লিন্ডা কিং মূলত একজন ভাস্কর। তার করা বুকাওস্কির হেড
বাস্টটির ফটোগ্রাফ আপনারা দেখে থাকবেন যা পৃথিবী বিখ্যাত। চার্লস বুকাওস্কির সাথে
একসাথে কবিতার বইও বেরিয়েছে তার।
চার্লস বুকাওস্কিকে নিয়ে অনেক বই আছে কিন্তু কোনোটাই এ
বইয়ের মতো নয়। এটা যেন আয়নার অন্য পাশ দিয়ে দেখা। ওদের পাঁচ বছরের প্রেমের ঝোড়ো
জীবনের জীবন্ত দলিল। তাই অনেক সময়ই অপরিমার্জিত, কিছু না লুকোবার চেষ্টা করে
বলে যাওয়া সেই আবেগের দিনগুলোর কথা, সেই গভীর প্রেম আর
প্রেমহীনতার কথা, যা সরাসরি ধাক্কা মারে আমাদের হৃদয়ে কোথাও।
তৃতীয় ভাগ
বুকাওস্কির আসার কথা সকাল ১১টায়,
প্রথমবার ভাস্কর্যর জন্য বসতে। ও যখন আমার অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের গেট দিয়ে
ঢুকছে, আমি তখন বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে।
‘হাই, আমি ওইখানে থাকি, ওই
ফ্ল্যাটটায়। তুমি দেখছি একটা নতুন জামা পরেছ’।
লজ্জায় ওর মুখটা লাল হয়ে গেল। ও আমার
পিছন পিছন এলো আমার ফ্ল্যাটে।
‘এই বাচ্চা মেয়েটা আমার, কারিসা। ওর তিন
বছর বয়স। কারিসা, ইনি হলেন চার্লস বুকাওস্কি। আমি ওনার মুখের একটা ভাস্কর্য তৈরি
করব’। কারিসা অবাক চোখে বুকাওস্কির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তোমার নাকটা তো লাল’। ও
আমাকে দেখেছে মাটি জড়ো করে মুখটা তৈরি করার সময় আমার তোলা ছবিগুলোর দিকে বার বার
তাকাতে। ‘তোমার মুখটা কি এবার মাটির হবে’?
বুকাওস্কি হাসে এসব শুনে।
‘তোমার কি একটা বিয়ার চাই? তোমার
জন্যই একটা ছ প্যাকের বিয়ার আমি কিনে রেখেছি’।
‘নিশ্চয়ই’। বিয়ার হাতে ওকে অনেকটা
রিল্যাক্সড লাগে।
ঠিক তখনই জেরি ঢোকে তার বাচ্চাটাকে
নিয়ে। আমার বাচ্চাটার থেকে ওর বাচ্চাটা বছরখানেকের ছোটো। আমি ওকে বলেছিলাম এসে
বুকাওস্কির সঙ্গে কথা বলতে যখন আমি ভাস্কর্যটা নিয়ে কাজ করব।
‘এ আমার দিদি, জেরি আর ওর বাচ্চা রনডা’।
‘বোনেরা...’
‘আমরা পাঁচ বোন। লা-রে কাজে আছে এখন।
অ্যান আর মার্গি থাকে উটায়’।
জেরি কথা বলে লেখালিখি নিয়ে। ওর
প্রচুর পড়াশোনা আছে আর আমার থেকে অনেক ভালো কথা বলতে পারে।
‘তোমার কিছু ছেপে বেরিয়েছে?’
বুকাওস্কি সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করে।
‘না’। সে ‘হাফ এন হাফ’ নিয়ে বলে চলে
আর তার উপন্যাসের কথা যেটা সে লিখছে এখন। আমি মাটি নিয়ে তখন ব্যাস্ত তাই খুব একটা
মন দিয়ে শুনছিলাম না ওদের কথা। দু ঘন্টার বসে থাকার সময় শেষ হওয়ার পর আমার দিদিকে
একটা লম্বা চুমু দিয়ে বুকাওস্কি চলে গেল।
দ্বিতীয় বার বসার সময় আমি আর
বুকাওস্কি একাই ছিলাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ কাজ করে চললাম। ও কিছুটা রোগা হয়েছে,
চুলগুলো বড় হয়ে গেছে। ছবিগুলো আর কোনো কাজে দেবে না। আমি মাটি কমাতে শুরু করলাম
ভাস্কর্যটা থেকে। আমি ঠিক করেই নিয়ে ছিলাম যে বুকাওস্কির সাথে আমি শোবো না। আমাদের
বাবা মাল খেয়ে প্রচুর জ্বালিয়েছে আর আমি নিশ্চিত ছিলাম যে বুকাওস্কিও মাতাল। আর
তাছাড়া ওর বয়স যা তাতে ও আমার বাবা হওয়ার যোগ্য।
‘তুমি কবে আমার বাড়িতে আসবে’? সে
জিজ্ঞাসা করে আমাকে।
‘আমি জানি না। ডিভোর্সের পর আমি শপথ
করেছি আমি কোনো পুরুষের সাথে সম্পর্ক রাখব না যে তার নারীর সাথে যৌনতা করে
না...পুরোটা’।
‘আর কীকরে জানলে আমি তা করি না’?
‘আমি তোমার বই পড়েছি। তোমার মেয়ে
চরিত্রগুলো সব করই, কিন্তু চিনাস্কি কিছুই করে না...বুঝতে পারছ...ও কখনো করে না
কিছু। তুমি করলে ওটা নিয়ে তুমি লিখতে, তাই না’?
‘সব সময় চলে যায় নি এখনো’।
‘আমি বিবাহিত জীবন কাটিয়েছি দশ বছর।
আমার স্বামীর ওটা পছন্দ ছিল না। আমি মনে করিনা ওটা কোনো পুরুষ শেখে পছন্দ করতে’।
‘কিছু কিছু বুড়ো কুত্তা শিখতে পারে
নতুন কৌশল’।
‘আমার বোঝা উচিৎ ছিল যখন প্রথম বার
আমি আমার আগের স্বামীর অ্যাপার্টমেন্টে যাই, সে তখন তার প্যান পরিষ্কার করছিল
ব্রিলো প্যাড আর এলেক্স দিয়ে, সে যে কখনই ফলনায় চুমু খেতে পারঙ্গম হবে না সেটা
বোঝা উচিৎ ছিল আমার, বড্ড খুঁতখুঁতে’।
‘আমি আগে কাজ করেছি জমাদারের। মেয়েরা
খুব নোংরা হতে পারে...মুত আর রক্ত। ভাবতে পারবে না কীনা আমি পরিষ্কার করেছি ওই
নোংরা ফেলার ক্যানেস্তারা থেকে’।
‘তোমার বয়স পঞ্চাশের বেশি। তুমি যদি
ওটা করতে চাও তাহলে তো এতদিনে তুমি ওটা করতে শুরু করে দিতে’।
‘কেউ আমাকে করতে বলেনি ওরকম’।
‘কেউ বলেনি? মেয়েদের বলতে হয় না। আমি
তো বলি না কিন্তু আমি আর হাঁটি না এক মুখি রাস্তায়। আমি আশা করি একজন পুরুষ আমায়
যা করবে যা সে করতে চাইছে নিজের জন্য। আমি একজন পুরুষের সাথে ঘুরি যে ওটা খুব ভালো
করে কিন্তু সে ওটুকুই করতে পারে’।
‘মানে তুমি বলছো ওর দাঁড়ায় না’।
‘ও কিন্তু খুব ইন্টারেস্টিং একজন লোক,
প্রচুর বিদ্যেবুদ্ধি। ও ওর অফিসের প্রিন্টারে আমাদের ম্যাগাজিনের গত সংখ্যাটা ছেপে
দিয়েছিল’।
‘আচ্ছা, তাই বুঝি’।
‘আমার স্বপ্নরা আমাকে বলেছে ওকে ছেড়ে দিতে।
ওরা আমকে দেখিয়েছে একটা পাখির বাসায় একটা ডিম যার কোনো খোলা নেই। ডিমটা দপ দপ
করছিল। আমাকে বলা হলো ডিমটাকে সাবধানে একটা গাছের বাসায় রেখে আসতে’।
‘এত সোজা তাকে ছেড়ে দেওয়া’?
‘আমি যখন তাকে বললাম আমার এই স্বপ্নের
কথা সে স্বীকার করল তার হৃদয় দুর্বল। সে কারণেই সে যৌনতা করতে পারে না। আমিও
পুরুষদের মিশিয়ে ফেলতে পছন্দ করি না’।
‘তো তুমি এই লোকটার প্রতি বিশ্বস্ত যে
তার বাঁড়া দাঁড় করাতে পারে না কিন্তু তোমাকে চেটে চুষে দেয়’?
‘আজকাল আর যাচ্ছি না তার কাছে, কিন্তু
ও ফোন করে আজ রাতে আমার সঙ্গে খেতে যেতে চাইছে। অদ্ভুত ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল
‘দা ব্রিজে’ যেখানে তোমার প্রথম কবিতা পাঠ ছিল’।
‘তুমি চাইছ কিছুটা সময় চলে যাক যাতে তুমি ওর প্রতি ন্যায্য আচরণ করতে পারো। এটা খুব
ভালো জেসচার, যেমন কাউকে কবর দিয়ে লোকে অপেক্ষা করে কিছুটা সময় তারপর অন্যের সাথে
শুরু করে দেয় কৌশল সব...১৮৯০’।
‘আমি চিরকালই সময় নিয়েছি একজন পুরুষের
থেকে আরেকজন পুরুষের কাছে আসার জন্য। আমার স্বামী চলে যাওয়ার পর আমি ছ মাস যাইনি
অন্য কারো কাছে। আমি ভেবেছি হয়ত সে ফিরে আসতে চাইবে বাচ্চাদের জন্য। আমি শুরু করার
অনেক আগে থেকেই ও ডেট করছিল’।
‘বাবা তুমি যা নীতিপরায়ণ তোমার মা-ও
নিশ্চয়ই এরকমই ছিলেন।‘
‘আজ যা কাজ ছিল তা হয়ে গেছে আমার।
তুমি কি শুক্রবার আসবে’?
‘আমি তোমায় ফোনে জানাব’।
কদিন বাদে যখন বুকাওস্কি ফোন করল তখন
সে মাল খেয়ে পুরো টান্টু। ভাস্কর্যর জন্য ওর বসতে ভালো লাগছে না।
‘আমি তোমাদের ম্যাগাজিন ‘হাফ এন
হাফ’-এর জন্য একটা কবিতা পাঠিয়েছি। আশা করি তোমাদের ভালো লাগবে’।
পরের দিন এলো কবিতাটা।
সেই ত্রাতা
পি বোধশক্তি
পি বৈজ্ঞানিক
পি বিপ্লবী
পি ৫২ বছর বয়স
পি যে সাহায্য করে মন খুলে
নারীমুক্তির কাগজ বার করে
পি সেই ভালো ছেলেটা
পি সেই অহং
পি আপেল বাগানের
পি সেই সঠিক চালগুলোর
পি সেই চিন্তাবিদ
পি তার টোস্টে মাখন খায়
পি জিভের আর মাথার
পি যে মেয়ে তোলে কবিতার ঠেক থেকে
পি রেকর্ড করার যন্ত্রের
পি একটা বাড়ি নিয়ে
পি ভালোবাসে
পি মাটি নিয়ে চিন্তা করে
পি একটা অফিস নিয়ে
পি ২টো টেলিফোন নিয়ে
পি যে জানে পি –র আছে একটা ধ্বজভঙ্গ
যৌন অঙ্গ...
(পাঠকদের সুবিধার জন্য বলি যে পি
অর্থে পুসি বা ফলনা বা যোনি)
আমি বুঝিনি আমি এতটাও বলেছি পি নিয়ে।
এই লেখকটাকে নিয়ে আমাকে সাবধান হতে হবে।
‘হাফ এন হাফ’-এর জন্য পাঠানো
(ফেব্রুয়ারি ১৯৭১) বুকাওস্কির কবিতা আমরা রিজেক্ট করেছিলাম।
আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আদৌ
বুকাওস্কি ফিরে আসবে কিনা যাতে আমি ভাস্কর্যটা শেষ করতে পারি। অনেক দিন পর সে আবার
ফোন করল।
‘জানি না আমার কী হয়েছিল। তুমি আমার
ভাস্কর্যটা করছিলে। তুমি আমার বাড়ি এসেছিলে আর তোমার সাদর উপস্থিতি আমার ভালো
লেগেছিল। তুমি হাসি আর নিজেকে নিয়ে এসেছিলে আর আমি বাঁড়ার অহং নিয়ে বসে আছি। এটা
আসলে সেই পুরনো পুরুষ ষাঁড়ের মতো। তুমি যদি তাদের না দিতে পারো তুমি পুরুষই নও।
কেমন আছো’?
‘আমি এই সুন্দর ডাউন টাউন বুরব্যাঙ্কে
আছি’।
‘একজন ছিল জেন বলে, যার পর এত মেয়ের
মধ্যে তুমি হচ্ছ সেই মেয়ে যার প্রকৃতি আমার সেরা মনে হয়েছে। তোমার জন্য আমি অনেক
বুড়ো কিন্তু কয়েকটা জিনিস আমি তোমার সাথে চেষ্টা করে দেখতে চাই আর আমি তোমারটা
খেতে পারব না কে বললো? কবে আসব আরেকবার বসার জন্য’?
‘ভাস্কর্যটা আর নেই’, আমি বললাম, ‘অর্ধেকটা
সিলিঙে আঁটকে আছে যেখানে আমি ছুঁড়েছিলাম সেটাকে আর অর্ধেকটা মেঝেতে পড়ে যেটার উপর
পা দিয়ে লাথিয়ে ছিলাম আমি। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আর ফিরেই আসবে না’।
‘আমরা আবার শুরু করতে পারি। আমি কখন
আসব? আমি তোমাকে আমার পুরনো কয়েকটা বই দিতে চাই’।
‘তুমি কাল আসতে পারো...একই সময়।
ভাস্কর্যটা ছাড়া আর সব ভুলে যাওয়া যাক। ওটাই বেশি জরুরি’।
No comments:
Post a Comment