Friday, April 22, 2016

অসম্পাদিত চার্লস বুকাওস্কি

আমেরিকান কবি বুকাওস্কির কবিতা আমি আগেও অনুবাদ করেছি। প্রথম কুড়িটা কবিতা নিয়ে গ্রাফিত্তি থেকে একটা ছোটো বই বেরিয়েছিল। তার সাথে পরে আরো তিরিশটা কবিতা জুড়ে ভাষালিপি থেকে বেরোয় ‘চার্লস বুকাওস্কির কবিতা’। এই কবিতাগুলো নতুন। দৈবাৎ আমার  হাতে আসে একটা বই। ‘বুকাওস্কি ব্যাক টু দা মেশিনগান’। বইটা বার করেছেন পৃথিবীর কয়েকজন বুকাওস্কি ভক্ত মিলে। একটি আন্ডারগ্রাউন্ড প্রকাশনাই বলব। কারণ প্রকাশকের নামধাম ঠিকানা ওতে কিছুই নেই। ওরা কেন এটা করলেন? কারণ তারা দেখছিলেন ১৯৯৪এ বুকাওস্কির মৃত্যুর পর বড় বড় প্রকাশকরা বুকাওস্কির লেখা কাটা ছেঁড়া করে নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে তা সম্পাদনা করে প্রকাশ করছেন। ম্যানুস্ক্রিপ্টের সাথে মেলালে যা অনেকটাই আলাদা। বুকাওস্কির লেখার ধার কমিয়ে করা হয়েছে মোলায়েম। তাই তারা সরাসরি ম্যানুস্ক্রিপ্টের সাথে মিলিয়ে তার রচনা প্রকাশে সচেষ্ট হয়েছেন। যদিও এর জন্য তাদের কারাবাস পর্যন্ত ঘটতে পারে। ওই বইয়ের প্রথম খণ্ড থেকে এই অনুবাদ গুলো। আসলে আমার কিছু করার ছিলনা ওই প্রতিবাদে গলা মেলানো ছাড়া।   









আবার আঁটকে গেছি কোনো অসম্ভব অবস্থায়



আর ওই বড়কা পাওয়ালা লোকটা, পাঁঠা, নড়ছিল না
আমি তখন দু সারি আসনের মাঝের পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম, সে রাতে
গোলাবাড়ির নাচে এলমার হোয়াইটফিল্ড একটা দাঁত খুইয়েছিল
শক্তিশালী এডি গ্রিনের সাথে লড়াইয়ে,
ওর রেডিওটা কেড়ে নেব আমরা, ওর ঘড়িটাও, বলছিল ওরা
আমার দিকে আঙুল তুলে, শালা ইয়াঙ্কি, কিন্তু ওরা জানত না
আমি এক উন্মাদ কবি আর আমি ওখানেই কাৎ হয়ে ওয়াইন খাচ্ছিলাম
আর ওদের মেয়েমানুষদের আদর করছিলাম
আমার চোখ দিয়ে, আর ওরা ভয় পাচ্ছিল, কুঁকড়ে যাচ্ছিল
যে কোনো ছোটো শহরের গবাদি পশুর মত
ভাবছিল কীভাবে আমাকে খুন করবে
কিন্তু প্রথমে
বোকার মত
খুঁজছিল একটা কারণ, আমি ওদের বলতে পারতাম
এই কিছুদিন আগেই
আমি একজনকে প্রায় মেরে ফেলেছিলাম কারণের অভাবে
তার বদলে আমি ৮.১৫-র বাস ধরলাম
মেম্ফিস যাওয়ার।





স্বীকৃতি পাওয়ার অভিশাপ



স্বীকৃতি পাওয়ার অভিশাপ
যেখানে এমনকি
জিনিয়াসরাও
ব্যর্থ হয়
আর প্রতিভা সব সময়
বেশ্যাবৃত্তি করে,

সাবধান হে ছোকরার দল
ওখানে পৌঁছতে পারাটাও
সোজা ছিলনা একেবারেই,
আর ওখান থেকে ফিরে আসাও চলে না,
মনে রেখ ঠাণ্ডা ঘরগুলোতে
তুমি কী রচনা করেছিলে,
আর জেনো
ভগবান সদয় ছিলেন,
আর এই মুহূর্তে
যারা বেঁচে আছে সেই জনগণ
কিছুই ঠিক করেন না
নিজেরা
অন্তত তুমি তো
আদৌ না।






মারিপোসা অ্যাভিনিউয়ের পাশে ঘাসের ভেতর একটা মৌমাছির মৃত্যু



মৌমাছি নিচে পড়ে গেছে, মৌমাছি নরকপ্রাপ্ত, ভাগ্যহত,
ঘড়ির চোখের ইশারা আমাদের সবাইকে নিয়েছে
৩০৯-এর মাতাল পেইন্টার ভগবানের থেকে
কোনো অংশে খারাপ নয়
সেও শেষমেশ মাথা ঘুরে পড়ে থাকবে
তার সমস্ত নাড়িহীন সৃষ্টির ভেতর
আর তাই রৌদ্র মাতালেরা চলে যাবে পুব দিকের পথে
আর চিরকেলে ৫ম রাস্তারা
যেন মোৎজা্টের পিয়ানো কনচেরটো
যা কিছু পড়ে আছে তার উপর যেন লাফিয়ে পড়েছে বাঘেদের মত,
মৌমাছি নিচে পড়ে গেছে, মৌমাছি নরকপ্রাপ্ত হোক আর ভাগ্যহত
যেভাবে আমরা
যা এক ফোঁটা বাকিটাকি পড়ে আছে,
আর ঘাস আর ফুলের কুঁড়ি
আর পাড়ার মেয়েটা হেঁটে চলেছে।






জেন কুনি বেকারের জন্য, মৃত্যু ২২-১-৬২



আর তুমি চলে গেলে
আমাকে এখানে ফেলে
সেই ঘরে যেখানে জানালার পর্দাটা ছেঁড়া
আর একটা ছোটো লাল রেডিওতে বাজচ্ছে সিগফ্রাইডের আইডল।

আর তাই তুমি চলে গেলে দ্রুত
যেভাবে এসেছিলে আমার কাছে,
আর আমরা আগেও বিদায় জানিয়েছি।
আর আমি যখন তোমার মুখ আর ঠোঁট মুছছি
তুমি তোমার চোখ এত বড় করে খুললে
যা আমি আগে কখনো দেখিনি আর বললে
‘আমি হয়ত জানতাম
এটা তুমিই হবে’ ... তুমি দেখেছিলে আমায়
কিন্তু বেশিক্ষণ নয়
আর একজন সরু সাদা পায়ের বুড়ো ভদ্রলোক
বলল, ‘আমি মরতে চাইনা’,
আর তোমার রক্ত উঠল আবার
আমি অঞ্জলি ভরে ধরেছিলাম তা
যা বাকি ছিল
সব রাতের আর দিনের
আর বুড়োটা বেঁচে ছিলো তখনো
কিন্তু আমরা নই
আমরা নই।

আর তুমি চলে গেলে যেভাবে এসেছিলে,
তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে দ্রুত,
তুমি আগেও আমাকে ছেড়ে গেছ বহুবার
তখন ভাবতাম তা আমার মৃত্যু আনবে
কিন্তু আনেনি
আর তুমি ফিরে এসেছ।

এখন আমি লাল রেডিওটা বন্ধ করে দিয়েছি
আর কেউ একটা পাশের ফ্ল্যাটে ধাম করে দরজা বন্ধ করল।
এটাই শেষ অভিযোগ, রাস্তায় আর তোমায় পবো না আমি
অথবা ফোনটাও বাজবে না তবু প্রতিটা মুহূর্ত
আমাকে টিকতে দেবে না।

এটুকুই যথেষ্ট নয় যে অনেক মৃত্যু আছে
আর এই প্রথম তাও নয়
এটুকুই যথেষ্ট নয় যে আমি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকব
হয়ত আরো কিছু বছর।

এটুকুই যথেষ্ট নয়
যে ফোনটা মৃত একটা পশুর মত যা
কথা বলবে না, সে তো কথা বলেছে
কিন্তু এখন সারাটা সময় ভুলভাল গলায়।

আমি অপেক্ষা করেছি আগেও আর তুমি চলে গেছ
দরজার ভেতর দিয়ে, এখন আমার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।  






4 comments: