Monday, September 10, 2018

কোলকাতা – মুম্বাই – ইস্তানবুল – স্টকহোম /প্রথম পর্ব

ইস্তানবুল হয়ে প্লেনটা ঢুকে পড়ল একটা ঘন মেঘের ভিতর। ছাই সবুজ এরকম মেঘ আগে কখন দেখিনি। কলকাতার বত্রিশ ডিগ্রি থেকে সোজা শূন্য তাপাঙ্কের স্টকহোমে নেমে পড়লাম। খানিকটা নার্ভাসনেশখানিকটা উত্তেজনাখানিকটা আকাঙ্ক্ষার চড়া পারদ ওঠা নামা করছিল শিরদাঁড়া বরাবর। ইয়োরোপে এই প্রথম, তাও একা একা। বই ভর্তি গন্ধমান ব্যাগটার কথা ভাবতেই ভয় করছিল। তাই ভাবা বন্ধ করে আশেপাশের সুন্দরী কন্যাদের দিকে মনোযোগের যোগব্যায়ামে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম।
আমেরিকান বন্ধু, কবি এরিক ভাটনে বলেছিল বটে যে, ইস্তানবুলটা ঘোরা দরকার। ওটা একটা ম্যাজিকাল শহর। ইয়োরোপের বুলন্দ দরওয়াজা। কিন্তু ইস্তানবুলের এয়ারপোর্ট ছাড়া ট্রানজিটের কয়েক ঘন্টায় আর কিছু দেখা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া ইস্তানবুলে তো কোন বন্ধুও নেই যে, তার হাত ধরে ওরহান পামুকের শহর দেখতে বেরিয়ে পড়ব। কলকাতায় অবশ্য আগেই দেখে ফেলেছিলাম ফতিহ  আঁকি-র (Fatih Akin)  ফিল্ম Auf der Anderen Seiti,  অন্য পাশটায়। ইউকে রিলিজের সময় যার নাম দেওয়া হয়েছিলস্বর্গের কিণারায়। অবশ্য আমার জার্মান নামটাই সঠিক লেগেছিল, পরের কাব্যিক নামটার থেকে এই তুর্কি-জার্মান পরিচালকের এই ফিল্ম ছিল জার্মান আর তুর্কির ভেতরকার চাপা উত্তেজনা নিয়ে।  প্রথম আর দ্বিতীয় প্রজন্মের তুর্কি-জার্মানদের ভেতরকার ফাঁক আর টানাপোড়েন নিয়ে। নিজের সঠিক পরিচয়ের খোঁজ আর পুরোনো দেশটার প্রতি টান নিয়ে, যখন ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ানে নাম লেখাচ্ছে তুর্কি।

ইস্তানবুলের রাস্তায় কতগুলো বাচ্চা ব্যাগ ছিনতাই করছে এবং তাদের তাড়া করে যাওয়া মেয়েটিকে শেষ অবধি বাচ্চাগুলো জাস্ট গুলি করে মেরে দিচ্ছে দেখে একটা চাপা অস্বস্তি আমার ভিতর ভিতর কাজ করছিল,থাকঅন্য আরেক সময় আসা যাবে ইস্তানবুলে। যদিও তুর্কি ক্লাসিক্যাল মিউজিক আমার গোটা প্লেন-পথের সঙ্গি ছিল। ইচ্ছেও হচ্ছিল ইস্তানবুলে ক্লাসিক্যাল মিউজিক শেখানোর সব থেকে নাম করা Uskudar Musiki Cemiyeti  দেখে আসার। দেখে আসা সেইসব লম্বা গলা তানবুরআউদকুডুম ড্রাম ইত্যাদি। বেটোভেনের ন নম্বর সিমফনিতেও তো এই তুর্কি ইন্সট্রুমেন্টের ব্যবহার আছে। এবং মোর্জাটও তাঁর অপেরায় তুর্কি থিম ব্যবহার করেছিলেন। সিমফোনি অর্কেস্ট্রায় আজ ব্যবহৃত মন্দিরা (করতাল)ঘন্টা তো এসেছে তুর্কিদের হাত ঘুরেই। সেই অটোমান সাম্রাজ্যের হারেম মিউজিক থেকে শুরু করে আজকের এই ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ানের হাত ধরা আধুনিক তুর্কিস্থান এবার আর দেখা হলো না আমার। শুধু ঝকঝকে ইস্তানবুল এয়ারপোর্টে ভারতীয় টাকা ভাঙ্গাতে গিয়ে দেখলাম সেটা ভাঙ্গানো গেলো না।  

১৭ই নভেম্বর ২০১০


জঙ্গলে সবুজ হয়ে থাকা সুইডেনের ঝকঝকে শহর স্টকহোমে আমার কবিতা পাঠ, কবিতার ওয়ার্কশপ ইত্যাদি। গত একবছর ধরে আমার কয়েকজন সুইডিশ কবি বন্ধু চাইছিলেন আমি ওদের ওখানে গিয়ে কবিতা পড়ি। কিন্তু আমার মতো একজন স্ট্রিট পোয়েটের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা শুধু খরচ সাপেক্ষই নয় প্রায় অসম্ভব ছিল। প্লেনের ভাড়াই তো প্রায় আধ লাখ টাকার মতো, তার উপর থাকা খাওয়া। ইয়োরোপের অন্যান্য শহরের তুলনায় স্টকহোম খুবই এক্সপেন্সিভ। অতএব আমার কবিতা নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে একথা তাদের জানাতেই তারাই নেমে পড়ল কীভাবে আমাকে স্টকহোমে নিয়ে যাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করতে। আমার আরো একটা আবদার ছিল। রিটার্ন টিকিটটা যেন এক মাস বাদের হয়। অর্থাৎ কিনা এযাত্রায় আরো কটা দেশ ঘুরে ফেলা। এবং শেষ অবধি লটবহর সমেত এই বঙ্গ সন্তান ১৭ই নভেম্বর ২০১০-এর সন্ধ্যায় স্টকহোমে। প্লেন থেকে নামতেই প্রাথমিক তীব্র ঠাণ্ডার ঝটকাও মন ভালো করে দিচ্ছিল, ভালোই লাগছিল এয়ারপোর্টের গেট পেরোতে পেরোতে। 
মিস্টার ব্লু ইজ ওয়েটিং ফর ইউ। মিস্টার ব্লু আমার জন্য অপেক্ষায়। এতদিনের ভারচুয়াল বন্ধুত্বের পর এই রিয়ালিটির কোলাকুলি স্বপ্নের মতো যেন। ২৬ কিলোর ব্যাগটার টলমল অবস্থানের হ্যাঁচকা, হাতের আঙুলে ক্সলশিটে ফেলে জানান দিলো গ্রাউন্ড রিয়ালিটির কথা।
এই মিস্টার ব্লু বা নীল মানুষের একটা আলাদা গল্প আছে। হেনরি দিনানদার একজন সুইডিস কবি। আমার অনেক দিনের বন্ধু। এথেন্সের কাছে হাইড্রা বা হুইড্রা (আমি জানতাম হাইড্রা কিন্তু পরে হেনরির মুখে শুনলাম স্থানীয় লোকজন ওই দ্বীপটাকে আদর করে ডাকে হুইড্রা) আইল্যান্ডে ওর একটা ছোট্ট বাড়ি আছে। সঙ্গে ছবি আঁকার স্টুডিও। এবং লাগোয়া একটা পুরোন বইয়ের দোকান। যেটা ও যখন ইচ্ছে হয় তখন খোলে। পুরো দ্বীপটাতেই কোনো গাড়ি চলে না। আছে জল-ট্যাক্সি যা দ্বীপের চারদিকে সমুদ্রে পাক দেয়। আর মাল বওয়ার জন্য সারিসারি গাধা। গাঢ় নীল সমুদ্র ঘেরা এই দ্বীপটাতে মাঝে মাঝে গিয়ে থাকে হেনরি। ছোট ছোট বাড়ি ঘেরা, পাথর দিয়ে বাঁধানো রাস্তারা চলে গেছে এদিক ওদিক। নেটে একটা ভিডিও ক্লিপ দেখে এই হুইড্রার প্রেমে পড়ে গেলাম আমি। সেই সময়ই দুটো বই হাতে এলো। একটা হেনরির। কামিনী প্রেস প্রকাশিত কবিতার মিনি বই ‘দা পোয়েট্রি অফ মিস্টার ব্লু’ আর অন্যটা সাউথ আফ্রিকান কবি গ্যারি কামিস্কি আর এভা কোয়ালস্কা সম্পাদিত ডাই হার্ড প্রেসের ‘হু ওয়াজ সিনক্লেয়ার বেলেস’। এই সিনক্লেয়ার বেলেস একজন সাউথ আফ্রিকান কবি। ১৯৬০-এ উইলিয়াম বারোজ, গ্রেগরি করসো, ব্রায়ান জিসিন-এর সাথে এক সাথে লিখেছিলেন সেই প্রবাদ প্রতিম কাট আপ উপন্যাস ‘মিনিটস টু গো’। বাকি আমেরিকান কবিদের মনে রাখলেও এই কবিকে কেউ মনে রাখেনি। কেন তিনি সাউথ আফ্রিকান বলে? আজ ২০১০এ এসে গ্যারিকে বই করতে হচ্ছে, ‘হু ওয়াজ সিনক্লেয়ার বেলেস’। প্যারিসে লোকজন তাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসেছে আবার। ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে দিতে পেরেছে গ্যারি।
১৯৫০ নাগাদ তার জন্মস্থান উগানডা থেকে প্যারিসে চলে আসেন সিনক্লেয়ার। অলিম্পিয়া প্রেসের সম্পাদক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। থাকতেন সে সময়ে বিট হোটেলে। যেখানে তখন বারোজ, জিসিন, করসোদের আনাগোনা। আড্ডা। বারোজের ‘নেকেড লাঞ্চ’ সম্পাদনার কাজও তিনি করেছিলেন।
তা এই বইটা থেকে হাইড্রা সম্বন্ধে আরো কিছু তথ্য আমাকে উসকে দেয়। পরে জানতে পারি আমার অন্যতম প্রিয় গায়ক লিওনার্ড কোহেনের একটা সময় কেটেছে হাইড্রায় আড্ডা মেরে। উপন্যাস লিখে। আর হেনরির প্রতিবেশী এখন কোহেন। হেনরির একটা কবিতা আছে এটা নিয়ে।




আমাদের মধ্যে একজনের তো ভুল হতে পারে না

আমি খুব স্বপ্ন দেখছি, প্রায় প্রত্যেক রাতে আর গত রাতে আমার সাথে দেখা হয়ে গেল লিওনার্ড কোহেনের অ্যান্টিবস স্কোয়ারে, একটা ছোটো ফ্রেঞ্চ শহর নিসের ঠিক বাইরে, উনি খুবই আমায়িক আর ওঁর মনে ছিল সেই বইটার কথা যেটা আমি ওনাকে পাঠিয়ে ছিলাম আর অবশ্যি একভাবে দেখতে গেলে আমরা তো প্রতিবেশী গ্রিসের ওই ছোট্ট দ্বীপটার আর উনি আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন ওঁর ফ্ল্যাটে যেখানে উনি থাকছিলেন, আর ঠিক দরজার বাইরে দেখি ওই উঁচু সিড়িগুলো পেরিয়ে, আমাদের দেখা হয়ে গেল আমার পুরোন বন্ধু একের সাথে, আমরা বিশ্বাস্ করতে পারছিলাম না, কী অদ্ভুত যোগাযোগ আর সেও লিওনার্ডের একজন বড় ফ্যান আর যখন ওকেও আমন্ত্রণ জানানো হলো ফ্ল্যাটে ও খুব অবাক হয়ে গেল আর কিছুক্ষণ পর একে জড়তা কাটিয়ে উঠল আর তখন লিওনার্ড আমাদের কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন তাকে থামিয়ে একে শুরু করল পুরোন চুটকি আর গল্প বলা, লিওনার্ড এতটাই অমায়িক আর মম্র স্বভাবের যে তিনি ওকে বলত দিলেন আর হাসতে লাগলেন কিন্তু শেষমেশ দেওয়াল থেকে নামিয়ে আনলেন তাঁর পুরোন গিটার, গিটারটাকে দেখে মনে হচ্ছিল সংস ফ্রম এ রুম-এর কাভারের ছবির মতো, ওটা ঝোলানো ছিল তাঁর হাইড্রা বাড়ির দেওয়ালে যেখানে জানালার ধারে বসে থাকে মারিয়্যান আর অ্যান্টিবস-এর বাড়িটাও দেখতে একই রকম, সব সাদা আর লিওনার্ড তাঁর গিটারের তারে আঙুল চালাতে শুরু করলেন এমনকি একেও চুপ করে গেল আর হঠাৎ লিওনার্ড গাইতে শুরু করলেন আর আমি ভাবলাম কী অসম্ভব একটা মুহুর্ত আর আমি কীভাবে লিওনার্ডের কাছে বসে আছি আর উনি গাইছেন 'দা স্ট্রেঞ্জার সং' তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে আর তারপর হঠাৎ একে গলা মেলাতে লাগল তেড়ে একটা মাতালের মতো আর সেখান থেকে আমার স্বপ্নটা এগিয়ে চলল আর কীভাবে যে সেটা শেষ হলো আমি মনে করতে পারছি না, যদি সত্যি তা শেষ হয়ে থাকে, হয়ত ওরা এখনো গেয়ে চলেছে সেই ঘরটায় যেটা প্লাস অ্যান্টিবস-এর সামনে।         

হেনরি মিলারের গ্রিস নিয়ে লেখা বইটাও আরেকবার উলটে পালটে দেখি, দা কলোসাস অফ মারুসি। এই সময়ে আমার চারদিকে কতগলো অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। সেই ঘটনাগুলোকেই জাস্ট শব্দের ভেতরে আঁটকে রাখি আমি – ‘অজয়ের পাড় ধরে জয়দেব কোথায় যে হেঁটে চলে গেল’ কবিতাটায়। যার একটা ইংরেজি ভারসানও করেছিলাম মূলত হেনরির প্রোরোচনায়।

অজয়ের পাড় ধরে জয়দেব কোথায় যে হেঁটে চলে গেল

জয়দেবের মিষ্টি দোকানটা আর নেই। মুদিয়ালী বাড়ির জিন রমণীর সাথে সে যে কেন গেল হাইড্রায় মিষ্টি বেচতে!!! কেন যে যায় সবাই কোথায় যে যায়। আসলে থাকার মধ্যেও একটা যাওয়া কাজ করে।
সমুদ্র নীল আছড়ানো একটা ফুলের নাম হাইড্রা। হারকিউলিস যে নমুখো জলের জানোয়ারটাকে মেরেছিলো, মেরেই তো ফেলেছিলো প্রায়। শুধু অমর একটা মাথা কেটে কোথায় যে পুঁতে রেখেছিলো। কোথায় যে? স্মৃতির ঝাপসারা শব্দেরা ফুটে আছে মদ গলানো এই সাইক্লোপিয়ান পাথর আর ঘাসের জড়াজড়ি হাওয়ায়।

  মেয়েটা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে চুমু আর চুমু। জড়ানো অস্তিত্বরা ধীরে ধীরে পিট পিট করে আরাম পেতে থাকে। আঙুলের নিশপিশ আর সর্বনাশ আমি ভুলে যেতে থাকি। কে আর জানতো এটা স্রেফ নমস্কার শুধু। এরকমই হয় পাশের বাগানে সূর্য উঠলে ওই লেবু গাছটা বরাবর। না না ওটা অলিভ নয় আমি জানি। মদ আর টকচানো অলিভে জিভ জড়িয়ে মড়িয়ে পরিত্রাহি কতবার।

পোকা মারার মরণ সঙ্গীত গেয়ে ওই রমণীদঙ্গল ওষুধ ছড়ায় না এইখানে। এখানের মরণের গান শুধু একটা পাহাড় থেকে ছুটে আরেকটা পাহাড়ের মাথায় এক দমে উঠে যাওয়া শুধু আর আছড়ানো জঙ্গী চুলের ঢেউয়ে বারবার শরীরের পোকাগুলোর চোরাচালান। নীল-সাদার এই দেশে তাই মিস্টার ব্লু হয়ে পড়া সোজা। তাতো হেনরি দিনানদার জেনেছিলো। কীভাবে মাথার ভিতর থেকে কবিতার শব্দগুলো হঠাৎ চলে গিয়ে রঙ হয়ে ধরা দিতে পারে অন্য কোথাও। তা মিস্টার ব্লুও জানতো না। অথচ সব খোঁজ সে মেয়েটার ছিল। আর জেনেছিলো হেনরি মিলার। সেই চুপ। A pause in the musical score of creation by an expert calligrapher.

আমার অ্যাকোরিয়ামের মিষ্টি মাছটা যে আমাকে খুব ভালোবাসত আজ দেখি হঠাৎ সে নেই। কেন যে যায় সবাই কোথায় যে যায়। আসলে যাওয়ার মধ্যেও একটা থাকা কাজ করে। আসলে পাথরগুলোই সব পাগল, ওই সব ম্যাজিকাল আলোতে থেকে থেকে পাথরত্ব খুইয়ে ফেলেছে অজান্তেই। হৃদয়ের বদলে তাই এক আলো খেলা করে। সে নেই অথচ সে চুল খুলে চেয়ারে বসে থাকে রোজ। মাথা নিচু করে এক মনে ভাবে। আমি তার দিকে তাকাই না পাছে ফের বিরক্ত হয়ে চলে যায়। মিষ্টি মাছটার সাথে ভেসে ভেসে। অথচ সেও তো চুমু চেয়েছিলো একদিন। কাঁঠাল চাঁপারও পেকে উঠে ফুটে উঠতে বেশ খানিকটা তীব্র রোদের প্রয়োজন হয়। এই সব গাছেরাও জানে, জানে সেই মৃত্যুর পাগলামো। ঘেন্নার ছেলেমানুষি ছেলেখেলা। তাকে কী করে ডাকি এই অন্ধকারে সে কি আর পথ খুঁজে পাবে? যেন পথ খুঁজে পেলে বেঁচে যাবে এই অন্ধকার ভালোথাকাগুলো।

মদ বেচতো যে লোকগুলো তারাতো জানতো শব্দ পাগলদের তীব্র তৃষ্ণা শিকড়ের চোঁচোঁ আর্তির মায়া তারা কীভাবে কাটাবে। সবাই তো তাই ভাবে সব কিছু জানে আসলে কিছুই জানা যায় না কোনোদিন। কারণ কিছুই জানার কোনো দরকার নেই। কিছুই চেনার কোনো দরকার নেই। ট্যাবলেট খেতে খেতে ট্যাবলেট না খাওয়ার মন্ত্রণা তাকেও দিতে হতে পারে একদিন। ভালোবাসতে গেলে  না ভালোবাসাটাও আগে শিখে নিতে হয়। শব্দতার রক্ষাকবচ হবে বলে সর্বনাশ রোজ আসে কবচ ভিক্ষা করে নিতে। নিয়ে যায় নিয়ে যেতে থাকে সমস্ত না পারাগুলো, বাস্তবতা, প্রতিজ্ঞার শব।

আকাশের অনেক লাল আর চোখ ভরতি নীল নিয়ে একটা আস্ত সন্ধ্যা নামছে ফ্ল্যাটের উপর। ফ্ল্যাটটা কি ঢাকা পড়ে যাবে সন্ধ্যায়!! আর যে রমণী আমার জন্য বৃষ্টি নাচ নাচছে তার শুকনো বাগানে হাজার সমুদ্র পেরিয়ে তাকে বোলো এখানে বৃষ্টি পড়ছে খুব। শান্তিতে ঘুমোচ্ছে ক্লান্ত কুকুর দুটো, উকুনের কুটকুটগুলো আর আমার সারা শরীর বেয়ে খেলে বেড়াচ্ছে মিষ্টি মাছেদের অমরত্ব আর সেইসব আলোর পাগলামি। 

  


No comments:

Post a Comment