Wednesday, October 4, 2017

চার্লস বুকাওস্কি-কে ভালোবেসে, ঘেন্না করে

লিন্ডা কিং মূলত একজন ভাস্কর। তার করা বুকাওস্কির হেড বাস্টটির ফটোগ্রাফ আপনারা দেখে থাকবেন যা পৃথিবী বিখ্যাত। চার্লস বুকাওস্কির সাথে একসাথে কবিতার বইও বেরিয়েছে তার। এই বইটা যখন হাতে পাই তখন আমি হাসপাতালে আমার ক্যান্সার দুষ্ট ডান কিডনির অপারেশান করার জন্য চিত্তির দিয়ে শুয়ে আছি। বই হাতে পেলে আমার যা হয়, মন বিলকুল ভালো হয়ে যায়। নিচের ছবিটা সে সময়ের।                                                                                                                                                          

চার্লস বুকাওস্কিকে নিয়ে অনেক বই আছে কিন্তু কোনোটাই এ বইয়ের মতো নয়। এটা যেন আয়নার অন্য পাশ দিয়ে দেখা। ওদের পাঁচ বছরের প্রেমের ঝোড়ো জীবনের জীবন্ত দলিল। তাই অনেক সময়ই অপরিমার্জিত, কিছু না লুকোবার চেষ্টা করে বলে যাওয়া সেই আবেগের দিনগুলোর কথা, সেই গভীর প্রেম আর প্রেমহীনতার কথা, যা সরাসরি ধাক্কা মারে আমাদের হৃদয়ে কোথাও।                   

                                                



দ্বিতীয় ভাগ     


চার্লস বুকাওস্কির বই পেতে আমাকে অনেকগুলো বইয়ের দোকান ঘুরতে হলো। আমি ‘নোটস অফ এ ডার্টি ওল্ড ম্যান’ আর দুটো কবিতার বই কিনলাম। বইয়ের নামগুলো আমার খুব ভালো লেগেছিল। ‘দা ডেজ রান অ্যাওয়ে লাইক ওয়াইল্ড হর্সেস ওভার দা হিলস’। আমি ভাবছিলাম সেই সময়ের কথা যখন বাবা আমাদের জঙ্গলে নিয়ে গেছিলেন। জংলি ঘোড়াদের আমরা দেখতেও পেয়েছিলাম।
বুকাওস্কির বইগুলো এক অদ্ভুত মানসিক চাপ তৈরি করলো আমার ভেতর। আমি রেগে গেলাম খুব, বিরক্ত হলাম, ঘেন্না করলো আর মনটা খারাপ হয়ে গেল। একটা গল্প পড়তে পড়তে তো আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছিল। কে এই লোকটা? এত ভালো লেখক অথচ জীবন সমন্ধে ওর দৃষ্টিভঙ্গি এতটাই অদ্ভুত যে বলার নয়। আমার মনে হয়নি ও মেয়েদের ব্যাপারে কিছু জানে বলে। যৌন বাসনার জটিলতা লেখাগুলোতে নেই। আমি ঘুমোতে পারছিলাম না। সমস্ত বইগুলো পড়েও ঘুমোতে পারছিলাম না। ভাবলাম বুকাওস্কির মতো একটা কবিতা লিখি...

চোখ খুলে জেগে আছি    

আমি তিনটে বই পড়েছি
চার্লস বুকাওস্কির লেখা
ওর কবিতা ঘুম পাড়িয়ে
স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায় না
ও তোমায় জাগিয়ে দেয়
আমি তো একটু ল্যাদ
সব সময় ওরকম
জেগে থাকতে পারি না আমি
ও জীবনকে সুন্দর করে তোলে না
আমি যদিও জানতাম সেটাই একজন কবির কাজ
ওটাকে ওর ইতিহাস বলা উচিৎ
বলা উচিৎ জীবন

এখন রাত দুটো।
নিজের শরীর নিয়ে
খেলা শেষ করেছি আমি
চেষ্টা করেছি চার্লস বুকাওস্কিকে নিয়ে
না ভাবতে
ওটা কাজে নাও দিতে পারে
আমি প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
আচমকা ঘুম চলে গিয়ে দেখি
আমি জেগে আছি চোখ খুলে
বুকাওস্কি হয়ত ছেলেদের সাথেও করবে
নীলি বা ওই পাগলা পিটার
ও হয়ত যেই আসে তাকেই দ্যায়
কতগুলো ফূটো?
ওর ফুটো, মেয়েটার ফুটো, পোঁদের ফূটো,
বেশ্যার ফূটো, ম্যানহোল
ও নিজেকে বলে বুড়ো বাঘ
আর চেঁচায় আমার ভেতরের বাঘটার দিকে তাকিয়ে
আমি রাতে ঘুরে বেড়াই
একটা বাঘের শরীরের ভেতর
কিন্তু শুই কুকুরের সাথে

বুকাওস্কি মারা যাবে
কুত্তার মতো, ফুলটু মাতাল
ওরা ওর ডোরা দেখে চিনতে পারবে
বাবা-ই যথেষ্ট মাতাল ছিল
এই সংসারের জন্য
কারা ভালোবাসবে বুড়ো মাতালদের?
আমি একজনকে ভালবাসতাম যার দাঁড়াত না  
ওরা যৌনতার থেকে মদ বেশি ভালোবাসে
আমি প্রেমে পড়ে যেতে পারতাম
বুকাওস্কির
যখন সে ভালোবাসায় বিশ্বাস করত
জেন-কে আমি হিংসা করি
চোখ খুলে  জেগে আছি – ভোর চারটে

...লিন্ডা কিং

লেখাটা লিখে ভালো লাগল। কোনোরকম নিয়ম বাধা বন্ধকতা ছাড়া কবিতা, বিয়ে ছাড়া জীবন...স্বাধীন লিন্ডা। আমি যা ইচ্ছে তাই বলতে পারি। যা ইচ্ছে করতে পারি। আমি উঠোন পেরিয়ে আমার বড় দিদি জেরি-কে গিয়ে বললাম পিটার আর লেখক চার্লস বুকাওস্কির সঙ্গে কাটানো রাতের কথা।
‘তুই তো ওর একটা ভাস্কর্য করতে পারিস’? সে বললো। ‘ও যদি সত্যিই লসঅ্যাঞ্জেলিসের সেরা কবি হয় ওর একটা ভাস্কর্য হওয়া উচিৎ আর তারপর আমরা দেখা করে কথা বলতে পারি। তুই তো চাইছিলি এমন একজনের ভাস্কর্য করতে যে একজন ইন্টারেস্টিং মানুষ’।  
‘আমার মনে হয়না ও ওটা করতে চাইবে। ও একা একাই থাকতে ভালোবাসে’।
‘আরে চেষ্টা করে তো দেখ। ব্যাপারটা মজার হবে। আমরা না হয় ওকে আমাদের ‘হাফ এন হাফ’-এর এক কপি পাঠিয়ে দেবো’। 
‘হাফ এন হাফ’-এর গল্পটা এরকম। এটা আমাদের পারিবারিক পত্রিকা যেটা ছড়ানো হতো বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয় স্বজনের মধ্যে। ভর্তি থাকত প্রবন্ধ, কবিতা, কার্টুন আর কলাম লেখায়। জেরি আট বছর বয়স থেকে লিখছে আর ও চাইত আমরা বোনেরা সব্বাই লিখি। প্রতিমাসে সম্পাদনা করবে আলাদা আলাদা ব্যক্তি আর সে দায়িত্ব নেবে লেখাপত্র বাছাই করার, ঠিক করবে কী থিম হবে পত্রিকার আর ‘হাফ এন হাফ’ প্রকাশের।
‘ওকে একটা কবিতা লিখে পাঠা। রোজ রোজ তো আর দেখা হয়না একজন লেখকের সাথে’।
‘আমার কবিতা ওর একদম পছন্দ হয়নি। আমি তো বললাম তোমায় কী ঘটেছিল। আর তাছাড়া আমার জন্য ও খুব বয়স্ক, তোমার জন্যে হয়ত ঠিক ছিল’। জেরি আমার থেকে আট বছরের বড়।
কবিতার জন্য অপমানিত হওয়ার কথা মাথায় না রেখে আমি বুকাওস্কিকে একটা চিঠি লিখে জানতে চাইলাম সে তার হেড বাস্ট করতে রাজী কিনা?
কয়েকদিনের ভেতরেই জবাব পেলাম টেলিফোন নাম্বার সমেত।
আমি ফোন করলাম।
‘হ্যালো, আমি লিন্ডা কিং বলছি। কখন আসতে পারি তোমার কতগুলো ছবি তুলতে যাতে তোমার ভাস্কর্যটা শুরু করা যায়’?
‘আগামীকাল’।
‘আগামীকাল’, ব্যাপারটার দ্রুতি দেখে আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম।
‘ঠিক আছে, আগামীকাল তবে সকাল ১১টায়’?
‘রাত এগারোটা’।
‘ছবি তোলার জন্য আমার দিনের আলো দরকার।‘
‘তাহলে দুপুরে করো’, বলে সে ফোনটা রেখে দিলো। আমি ছুটে গিয়ে আমার দিদিকে খবরটা জানালাম।
বুকাওস্কির বাড়ি পৌঁছলাম দুপুর দুটো নাগাদ। সে দরজা খুললো না। ভাবছি ফিরে যাব এমন সময় জানালার পর্দার ফাঁক থেকে উঁকি মারলো সে।
‘মোরোনা’, সে বললো।
‘আমি ভাস্কর্যটার জন্য ছবি তুলতে এসেছি’।
‘ছবি’? মনে হলো ভুলে গেছে সব।
‘ভাস্কর্যটার জন্য, মনে আছে? আমি তোমাকে একটা চিঠি লিখেছিলাম, আমাদের ফোনেও কথা হয়েছে’।
‘একটা মিনিট দাঁড়াও’।
আমি শুনতে পাচ্ছিলাম বাথরুমে ও বমি করছে।
‘তোমার শরীরটা যখন ভালো থাকবে তখন ফিরে আসব কি’? আমি চিৎকার করে বললাম।
‘না না, আমি সামলে নেব। কয়েক মিনিটেই ফিট হয়ে যাব আমি। এসো, ভেতরে চলে এসো’।
আমি ঢুকে দেখলাম কফি টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে নানান স্কেচ, বিয়ার   ক্যান, কাগজ, রঙ  আর তুঞ্জু করে রাখা জিনিসপত্র   সব জায়গায়। আমার হাতে একটা  কমলালেবু ছিল। সেটা নিয়ে লোফালুফি করতে লাগলাম নার্ভাস হয়ে। অবশেষে একটা পুরনো বাথ রোব গায়ে চাপিয়ে সে বেরিয়ে এলো।
‘এই তো মোরোনা। তোমাকে আমার মনে আছে’।
আমি হাত বাড়ালাম ওর দিকে।
‘আমি এখানে পিটারের সাথে এসেছিলাম। আমি একজন অভিনেত্রীও। আমার নাট্যকার দিদি তার নতুন নাটকে আমাকে একটা রোল দিয়েছে’।
‘ও আচ্ছা। তোমাকে একটা বিয়ার এনে দেবো’?
‘নিশ্চয়ই’, দুজনের জন্য দুটো বিয়ার আসে।
‘দাঁড়াও আমি প্যান্ট পরেনি। চলে যেও না যেন।‘
যখন সে ফিরে এলো আমি তার মুখের দিকে তাকালাম। মুখটা লাল মাল খেয়ে খেয়ে ফুলে গেছে। পেটটাও ফুলে আছে। এই প্রজেক্টটা করা কি ঠিক হচ্ছে আমার? আমি লজ্জা পেলাম। লোফালুফি করতে লাগলাম কমলালেবুটা।
‘তুমি কীভাবে আমাকে চাও’?
‘আমি বরং কয়েকদিন পরে আসি। ছবিতে তোমাকে সব থেকে খারাপ লাগুক, আমি চাই না’।
‘না না, তোলো। একই হবে যখনই ছবি তুলবে তুমি’। ঢক ঢক করে বিয়ার খায় বুকাওস্কি।
‘আমি ভাস্কর্যটা এখনই শুরু করে দিতে পারি’।
‘ওটা কি ক্রিসমাসের ছুটির পর শুরু করা সম্ভব যখন এই পাগলে যাওয়া সময়টা থাকবে না। যখন পৃথিবী ফিরে যাবে ফের তার সাধারণ হত্যার খেলায়?’
আমি আমার পোলারয়েড ক্যামেরাটা বার করি।
‘ওই সাদা দেওয়ালটার সামনে দাঁড়াও। আমার মনে হয় সেটাই সঠিক হবে’। আমি ছবি তুলতে শুরু করি।
‘প্রতিটা কোণ থেকে আমার ছবি চাই। তুমি আসার আগে আমি কাজটা শুরু করে দ্দিতে চাই। এই ভাস্কর্যটা আমি আমার বাড়িতে বানাব। তাতে কি তোমার কোনো অসুবিধে আছে’?
‘না, মাঝে মাঝে এই ইঁদুরের গর্ত থেকে বেরোতে আমার ভালোই লাগে’।
আমি বিয়ারটা শেষ করে একটা ছোট্ট ম্যাপ আঁকি। কীভাবে ও আমার বাড়ি যাবে তার হালহদিশ।
‘আমি ছুটির পর তোমাকে ফোন করবো। আমার দুটো বাচ্চা আছে। আমিও ব্যাস্ত থাকব ক্রিসমাসের কেনাকাটায়’।
‘তুমি কি আরেকটা বিয়ার খাবে’?
‘না, তবে তোমার বাথরুমে  একবার যাব’।
ছবিগুলো আজ যতটা ভালো হওয়া উচিৎ ততটাই হয়েছে। দিনের আলো ওকে দেখতে ভালো করে দেয়নি। সে রাতে আমি কবিতা লিখলাম।

নোংরা  

ওর বাথরুমটা একটা কোলাজ
মাসের পর মাস জমে থাকা পুরনো ব্লেড
আর ব্লেডের খোল পড়ে আছে শৈল্পিক ছত্রভঙ্গে
আঁটকে আছে ঝুলকালি আর নোংরায়
জমিয়ে বসে আছে নিরুপদ্রবে
বেসিনে, বাথটাবে আর টয়লেটে
একটা রবারের হাঁস এক কোণে
একটা পা ঘষার পাথর 
অদ্ভুত সব কবিতার বই আর পত্রিকা
আর একটা লাল এনেমা ব্যাগ ঝুলছে
বেঁকা শাওয়ার পাইপ থেকে

একটা এনেমা ব্যাগ? ওর নিশ্চয়ই কোস্টবদ্ধতা আছে
দাঁড়ি কামানোর যন্ত্র আর টুথব্রাশ ব্যবহার হয়
আর বাথটাব আর টয়লেট
যা বলে ওই পায় চলার দাগগুলো
যা আঁকা আছে নোংরা মেঝেতে

এ লোকটা সত্যি পারে 
এভাবে নোংরার প্রতি নিরাসক্তি
তো দারুণ ব্যাপার
একজন মেয়ে যদি তার ঘর
এভাবে রাখে তাকে লোকে শুয়োর বলবে
আর তার বাড়িটাকে শুয়োরের খোঁয়াড়

আর আমার বন্ধু হেলগা
‘উঃ লিন্ডা কী নোংরা গো
কীভাবে তুমি থাকো এখানে?
আমার জানা মেয়েদের ভেতর
তুমি সব থেকে বেশি অপরিষ্কার’।

‘এর জন্য সাহস দরকার হয় হেলগা,
তুমি এটা করতে পারবে না।
আমি আমার পা উঁচু করে তুলি
আমার পায়ের ভাঁজ তাতে আরো সুন্দর দেখায়’।

‘তোমার বর তোমাদের বিয়েটা
টেকাতে পারত’, সে বলে ‘যদি
একটা কাজের মেয়ে জোটাত সে
আর তোমাকে ছেড়ে দিত
লিখতে আর ভাস্কর্য গড়তে’।

‘না হেলগা, আমার চাই
একটা নোংরা লোক’।

বসে বসে ভাবি আমি
এইকি সেই নোংরা লোক?
ও নোংরা গল্প লেখে আর নোংরা বই লেখে
ওর মনটাও নোংরা আর বাড়িটাও নোংরা।
এতটাও সত্যি হতে পারে না
কোথাও একটা গণ্ডগোল আছে 
আমি টয়লেট ফ্ল্যাশ করি
আর বাইরে বেরিয়ে আসি।  

ওর হয়ত একটা মেয়ে চাই যে এই নোংরা পরিষ্কার করবে। 

No comments:

Post a Comment