় তার ব্যবস্থা করেন তিনি। এই সামান্য কিছু ডলারের আস্থায় বুকাওস্কি
সমস্ত আজে বাজে কাজ ছেড়ে লেখাতে মন দেন। অর্থাৎ ফুল টাইম লেখক হওয়ার সুযোগ গ্রহণ
করেন। তারপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জন মার্টিন কথা রেখেছিলেন। বুকাওস্কির
প্রায় সব বইয়ের প্রকাশক ছিলেন ব্ল্যাক স্প্যারো।
কবিতাকে সোজাসাপ্টা ভাষায় লিখে আরেকবার তাকে মানুষের
কাছাকাছি এনেছিলেন তিনি। কবিতায় তথাকথিত কাব্যিক মারপ্যাঁচে তার বিশ্বাস ছিলনা।
প্রফেসরদের একে অপরের পিঠ চুলকোবার বস্তু কোনো। কবিতা যে ভিন গ্রহের কোনো বস্তু নয়
তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তিনি। পাঠকরা আবার ফিরে এসেছিলেন কবিতার কাছে। কবিতার
বই বিক্রি হচ্ছিল দেদার।
হেমিংওয়ে আর জন ফান্টের প্রভাব তার লেখায় ছিল। তাদের মতই
তিনি বিশ্বাস করতেন ছোটো বাক্য গঠনে, কোনো রকম ভণিতা ছাড়া খুব সাধারণ ভাষায় মনের
ভাব প্রকাশ করতে, লেখাতে ছোটো ছোটো প্যারাগ্রাফের ব্যবহার ইত্যাদি। তা তিনি কবিতা,
গদ্য যাই লিখুন না কেন এই নিয়ম তিনি আজীবন মেনে চলেছেন তার লেখালিখিতে। জন ফান্টে
ছিলেন তার প্রিয়তম লেখকদের মধ্যে একজন, এতটাই যে ফান্টের প্রথম উপন্যাস ‘আস্ক দ্য
ডাস্ট’ তিনি তাঁর প্রকাশককে আবার ছাপতে অনুরোধ করেন। সে বইয়ের একটা মুখবন্ধও তিনি
লিখে দিয়েছিলেন। সে সময় ফান্টে অসুস্থ। তাকে প্রায় ভুলতে বসেছে সবাই। অসুস্থ ফান্টে
তখন সে বইয়ের জন্য কিছু অর্থ সাহায্য পেয়েছিলেন সে সময়।
তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাই তার লেখার মূল রসদ একথা
বুকাওস্কি নিজেই বলেছেন। তিনি বলেছেন ৯৭% চোখে দেখা অভিজ্ঞতা আর ৭% সাহিত্য নিয়ে
তার কারবার। এটাই বুকাওস্কি। তার বইগুলোতে একথাই প্রমাণ হয়েছে বার বার। আমেরিকার
নিচুতলার মানুষের জীবন নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার সৎ রিপ্রেজেন্টেশান যেখানে তিনি নিজে
সবসময় উপস্থিত। কখনো চিনাস্কি, কখনো হ্যাঙ্ক হিসেবে। এটা মনে রাখা দরকার যে তাঁর
বন্ধু বান্ধবও তাকে ডাকত হ্যাঙ্ক বলে। তিনি বন্ধুবান্ধবদের কাছে লেখা চিঠিপত্রেও
হ্যাঙ্ক এই নামে সই করতেন। কখন যেন গল্পের চরিত্র আর তিনি মিলেমিশে এক হয়ে গেছেন।
বুকাওস্কির জীবনে নারীরা এসেছেন বার বার। সেই নারীদের নিয়ে
তাঁর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘উওমেন’। যদিও তাঁর জীবনে আসা প্রথম নারী জেন কুনিকে
তিনি কোনোদিন ভুলতে পারেননি। নেশা আর অপরিণামদর্শী জীবন যাকে শেষ করে দিয়েছিল।
জেন কুনি বেকারের জন্য, মৃত্যু ২২-১-৬২
আর তুমি চলে গেলে
আমাকে এখানে ফেলে
সেই ঘরে যেখানে জানালার পর্দাটা ছেঁড়া
আর একটা ছোটো লাল রেডিওতে বাজচ্ছে সিগফ্রাইডের আইডল।
আর তাই তুমি চলে গেলে দ্রুত
যেভাবে এসেছিলে আমার কাছে,
আর আমরা আগেও বিদায় জানিয়েছি।
আর আমি যখন তোমার মুখ আর ঠোঁট মুছছি
তুমি তোমার চোখ এত বড় করে খুললে
যা আমি আগে কখনো দেখিনি আর বললে
‘আমি হয়ত জানতাম
এটা তুমিই হবে’ ... তুমি দেখেছিলে আমায়
কিন্তু বেশিক্ষণ নয়
আর একজন সরু সাদা পায়ের বুড়ো ভদ্রলোক
বলল, ‘আমি মরতে চাইনা’,
আর তোমার রক্ত উঠল আবার
আমি অঞ্জলি ভরে ধরেছিলাম তা
যা বাকি ছিল
সব রাতের আর দিনের
আর বুড়োটা বেঁচে ছিলো তখনো
কিন্তু আমরা নই
আমরা নই।
আর তুমি চলে গেলে যেভাবে এসেছিলে,
তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে দ্রুত,
তুমি আগেও আমাকে ছেড়ে গেছ বহুবার
তখন ভাবতাম তা আমার মৃত্যু আনবে
কিন্তু আনেনি
আর তুমি ফিরে এসেছ।
এখন আমি লাল রেডিওটা বন্ধ করে দিয়েছি
আর কেউ একটা পাশের ফ্ল্যাটে ধাম করে দরজা বন্ধ করল।
এটাই শেষ অভিযোগ, রাস্তায় আর তোমায় পবো না আমি
অথবা ফোনটাও বাজবে না তবু প্রতিটা মুহূর্ত
আমাকে টিকতে দেবে না।
এটুকুই যথেষ্ট নয় যে অনেক মৃত্যু আছে
আর এই প্রথম তাও নয়
এটুকুই যথেষ্ট নয় যে আমি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকব
হয়ত আরো কিছু বছর।
এটুকুই যথেষ্ট নয়
যে ফোনটা মৃত একটা পশুর মত যা
কথা বলবে না, সে তো কথা বলেছে
কিন্তু এখন সারাটা সময় ভুলভাল গলায়।
আমি অপেক্ষা করেছি আগেও আর তুমি চলে গেছ
দরজার ভেতর দিয়ে, এখন আমার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।
No comments:
Post a Comment