পয়সা বাঁচাতে
তামিলনাডুতে থাকাকালীন আমরা হস্টেল ছেড়ে বহু ভাড়া বাড়িতে বাড়িতে দিন কাটিয়েছি যার
অধিকাংশ ছিল শহর থেকে অনেক দূর সব অন্ধকার শহরতলিতে। আধা গ্রাম আধা
শহরের সেই দিনগুলোতে লাউড স্পিকারে এই দেবী মারিআম্মার গান শোনা। ভোররাতের এইসব
গান ঘুম ভাঙিয়েছে কতদিন। একটা গানে বার বার ঘুরে ঘুরে আসছে মারিআম্মা শব্দটা। ভাষা
না বুঝলেও এটা যে মারিআম্মার গান সেটা আর নতুন করে বলে দেওয়ার নয়।
এখনও ওই সুর আর
শব্দ মাথায় গেঁথে আছে। যেভাবে আছে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে যে শ্যামলা মেয়েটি
রুদ্রবীণা বাজানো শিখত তার সেই অদ্ভুত গম্ভীর সুরের বিকেলগুলো। আমাদের এখানকার
মধ্যবিত্ত পাড়ার বিকেলের হারমোনিয়ামের মতই হয়ত। যাদের সাথে
প্রেমে পড়তে কোনো বাধা নেই। রুল টানা খাতার পাতা ছিঁড়ে তখনও প্রেম পত্র লেখা চলত।
আমি একবার এরকম একটা প্রেম পত্র পেয়ে চমকে গেছিলাম। যা আমাকে লেখা নয়। পাড়ার কোনো
ছোঁড়া আমাদের তরুণী কাজের মেয়েটাকে লিখে থাকবে। অজস্র বানান ভুলের সেই প্রেম পত্রে
একবার চোখ বুলিয়ে ফের একই যায়গায় খানিক লজ্জা পেয়ে রেখে দিয়েছিলাম। কাউকে কিছু
বলিনি পাছে এই নিয়ে বাড়িতে একটা তদন্ত কমিটি বসিয়ে ফেলে লোকজন, শুধু ভেবেছি প্রেম
পত্র কত রকমের হয়!
নিম পাতাকে
শাড়ির মত জড়িয়ে মেয়েরা চলেছে মন্দিরে মারিআম্মার পুজো দিতে। হাতে করে নিম পাতার
উপর কাঠের আগুন যাকে নাকি আগুন বলা যাবে না, বলতে হবে ফুল। সেটাই অর্ঘ্য। আর তখন
মন্দির থেকে ভেসে আসছে পাখোয়াজের দ্রুত তালের গুরু গুরু। যারা এটা বাজায় তাদের
হাতের সব আঙুলে বহুকাল আগে দেখেছি লোহার আংটির মত মোটা কিছু পরা। শক্ত শরীর ঘামে
ভেজা টান টান। আর ভক্তেরা সমানে সমস্বরে রোল তুলছেন শক্তি শক্তি।
No comments:
Post a Comment